দেশ পোড়ানো বন্ধ করুন by শামসুল আরেফিন খান
যুক্তরাষ্ট্র
প্রবাসী এক সাংবাদিক বন্ধু ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন দেশের চলমান সংকট
সম্পর্কে। দেশজুড়ে এ সময় যে দক্ষযজ্ঞ চলছে তাকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক
আন্দোলন, এমনকি রাজনৈতিক আন্দোলনও বলা যায় না। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে বোমা
এবং মলোটভ ককটেলের কোনো স্থান নেই। বোমার সঙ্গে, সন্ত্রাসের সঙ্গে,
জঙ্গিবাদের সঙ্গে গণতন্ত্রের বাসর হতে পারে না। মহাত্মা গান্ধী ১৯২২ সালের ৫
মে পুলিশের গুলিতে তিন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর প্রতিবাদে 'চাউরি চাউরায়'
থানা পুড়িয়ে ২১ পুলিশ মারার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে ভারত কাঁপানো অহিংস অসহযোগ
কর্মসূচির অবসান ঘটিয়েছিলেন। তার আশঙ্কা হয়েছিল সংঘাত বাড়বে এবং নিরীহ
সাধারণ মানুষ প্রাণ দেবে। আমরা বাঙালিরা '৪৮ সালে স্বাধিকার চেতনা হৃদয়ে
লালন করে রাজপথে ভাষার লড়াই শুরু করি। তখনই স্বাধীনতার স্বপ্ন ঘিরে বাঙালির
মনের দিগন্তে একটি ক্ষুদ্র রূপালি বিন্দুর উন্মেষ ঘটে। তারই সম্প্রসারিত
বৃত্তের নাম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ২৩ বছরের গণতান্ত্রিক
আন্দোলন-সংগ্রামে বাঙালি কত জেলজুলুম সয়েছে, লাঠি-টিয়ার গ্যাস-গুলি বুক
পেতে নিয়েছে। কিন্তু একটি বোমাও মারেনি, পেট্রোল দিয়ে কাউকে অঙ্গার করেনি।
আমি চলমান সব অঘটন, অগি্নসন্ত্রাস, সহিংসতা ও জঙ্গি তৎপরতাকে মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করতে চাই। আমার বিবেচনাতেও
'আদর্শিক কাননে বিএনপি-জামায়াত একই বৃন্তের দুটি যমজ ফুল।'
রাজনৈতিক শিষ্টাচার কাকে বলে সেটা শেখ হাসিনা শিখেছেন তার মহান পিতার কাছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের রাবণদের যদি ক্ষমার চাদরে মুড়ে না দিতেন তা হলে তাদের পাকিস্তানে হিজরত করতে হতো স্থায়ীভাবে। জনতার আদালতে শূলে চড়ছে কে? বাংলাদেশের চলমান সংকট ও বিরোধের গোড়ায় কঠিন বরফ হয়ে জমে আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রতিবন্ধী গণতন্ত্রের জন্য হুইল চেয়ার। গণতন্ত্রের পীঠস্থান যুক্তরাজ্য, বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত, পুঁজিবাদের তীর্থভূমি যুক্তরাষ্ট্র বা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোথাও নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য এমন ক্র্যাচ সহায়তা কখনও প্রয়োজন হয়নি। আমাদের দেশে মাগুরার শালিখা উপনির্বাচন আর ঢাকা-১০-এর ন্যক্কারজনক ভোট কারচুপি দেখে চিরপরিচিত ভোট ব্যবস্থার ওপর মানুষের ভরসা শেষ হয়ে গেল। গণধিক্কৃত জামায়াত 'কেয়ারটেকার' সরকার ফর্মুলা হাজির করল। সর্বদলীয় সমর্থনে সেটাই হয়ে দাঁড়াল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। শর্ত থাকল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যারা যুক্ত হবেন তাদের সবাইকে সম্পূর্ণ দলনিরপেক্ষ হতে হবে। কিন্তু সংশয় দেখা দিল গোড়াতেই। প্রখ্যাত সাহিত্যিক এজরা পাউন্ডের মতে, 'সত্যিকার প্রতিভাবান সৃজনী ব্যক্তিত্ব কখনও নির্বিকার রাজনৈতিক চেতনাবিবর্জিত হতে পারেন না। হয় তিনি প্রতিক্রিয়াশীল অথবা প্রগতিশীল কিন্তু কখনোই নির্বিকার নন।' 