হল উদ্ধারের দাবিতে জবি ক্যাম্পাসে তুলকালাম- সড়ক অবরোধ গাড়ি ভাংচুর আহত ১০
জবি রিপোর্টার আবাসিক সঙ্কট নিরসন ও বেদখল থাকা হল উদ্ধারের দাবিতে আবারও ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তুলকালাম কা- ঘটিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰাথর্ীরা। বুধবারের এ ঘটনায় এক পুলিশ কনেস্টবলসহ আহত হয়েছে ১০ জন।
তাদের স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বিৰুব্ধ শিৰাথর্ীরা ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করে ১২টি গাড়ি ভাংচুর করে। ইটপাটকেল নিৰেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সদরঘাট শাখায়। এতে গুলিসত্মান-সদরঘাট সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এ সময় কোতোয়ালি ও সূত্রাপুর থানা পুলিশ দু'স্থানীয় বাসিন্দা ও দু'বহিরাগতসহ ১০ জনকে আটক করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।প্রত্যদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বাসে করে কয়েক শ' শিার্থী ক্যাম্পাসে পেঁৗছে। কাসে না গিয়ে হল উদ্ধারের দাবিতে সেস্নাগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হয়। কিছুণ পরই বিভিন্ন বিভাগ থেকে হল উদ্ধারের দাবিসংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন হাতে শিার্থীরা দলে দলে খ- খ- মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের সামনে সমবেত হতে থাকে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সহস্রাধিক শিার্থী হল উদ্ধারের দাবিতে বিভিন্ন সেস্নাগান দিয়ে কয়েকবার পুরো ক্যাম্পাস প্রদণি করে। পরে বেলা ১১টার দিকে বিােভকারীরা একটি মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে প্রধান গেট আটকে দেয়া হয়। উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢুকতে না পেরে বিুব্ধ শিার্থীরা প্রক্টর অফিসে ইটপাটকেল নিপে করে। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শিার্থীরা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে চাইলে প্রধান গেটে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় শিার্থীরা পুলিশকে ল্য করে ইটপাটকেল নিপে করলে পুলিশও তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে ভাস্কর্যের সামনে বিুব্ধরা মানববন্ধন ও সংৰিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করে। দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ এবং প্রক্টর কাজী আসাদুজ্জামান শিার্থীদের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন। এ সময় এক সংপ্তি বক্তব্যে উপাচার্য শানত্মিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে ছাত্রদের আন্দোলন করার আহ্বান জানান। এ সময় ছাত্রলীগের প থেকেও সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেয়া হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হল উদ্ধার ও ছাত্র অধিকার রা আন্দোলনের প থেকে আগামী চার ফেব্রম্নয়ারি পরবর্তী কর্মসূচীর ঘোষণা করে দিনের কর্মসূচীর সমাপ্তি টানা হয়। এরপর হঠাৎ করেই এক দল উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র ক্যাম্পাসসংলগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক ল্য করে ইটপাটকেল নিপে করতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে বিােভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বিােভকারীদের একটি অংশ ক্যাম্পাসে ভেতরে কলাভবনে অশ্রয় নেয় । অপর একটি অংশ ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে আজমেরী পরিবহনের ২টি, বিহঙ্গ পরিবহনের ৩টি , সুপ্রভাত পরিবহনের ৩টি ও কয়েকটি প্রাইভেট কারসহ ১২টি গাড়ি ভাংচুর করে। এ সময় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু হোসেন সিদ্দিকের পুত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক আশরাফ সিদ্দিকের গাড়িও ভাংচুর করে বিােভকারীরা। তখন পুলিশ ধাওয়া দিলে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লৰ্য করে পাল্টা ইটপাটকেল নিপে করে। শুরম্ন হয় ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরনো ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক, ফুজি গলি, শাঁখারীবাজার, কবি নজরম্নল কলেজের গেট এবং লক্ষ্মীবাজার এলাকায়। পুলিশ ও ছাত্রদের এ সংঘর্ষ প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী স্থা্য়ী হয়। চলে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিপে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের বাইরের থাকা শিৰাথর্ী ও পথচারীরা সমস্যায় পড়ে যায়। আত্মরৰার জন্য তারা খুঁজতে থাকে নিরাপদ আশ্রয়। ছুটতে থাকে এদিক-ওদিক। এ সংঘর্ষে পুলিশ ও ৯ ছাত্রসহ ১০ জন আহত হন। আহত ছাত্ররা হলেন ইসমাইল, কাশেম, বাবুল, নাহিদ, মোনায়েম এবং পুলিশ কনস্টেবল আইয়ুব আলী। এ সময় কোতোয়ালি থানা পুলিশ তিন ছাত্রকে আটক করে। এরা হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের বাবুল, সরকারী বাঙলা কলেজের ছাত্র নাহিদ এবং সিলেট সরকারী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মোনায়েম। এছাড়া কবি নজরম্নল কলেজের সামনে গাড়ি ভাংচুরে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয় আরও সাত জনকে। আটককৃতরা হলেন সাজ্জাদ, শাহেদ, আব্দুল বাতেন, সাহাদত হোসেন, কবি নজরম্নল কলেজের ছাত্র মনসুরল ইসলাম এবং অপু ও শুভ্র নামে দু'স্থাানীয় বাসিন্দা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর কাজী আসাদুজ্জামান বলেছেন, আমরাও হল উদ্ধারের পৰে। তবে শিৰাথর্ীরা যাতে করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।
আন্দোলন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মেসবাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন যৌক্তিক। আমরা শিৰাথর্ীদের সঙ্গে আছি। হল উদ্ধারের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উলেস্নখ করেন।
