কোন পথে রাজনীতি ও দেশ by মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন
মাসাধিকাল
ধরে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দিনাতিপাত করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এর মধ্যে প্রথম ১৬ দিন ছিলেন বালু
বোঝাই ও ইট বোঝাই ট্রাক এবং পুলিশি ব্যারিকেডে অবরুদ্ধ। তারপর পুলিশি
ব্যারিকেড তুলে নেয়া হলেও অবরোধ ও কৌশলগত কারণে কার্যালয় ছাড়েননি তিনি। এরই
মধ্যে তার জীবনের কষ্টদায়ক দুঃসংবাদটি নিয়ে আসেন নিকটাত্মীয়রা। অকালে
মৃত্যুবরণ করেন তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। সেই থেকে যোগ হলো
পুত্রশোক। পুত্রশোকে যখন কাতর ও বিপর্যস্ত খালেদা জিয়া, তখন তার রাজনৈতিক
কার্যালয়ের অতি প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ডিশ, ইন্টারনেট ও মোবাইল
নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয় সরকার। প্রায় ২০ ঘণ্টা পর অবশ্য বিদ্যুৎসংযোগ চালু
করা হয় কিন্তু অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় সেবা এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে। অন্য
দিকে পুত্রশোকের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক দেয়া হচ্ছে গাড়ি পোড়ানোর
হুকুমের আসামির মামলা। যেকোনো সময় গ্রেফতারের ঝুঁকিও রয়েছে তার। এর মধ্যেই
তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। যত ঝুঁকিই
থাকুক, তার হয়তো আত্মবিশ্বাস আছে; চূড়ান্তপর্যায়ে তিনিই জয়ী হবেন।
কার্যত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিত্ব, দৃঢ়তা ও তার জনপ্রিয়তার ওপরই বিএনপির রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন; তারা আরো মনে করেন খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি পায় এমন কাজ মতাসীন দল করবে না। দেশের ভালো চাইলে সমঝোতা করেই রাজনীতি করতে হবে এবং দেশ চালাতে হবে। একতরফা রাজনীতি করে দেশ চালানো যে অসম্ভব বর্তমান প্রোপটে তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হচ্ছে। কাজেই সবাইকে অহমিকা, গোয়ার্তুমি ও অসহিষ্ণু মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে, রাজনীতিতে সহিষ্ণু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে; বিভেদ-বিভাজন সৃষ্টি হয় বা রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয় এমন বাক্য ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
দৃশ্যত আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুটি খুবই বেদনাদায়ক ও অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা। তার এই অকাল মৃত্যুতে দেশের মানুষ নির্বাক হয়ে যায়। শোকের ছায়া নেমে আসে সব জায়গায়। এর প্রতিফলনও ঘটে মরহুমের নামাজে জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লাখো মানুষের উপস্থিতির মাধ্যমে। তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীসহ হাজারো মানুষ ছুটে যায় বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে। এমনকি ছুটে যান রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীও। কিন্তু কার্যালয়ে প্রবেশ না করে তিনি তাৎণিক সেখান থেকে ফিরে আসেন। এটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সুশীলসমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষই ব্যাপারটিকে ভালোভাবে নেয়নি। এমনকি বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাও প্রধানমন্ত্রীর ফিরে আসাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু বিএনপির গুলশান কার্যালয় ঘটনাটিকে দেখছে ভিন্ন দৃষ্টিতে। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর তাৎণিক ফিরে যাবেন এটি তারা কল্পনাও করতে পারেননি। তারা কার্যালয়ের ভেতরে বসে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করছেন এবং ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী আসার আগে তাদের জানিয়ে এসএসএফ আসবে, তারা কার্যালয়ের দায়িত্ব নেবে, কার্যালয়ের ভেতরে ভিড় করা শত শত নেতাকর্মীকে বের করে প্রধানমন্ত্রীর ভেতরে প্রবেশের রাস্তা ও তার নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করবে। তারপরই না প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু এ েেত্র তার কিছুই হয়নি বলে কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী এসে কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় কয়েক মিনিট অপো করে ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রীর সেখান থেকে ফিরে আসার দৃশ্যটি আমরা টিভি চ্যানেলেও লাইভ দেখেছি। এটি দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে। আমি অনুমান করেছি, এখানে ভুল বোঝাবুঝির কিছু একটা ঘটনা হয়তো ঘেটেছে; নয়তো প্রধানমন্ত্রী কষ্ট স্বীকার করে আসলেনই যখন প্রক্রিয়া শেষ না করে ফিরে যাবেন কেন। ঘটনাটি এড়ানো যেত যদি উভয়প দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হতেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা প্রটোকল যথাযথভাবে অনুসরণ করা হতো।
আমরা জানি প্রধানমন্ত্রীর আগমন যেখানে ঘটে, সেটা কোনো অফিস হোক, বাড়ি হোক, হোক কোনো জনসভাস্থল বা বিদেশÑ সেখানে কয়েক স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অনেক ব্যত্যয় লক্ষ করা গেছে। প্রশ্ন কেন?