'দৃষ্টিপাত' গ্রন্থে লেখক বিনয় মুখোপাধ্যায় (যাযাবর) বলেছেন, 'মানুষ কোনোদিনই সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হতে পারে না। সে নিরপেক্ষতার ভান করে মাত্র।' তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চটুল উক্তি_ 'পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়' নিরক্ষর মানুষেরও বোধগম্য ছিল। তবে প্রবল গণচাপের মুখে তিনি নতি স্বীকার করলেন। কিন্তু সে ব্যবস্থার ওপর থেকে মানুষের ভরসা চলে গেল তিন বিচারপতির পর অধ্যাপক ইয়াজুদ্দীন সরকারে এসে। বিশ্বাসের বুকে ছুরি বসাল বিএনপি নিজেই। এবারেও কাণ্ডারি খালেদা জিয়া। তারপরের ইতিহাস আমরা সবাই জানি।
'কোনো ব্যক্তি বা সিদ্ধান্ত নিজেকে অভ্রান্ত বলে দাবি করতে পারে না। সংসারে কোনো সিদ্ধান্তই চরম সত্য নয়। প্রতিটি রীতিনীতি ও ব্যবস্থাই পরিবর্তনসাপেক্ষ।' জন স্টুয়ার্ড মিল এ কথা বলেছেন। 'যেহেতু আমাদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা সীমাবদ্ধ, সে কারণে আমাদের প্রত্যেকেরই সিদ্ধান্তে যেটুকু সত্য থাকে তাও অসম্পূর্ণ।' এই গুরুবাক্যের আলোকে আমার ধারণা যে আওয়ামী লীগ সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে। কারণ গণতন্ত্র স্থিতিশীল হতে পারে এবং রাষ্ট্র অগ্রগতির পথে দ্রুত অগ্রসর হতে পারে কেবল প্রজ্ঞাপ্রসূত জাতীয় সংবিধানের ভিত্তিতেই। শেখ হাসিনা সেই সংবিধানকেই আঁকড়ে ধরেছেন। ২০০৮-এর গণবিপ্লবের পর ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সাংবিধানিক বিপ্লব ঘটিয়েছেন। পক্ষান্তরে বিএনপির নেতৃত্ব অজ্ঞতা, অন্ধ সংস্কার ও মনের জড়তাকে আলিঙ্গনে রেখে দলের ভবিষ্যৎ এবং জাতির ভবিষ্যৎকে একই সঙ্গে পুড়িয়ে ছাই করেছে।
জ্ঞানী লোকেরা বলেছেন, কোনো কোনো মৃত্যু পাখির পালকের মতো হালকা। কোনো কোনো মৃত্যু পাহাড়ের মতো ভারী। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী। মায়ের বুকে সন্তানের মৃত্যু পাহাড়ের চাইতেও ভারী। লাগাতার অবরোধের আগুনে পুড়ে বাংলাদেশ মৃত্যুপুরী হয়েছে। কত নারী-শিশু প্রাণ হারিয়েছে। কত মায়ের বুক খালি হয়েছে, কত সংসারের স্বপ্ন ছাই হয়েছে! কৃষকের স্বপ্ন ভেঙেছে। শ্রমিকের কপাল পুড়েছে। শিশু মাতৃহারা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বুকেও পাহাড় ভেঙে পড়েছে। শেখ হাসিনা ব্যথিত হয়েছেন। দেশবাসী ব্যথিত হয়েছে। এটাই মানবতা। সেই মানবতাই আশা করছে যে খালেদা নিজের হৃদয় বেদনায় মিলিয়ে সন্তানহারা সব মায়ের বুকের যন্ত্রণা অনুভব করবেন। আগুন থামবে। জনগণ শান্তি ফিরে পাবে। দেশবাসী আশা করছে সন্ত্রাস বন্ধ হবে। জঙ্গিবাদ খতম হবে। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশ বাঁচবে। আমারও সেটাই ঐকান্তিক কামনা এবং এ প্রত্যাশায় কাতর অনুনয় :আল্লাহর ওয়াস্তে দেশ পোড়ানো বন্ধ করুন!
