চট্টগ্রামে বিএনপির দু'গ্রম্নপে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া- পাল্টা কমিটি গঠন
চট্টগ্রাম অফিস বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটি নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে অসনত্মোষ ক্রমেই প্রকাশ্য রূপলাভ করছে। কমিটির পৰে-বিপৰে দু'টি অংশ এখন মুখোমুখি।
বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে ঘটেছে দু'পৰের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা। এতে আহত হয়েছে ৪ জন। নতুন কমিটির বিরম্নদ্ধে পাল্টা অবস্থান নেয়া অংশটি আগামী ৬ ফেব্রম্নয়ারি পাল্টা সম্মেলনের মাধ্যমে পৃথক কমিটি ঘোষণার কর্মসূচী দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, কেন্দ্র ঘোষিত কমিটিতে সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ পদে এমন ব্যক্তিদের স্থান দেয়া হয়েছে, যারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার এবং চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এ কমিটির বিরম্নদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী বর্তমান কমিটির বিরম্নদ্ধে থাকা অংশের সমাবেশ হবার কথা ছিল বুধবার বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে। সে অনুযায়ী চাকসু ভিপি নাজিমউদ্দিনসহ বিদ্রোহী নেতৃবৃন্দের অনুসারীরা সেখানে জড়ো হবার চেষ্টা করে। কিন্তু আগে থেকেই সভাপতি গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা সেখানে অবস্থান নেয়। বিরোধীরা কার্যালয়ে আসামাত্রই বর্তমান কমিটির পৰের লোকেরা তাদের ধাওয়া করে। এ সময় তারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। শুরম্ন হয় উভয়পৰের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি। সংঘর্ষে আহত হয় ছাত্রদল নেতা নুরম্নল হুদাসহ ৪ জন। আহতরা ভিপি নাজিমউদ্দিনের অনুসারী বলে জানা যায়। বিদ্রোহী অংশ আগামী ৬ ফেব্রম্নয়ারি পাল্টা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে।
উলেস্নখ্য, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেসকাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উত্তর জেলা বিএনপির নতুন কমিটি প্রত্যাখ্যান করে কঠোর কর্মসূচী প্রদানের ঘোষণা দেয় দলের একাংশ। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, কমিটিতে সত্যিকারের ত্যাগী ও আদর্শিক নেতাদের স্থান হয়নি। বরং জায়গা হয়েছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী এবং চুরি-ডাকাতি, সন্ত্রাসী কর্মকা- ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িতদের। সেখানে রয়েছে জামায়াত ও জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য যোগদানকারী নেতাদের আত্মীয়স্বজন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ কমিটি কোনভাবেই মেনে নেবে না তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকমর্ী ও সমর্থকরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন চাকসু ভিপি নাজিমউদ্দিন, এএইচএম মঞ্জুরম্নল আলম, এ্যাডভোকেট আবু তাহের, আবদুল আউয়াল চৌধুরী, জসিমউদ্দিন সিকদার, সেকান্দর চৌধুরী, হাজী এমএ কাসেম, জেলী চৌধুরীসহ অনেকেই।
নেতৃবৃন্দ কোন ধরনের কাউন্সিল ছাড়াই পছন্দের লোকদের নিয়ে কমিটি গঠন করায় ৰোভ প্রকাশ করেন এবং এ কমিটি কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন। তাঁরা স্পষ্টভাবে বলেন, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী একজন রাজাকার। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে তিনি জনসম্মুখে উপস্থিত হতে পারেন না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছাত্রদলের প্রথম কমিটি থেকে গিয়াস কাদেরকে বহিষ্কার করেছিলেন। ওয়ান ইলেভেনপরবতর্ী সময়ে সংস্কারপন্থীদের বিএনপির বিকল্প দল গঠনে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এ গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকা রাউজানে নিজের বাবার কবর জিয়ারত করতেও যেতে পারেন না। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকমর্ী ও সমর্থকরা এ রকম একজন মানুষকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে পারে না। তিনি কখনই দলে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না। আন্দোলন সংগ্রামেও তার কোন ভূমিকা নেই। নতুন কমিটির সহ-সভাপতি এসএম ফজলুল হক আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন না পেয়ে তিনি বিএনপিতে এসেছিলেন। এখানেও মনোনয়ন না পেয়ে বার বার ষড়যন্ত্র করেছেন দলের বিরম্নদ্ধে। বিএনপি সরকারের প্রত্যৰ সহায়তায় বিজিএমইএ'র খ-কালীন সভাপতি হয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনপরবতর্ী সময়ে বিভিন্ন টকশোতে এবং হোটেল সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন আলোচনাসভায় তিনি তারেক রহমানকে তারেক সওদাগর এবং বেগম খালেদা জিয়াকে দুনর্ীতির আশ্রয়দাতা ও হাওয়া ভবনকে উদ্দেশ্য করে কুরম্নচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছিলেন। সে কারণে তিনি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে নেতাকমর্ীদের হাতে লাঞ্ছিতও হন। যুগ্ম সম্পাদক নুরম্নল আমিন দলের পুরনো কমর্ী হলেও চুরি-ডাকাতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমিদখল, মুহুরি প্রজেক্টের মাছ লুটসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত। আরেক যুগ্ম সম্পাদক বেলায়েত হোসেন জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা। টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির কারণে ওয়ান ইলেভেনপরবতর্ী সময়ে তিনি পলাতক ছিলেন। অর্থ সম্পাদক সালামত আলী এখনও উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং রাউজান থানা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেননি । ডা. জাহাঙ্গীর ছাত্রশিবিরের প্রাক্তন ক্যাডার এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবশালী নেতা। অথচ তিনি উত্তর জেলা কমিটির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন। কমিটিতে আবদুলস্নাহ আল নোমান, এলকে সিদ্দিকী, মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, ডা. এমএন ছাফা, নুরী আরা ছাফা, ড. ইনামুল হক, আলাউদ্দিন, এওয়াইবি সিদ্দিকী বা তাদের কোন অনুসারীর স্থান হয়নি। তৃণমূল পর্যায়ের সমর্থকরা এ কমিটি কখনোই মেনে নিতে পারে না।
No comments