আবার মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল?
নয়াদিল্লির একটি কেন্দ্রে গতকাল ভোট দেওয়ার জন্য দিল্লিবাসীর দীর্ঘ সারি। এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ভোট পড়েছে যা গতবারের চেয়ে এক শতাংশ বেশি। রয়টার্স |
ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভারতের আলোচিত দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়েছে গতকাল শনিবার। দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ‘আমজনতার নেতা’ অরবিন্দ কেজরিওয়াল এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রত্যাশা করছেন। কেন্দ্রফেরত ভোটারদের ওপর চালানো চারটি জরিপের ফল সমন্বয়ের মাধ্যমে এনডিটিভি গতকাল সন্ধ্যায় জানায়, কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (এএপি) ৩৮টি আসন পাবে, যা সরকার গঠন করার জন্য যথেষ্ট। আর বিজেপি এবং আকালি দলের জোট পাবে ২৯টি আসন। মাত্র তিনটি আসন নিয়ে অনেক দূরবর্তী তৃতীয় স্থান পাচ্ছে কংগ্রেস। খবর এনডিটিভি, এএফপি ও বিবিসির। সর্বশেষ জনমত জরিপেও এএপির সাফল্যের ইঙ্গিত ছিল। এ নির্বাচনকে প্রায় এক বছর আগে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ৬৭ শতাংশ ভোট পড়ে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ হার দিল্লি বিধানসভার জন্য একটি রেকর্ড। গতবারের চেয়ে তা ১ শতাংশ বেশি। বিধানসভার ৭০টি আসনের জন্য লড়াই করেন ৬৭৬ জন প্রার্থী। প্রধান দুই দল বিজেপি এবং আম আদমি পার্টির (এএপি) মধ্যে জোর লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। ভোটার সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি। নির্বাচন উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তত ৫৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ফলাফল জানা যাবে আগামী মঙ্গলবার।
সাবেক ডাকসাইটে পুলিশ কর্মকর্তা কিরণ বেদীকে মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে কিরণ হেরে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় নির্বাচনে মোদির দল বিজেপি নিরঙ্কুশ জয় পেলেও সম্প্রতি তাঁর জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়েছে বলে ধারণা করা হয়। কেজরিওয়ালের এএপি গত বছর দিল্লিতে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী একটি বিল আটকে যাওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৪৯ দিন পরই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। তার পর থেকে দিল্লি সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে শাসিত হচ্ছে। প্রচারণায় এএপি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের অভাব এবং দুর্নীতির মতো বিষয়গুলোকে সামনে তুলে ধরে মূলত শ্রমিকশ্রেণির ভোটারদের আকৃষ্ট করেছে। আর বিজেপি প্রধানত প্রধানমন্ত্রী মোদির সহজাত নেতৃত্বের গুণাবলি, বিজয়ী ভাবমূর্তি এবং অর্থনৈতিক সংস্কার ও বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিকে কাজে লাগিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টা করে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিজেপি অন্যান্য রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্য পেলেও দিল্লিতে জয়ী হওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছিলেন। সাম্প্রতিক ছয়টি জনমত জরিপের ফলাফল একত্র করে এনডিটিভি কয়েক দিন আগে জানায়, এএপি ৩৬টি আসন পেতে পারে। ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় সরকার গঠনের জন্য ঠিক এই সংখ্যাটিই দরকার। তখন বলা হয়েছিল বিজেপি ও তাদের সহযোগী আকালি দল পেতে পারে ৩০টি আসন। আর কংগ্রেস পাবে মাত্র চারটি। অথচ দিল্লিতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল দল কংগ্রেস। দিল্লিতে কেজরিওয়ালের এএপি জয়ী হলে মোদির সঙ্গে ভোটারদের ইতিমধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব আরও বড় হয়ে প্রকাশ পাবে। পাশাপাশি রাজধানীতে সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ চালু করার মতো বড় সংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ এএপি সরকারের বাধার মুখে পড়তে পারে।
No comments