প্রবাসী, ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা, কলাম লেখক
রাজনৈতিক শিষ্টাচার কাকে বলে সেটা শেখ হাসিনা শিখেছেন তার মহান পিতার কাছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের রাবণদের যদি ক্ষমার চাদরে মুড়ে না দিতেন তা হলে তাদের পাকিস্তানে হিজরত করতে হতো স্থায়ীভাবে। জনতার আদালতে শূলে চড়ছে কে? বাংলাদেশের চলমান সংকট ও বিরোধের গোড়ায় কঠিন বরফ হয়ে জমে আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রতিবন্ধী গণতন্ত্রের জন্য হুইল চেয়ার। গণতন্ত্রের পীঠস্থান যুক্তরাজ্য, বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত, পুঁজিবাদের তীর্থভূমি যুক্তরাষ্ট্র বা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোথাও নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য এমন ক্র্যাচ সহায়তা কখনও প্রয়োজন হয়নি। আমাদের দেশে মাগুরার শালিখা উপনির্বাচন আর ঢাকা-১০-এর ন্যক্কারজনক ভোট কারচুপি দেখে চিরপরিচিত ভোট ব্যবস্থার ওপর মানুষের ভরসা শেষ হয়ে গেল। গণধিক্কৃত জামায়াত 'কেয়ারটেকার' সরকার ফর্মুলা হাজির করল। সর্বদলীয় সমর্থনে সেটাই হয়ে দাঁড়াল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। শর্ত থাকল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যারা যুক্ত হবেন তাদের সবাইকে সম্পূর্ণ দলনিরপেক্ষ হতে হবে। কিন্তু সংশয় দেখা দিল গোড়াতেই। প্রখ্যাত সাহিত্যিক এজরা পাউন্ডের মতে, 'সত্যিকার প্রতিভাবান সৃজনী ব্যক্তিত্ব কখনও নির্বিকার রাজনৈতিক চেতনাবিবর্জিত হতে পারেন না। হয় তিনি প্রতিক্রিয়াশীল অথবা প্রগতিশীল কিন্তু কখনোই নির্বিকার নন।' 'দৃষ্টিপাত' গ্রন্থে লেখক বিনয় মুখোপাধ্যায় (যাযাবর) বলেছেন, 'মানুষ কোনোদিনই সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হতে পারে না। সে নিরপেক্ষতার ভান করে মাত্র।' তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চটুল উক্তি_ 'পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়' নিরক্ষর মানুষেরও বোধগম্য ছিল। তবে প্রবল গণচাপের মুখে তিনি নতি স্বীকার করলেন। কিন্তু সে ব্যবস্থার ওপর থেকে মানুষের ভরসা চলে গেল তিন বিচারপতির পর অধ্যাপক ইয়াজুদ্দীন সরকারে এসে। বিশ্বাসের বুকে ছুরি বসাল বিএনপি নিজেই। এবারেও কাণ্ডারি খালেদা জিয়া। তারপরের ইতিহাস আমরা সবাই জানি।
'কোনো ব্যক্তি বা সিদ্ধান্ত নিজেকে অভ্রান্ত বলে দাবি করতে পারে না। সংসারে কোনো সিদ্ধান্তই চরম সত্য নয়। প্রতিটি রীতিনীতি ও ব্যবস্থাই পরিবর্তনসাপেক্ষ।' জন স্টুয়ার্ড মিল এ কথা বলেছেন। 'যেহেতু আমাদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা সীমাবদ্ধ, সে কারণে আমাদের প্রত্যেকেরই সিদ্ধান্তে যেটুকু সত্য থাকে তাও অসম্পূর্ণ।' এই গুরুবাক্যের আলোকে আমার ধারণা যে আওয়ামী লীগ সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে। কারণ গণতন্ত্র স্থিতিশীল হতে পারে এবং রাষ্ট্র অগ্রগতির পথে দ্রুত অগ্রসর হতে পারে কেবল প্রজ্ঞাপ্রসূত জাতীয় সংবিধানের ভিত্তিতেই। শেখ হাসিনা সেই সংবিধানকেই আঁকড়ে ধরেছেন। ২০০৮-এর গণবিপ্লবের পর ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সাংবিধানিক বিপ্লব ঘটিয়েছেন। পক্ষান্তরে বিএনপির নেতৃত্ব অজ্ঞতা, অন্ধ সংস্কার ও মনের জড়তাকে আলিঙ্গনে রেখে দলের ভবিষ্যৎ এবং জাতির ভবিষ্যৎকে একই সঙ্গে পুড়িয়ে ছাই করেছে।
জ্ঞানী লোকেরা বলেছেন, কোনো কোনো মৃত্যু পাখির পালকের মতো হালকা। কোনো কোনো মৃত্যু পাহাড়ের মতো ভারী। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী। মায়ের বুকে সন্তানের মৃত্যু পাহাড়ের চাইতেও ভারী। লাগাতার অবরোধের আগুনে পুড়ে বাংলাদেশ মৃত্যুপুরী হয়েছে। কত নারী-শিশু প্রাণ হারিয়েছে। কত মায়ের বুক খালি হয়েছে, কত সংসারের স্বপ্ন ছাই হয়েছে! কৃষকের স্বপ্ন ভেঙেছে। শ্রমিকের কপাল পুড়েছে। শিশু মাতৃহারা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বুকেও পাহাড় ভেঙে পড়েছে। শেখ হাসিনা ব্যথিত হয়েছেন। দেশবাসী ব্যথিত হয়েছে। এটাই মানবতা। সেই মানবতাই আশা করছে যে খালেদা নিজের হৃদয় বেদনায় মিলিয়ে সন্তানহারা সব মায়ের বুকের যন্ত্রণা অনুভব করবেন। আগুন থামবে। জনগণ শান্তি ফিরে পাবে। দেশবাসী আশা করছে সন্ত্রাস বন্ধ হবে। জঙ্গিবাদ খতম হবে। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশ বাঁচবে। আমারও সেটাই ঐকান্তিক কামনা এবং এ প্রত্যাশায় কাতর অনুনয় :আল্লাহর ওয়াস্তে দেশ পোড়ানো বন্ধ করুন!
প্রবাসী, ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা, কলাম লেখক
No comments