লণীয় গত ২০ বছরে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে, সেটি নিয়ে এখন মোটা দাগের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দু’টি রাজনৈতিক শক্তি যে পথে এগোচ্ছে, তাতে বিগত দিনের অর্জিত সাফল্য ধরে রাখা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বল প্রয়োগের বিপজ্জনক কৌশল গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিপজ্জনক কৌশলে রাষ্ট্রের রক্তরণ হচ্ছে, রাষ্ট্র থরথর করে কাঁপছে; চূড়ান্তভাবে তা রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে বাধ্য বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। কাজেই এখনো সময় আছে পরিস্থিতি অনুধাবন করার এবং দেশে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। এখানে উভয় রাজনৈতিক শক্তিকেই দেশের কথা ভেবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বিশেষ করে যারা ড্রাইভিং সিটে থাকেন, তাদের দায়িত্বটাই এখানে মুখ্য ও গুরুত্বপূর্ণ।
belayet_1@yahoo.com
কার্যত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিত্ব, দৃঢ়তা ও তার জনপ্রিয়তার ওপরই বিএনপির রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন; তারা আরো মনে করেন খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি পায় এমন কাজ মতাসীন দল করবে না। দেশের ভালো চাইলে সমঝোতা করেই রাজনীতি করতে হবে এবং দেশ চালাতে হবে। একতরফা রাজনীতি করে দেশ চালানো যে অসম্ভব বর্তমান প্রোপটে তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হচ্ছে। কাজেই সবাইকে অহমিকা, গোয়ার্তুমি ও অসহিষ্ণু মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে, রাজনীতিতে সহিষ্ণু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে; বিভেদ-বিভাজন সৃষ্টি হয় বা রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয় এমন বাক্য ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
দৃশ্যত আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুটি খুবই বেদনাদায়ক ও অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা। তার এই অকাল মৃত্যুতে দেশের মানুষ নির্বাক হয়ে যায়। শোকের ছায়া নেমে আসে সব জায়গায়। এর প্রতিফলনও ঘটে মরহুমের নামাজে জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লাখো মানুষের উপস্থিতির মাধ্যমে। তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীসহ হাজারো মানুষ ছুটে যায় বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে। এমনকি ছুটে যান রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীও। কিন্তু কার্যালয়ে প্রবেশ না করে তিনি তাৎণিক সেখান থেকে ফিরে আসেন। এটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সুশীলসমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষই ব্যাপারটিকে ভালোভাবে নেয়নি। এমনকি বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাও প্রধানমন্ত্রীর ফিরে আসাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু বিএনপির গুলশান কার্যালয় ঘটনাটিকে দেখছে ভিন্ন দৃষ্টিতে। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর তাৎণিক ফিরে যাবেন এটি তারা কল্পনাও করতে পারেননি। তারা কার্যালয়ের ভেতরে বসে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করছেন এবং ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী আসার আগে তাদের জানিয়ে এসএসএফ আসবে, তারা কার্যালয়ের দায়িত্ব নেবে, কার্যালয়ের ভেতরে ভিড় করা শত শত নেতাকর্মীকে বের করে প্রধানমন্ত্রীর ভেতরে প্রবেশের রাস্তা ও তার নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করবে। তারপরই না প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু এ েেত্র তার কিছুই হয়নি বলে কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী এসে কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় কয়েক মিনিট অপো করে ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রীর সেখান থেকে ফিরে আসার দৃশ্যটি আমরা টিভি চ্যানেলেও লাইভ দেখেছি। এটি দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে। আমি অনুমান করেছি, এখানে ভুল বোঝাবুঝির কিছু একটা ঘটনা হয়তো ঘেটেছে; নয়তো প্রধানমন্ত্রী কষ্ট স্বীকার করে আসলেনই যখন প্রক্রিয়া শেষ না করে ফিরে যাবেন কেন। ঘটনাটি এড়ানো যেত যদি উভয়প দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হতেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা প্রটোকল যথাযথভাবে অনুসরণ করা হতো।
আমরা জানি প্রধানমন্ত্রীর আগমন যেখানে ঘটে, সেটা কোনো অফিস হোক, বাড়ি হোক, হোক কোনো জনসভাস্থল বা বিদেশÑ সেখানে কয়েক স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অনেক ব্যত্যয় লক্ষ করা গেছে। প্রশ্ন কেন?
লণীয় গত ২০ বছরে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে, সেটি নিয়ে এখন মোটা দাগের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দু’টি রাজনৈতিক শক্তি যে পথে এগোচ্ছে, তাতে বিগত দিনের অর্জিত সাফল্য ধরে রাখা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বল প্রয়োগের বিপজ্জনক কৌশল গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিপজ্জনক কৌশলে রাষ্ট্রের রক্তরণ হচ্ছে, রাষ্ট্র থরথর করে কাঁপছে; চূড়ান্তভাবে তা রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে বাধ্য বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। কাজেই এখনো সময় আছে পরিস্থিতি অনুধাবন করার এবং দেশে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। এখানে উভয় রাজনৈতিক শক্তিকেই দেশের কথা ভেবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বিশেষ করে যারা ড্রাইভিং সিটে থাকেন, তাদের দায়িত্বটাই এখানে মুখ্য ও গুরুত্বপূর্ণ।
belayet_1@yahoo.com
No comments