প্রসঙ্গত জগন্নাথ বিশ্বদ্যিালয়ের শিৰাথর্ীদের কোন আবাসিক হল নেই। বিলুপ্ত জগন্নাথ কলেজের ১২টি হল ছিল। হলগুলো বর্তমানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে।
রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ৩ হাজার ভবন দ্রম্নত ভেঙ্গে ফেলা হবে
স্টাফ রিপোর্টার রাজধানীতে ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ ৩ হাজার ভবন দ্রম্নত ভেঙ্গে ফেলা হবে। এই লৰ্যে আগামী ২/১ দিনের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হবে। এছাড়া অন্য ভবনগুলো বিল্ডং কোড অনুসরণ করে নির্মাণ করা হয়েছে কি না তাও পরীৰা করে দেখা হবে। এ লৰ্যে নির্মাণ করা অন্য ভবনসমূহের মধ্যে থেকে র্যান্ডমভিত্তিতে কিছু ভবন পরীৰা করে দেখা হবে। এসব ভবনকে ভূমিকম্পের দিক থেকে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী চিহ্নিত করা হবে। এ জন্য রিখটার স্কেলের মাত্রা ধরা হবে সাত। এ ছাড়াও ভূমিকম্প পরবর্তীতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য করণীয় সম্পর্কে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সিডিএমপি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত কম্প্রিহেনসিভ পস্ন্যান একটি কারিগরি কমিটি যাচাইবাচাই করে চূড়ানত্ম করবে।
বুধবার খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সভাকৰে অনুষ্ঠিত ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সচেতনতা কমটির বৈঠকে এসব সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়।
সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীতে ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ ৩ হাজার ভবন চিহ্নত করা হয়। এর মধ্য থেকে মাত্র ছ'টি ভবন ইতোমধ্যে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বাকি ২ হাজার ৯শ' ৯৩টি ভবন দ্রম্নত ভেঙ্গে ফেলা হবে। এই ভবনগুলোর মধ্যে অধিকাংশই হলো পুরনো ঢাকায়। এছাড়াও মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ভবন রয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, ভূমিকম্প পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজের জন্য বেশকিছু যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যেই সশস্ত্রবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাছে হসত্মানত্মর করা হয়েছে। অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে সহায়তার জন্য সারাদেশে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক গড়ে তোলা হচ্ছে। কিন্তু এ কাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবক গড়ে তোলাই যথেষ্ট নয়। এ জন্য ভূমিকম্প পরবর্তী করণীয় এবং উদ্ধার কাজের বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। জনগণের প্রত্যৰ সহায়তা ছাড়া এ কাজে সফল হওয়া কঠিন। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে নেয়া সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী প্রতীকী হিসেবে সচিবালয়ের একটি ভবন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজকে ভূমিকম্প ঝুঁকিমুক্ত করতে রেট্রোফিটিং করার কাজ দ্রম্নত সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রী পূর্ত বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন এবং সিডিএমপি থেকে কারিগরি সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।
বৈঠকে আরও সিদ্ধানত্ম হয় যে, বিভিন্ন বেসরকারী নির্মাণ সংস্থার কাছে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজের জন্য কি ধরনের যন্ত্রপাতি আছে তা চিহ্নিত করা হবে। প্রয়োজনে এসব যন্ত্রপাতি যাতে ব্যবহার করা যায়, তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারের এবং বেসরকারী সংস্থার কাছে থাকা যন্ত্রপাতির তালিকা করার পর আরও কি কি যন্ত্রপাতি কেনা প্রয়োজন তা চূড়ানত্ম করা হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশন বা অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরের বিভিন্ন শিল্প-কারখানার ভবন যাতে ভূমিকম্প ঝুঁকিমুক্ত করে নির্মাণ করা হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়াও ভূমিকম্প পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজের জন্য ঢাকা শহরের আশপাশের এলাকা থেকেও স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচন করে প্রশিৰণ প্রদানের বিষয়েও বৈঠকে সিদ্ধানত্ম হয়।
সূত্র জানায়, ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার লৰ্যে ইতোমধ্যে ৭০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। আরও কিছু যন্ত্রপাতি দ্রম্নত ক্রয় করা হবে। পাশাপাশি এখন থেকে সকল ভবন নির্মাণের ৰেত্রে অবশ্যই বিল্ডিং কোড মেনে করতে হবে। ঢাকা শহরের বাইরে ভবন নির্মাণেও বিল্ডিং কোড মানতে হবে।
খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বৈঠকে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মো. মোখলেছুর রহমান, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ সচিব মোহাম্মদ মোহসীন, প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী গোলাম মর্তুজা, সিডিএমপির ভূমিকম্প ও সুনামি বিশেষজ্ঞ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ আনসারী।
উলেস্নখ্য, বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিদ্যমান সত্ত্বেও সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই এমন একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেৰিতে মহামান্য হাইকোর্ট সরকারকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা এবং একটি উচ্চ ৰমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। সে নির্দেশের ভিত্তিতেই এ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
No comments