বেদি নয় কেজরির প্রতিদ্বন্দ্বী মোদি
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে দৃশ্যত আম আদমির কেজরিওয়াল লড়ছেন বিজেপির কিরণ বেদির বিরুদ্ধে। কিন্তু ভোট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কেজরিওয়ালের আসল লড়াইটা চলছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে। মোদিই আসল প্রতিপক্ষ। গত লোকসভা নির্বাচনে মোদি-উন্মাদনার যে ঢেউ উঠেছিল, সেটাকেই কাজে লাগিয়ে পার পেতে চাচ্ছে বিজেপি। কিন্তু সমীকরণটা এত সহজ হচ্ছে না। রাজনীতির গতিপ্রকৃতিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখলে বোঝা যায়, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে এই নির্বাচনী লড়াইয়ে।
১৯৮৮ সালের জুন মাসে রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে যেভাবে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং (ভিপি সিং), ঠিক সেভাবেই আরেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কংগ্রেস থেকে বের হয়ে জন মোর্চা দল গড়েছিলেন ভিপি সিং। এলাহাবাদের আসন শূন্য হলে ভিপি সিংয়ের সেই চ্যালেঞ্জে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস দলের পতন শুরু হয়েছিল। আজ ২৭ বছর পর বিজেপির মোদি ম্যাজিকের রেশ কমাতে দাঁড়িয়েছেন কেজরিওয়াল। কেজরিওয়াল এই লড়াইয়ে সফল হলে ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন ভারসাম্য সৃষ্টি হবে। তাই এই লড়াইটা ১৯৮৮ সালের মতোই বিজেপি বা কিরণ বেদির বিরুদ্ধে নয়, স্পষ্টতই মোদির বিরুদ্ধে। বেদি এখানে মোদির প্রক্সি। এলাহাবাদে যেমন সুনীল শাস্ত্রী রাজীব গান্ধীর প্রক্সি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কারণ প্রতিষ্ঠিত দল সব সময় সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে ভুঁইফোঁড় নেতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা আড়াল করতে চায়। এই নির্বাচনেও লড়াইয়ের ধরন একই- শাসক দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই।
২৭ বছর আগে ভিপি সিং নির্বাচনী প্রচারণায় যাওয়ার সময় পকেটে ম্যাচ রাখতেন। গরিব নিুবিত্তদের বুঝিয়ে বলতেন, কীভাবে চার আনার জিনিসেও সরকার ট্যাক্স আদায় করে, আর সেই টাকায় স্কুল, হাসপাতাল নির্মাণের পাশাপাশি নিজেদের পকেট ভরে। কেজরিওয়ালও বস্তিবাসীসহ গরিবদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন পুঁজিবাদ বান্ধব সরকার এলে বস্তি গুঁড়িয়ে বড় বড় ইমারত তুলে নিজেদের পকেট ভরার ব্যবস্থা করবেন। তাছাড়া সাদাসিধে মানুষ হিসেবে কেজরিওয়ালের ৪৯ দিনের শাসনে প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যেভাবে কমিয়ে রেখেছিলেন, তা এখন পাঁচ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচন-পূর্ব জরিপে কেজরিওয়াল যেভাবে এগিয়ে আছেন, তাতে অনুমান করাই যায়, কংগ্রেসের পতনের পর রাজধানীতে মোদির বিরুদ্ধে ভারসাম্য রক্ষায় নতুন শক্তির উদ্ভব হতে যাচ্ছে। চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য কয়েকটা দিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
No comments