সিআইএ জানত পাকিস্তানই কাশ্মীরে যুদ্ধ শুরু করেছিল by মিজানুর রহমান খান
৪১ বছর পরে জানা গেল, যুক্তরাষ্ট্র জানত, একাত্তরের এই দিনে ভারত নয়, পাকিস্তানই পশ্চিম পাকিস্তান ফ্রন্টে যুদ্ধ লাগিয়েছিল। আর এটা সিআইএ ৬ ডিসেম্বর নিশ্চিত করেছিল নিক্সন-কিসিঞ্জারকে। অথচ বিশ্বকে তারা জানতে দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও সত্য গোপন করেছিল।
২০০৫ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দলিলনির্ভর সাউথ এশিয়া ক্রাইসিস বইয়ের সম্পাদকীয় নোট এ রকম: ‘৩ ডিসেম্বর যুদ্ধ কে শুরু করেছিল, সে বিষয়ে ৪ ডিসেম্বর সিআইএ প্রতিবেদন দিয়েছিল যে এটা তাদের পক্ষে এখনো নির্দিষ্ট করা সম্ভব হয়নি।’ বিবিসিতেও একাত্তরে পাকিস্তান-ভারতের পরস্পরবিরোধী দাবির কথাই সম্প্রচার করা হয়েছিল। এখন প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, একাত্তরের ৬ ডিসেম্বরই সিআইএ এবং আরও কয়েকটি দেশ ভারতের কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে হামলাকারী হিসেবে পাকিস্তানকেই চিহ্নিত করেছিল।
একাত্তরের ১১ ডিসেম্বর ইসলামাবাদের মার্কিন মিশন তাদের দিল্লির দূতাবাসকে জানিয়েছিল যে ৬ ডিসেম্বর সিআইএ বলেছে, পাকিস্তানই প্রথম হামলা শুরু করেছে। ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনও স্বাধীনভাবে তদন্ত করে দেখেছে যে এটা পাকিস্তানের কাজ।
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী একাত্তরের এদিনে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এতে তিনি বলেন, পাকিস্তানের বিমানবাহিনী কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে ছয়টি ভারতীয় বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। ভারতের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তজুড়ে তাদের গোলন্দাজ বাহিনী গোলাবর্ষণ করে চলেছে। তাই ভারতকে যুদ্ধে যেতেই হচ্ছে। ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কিটিং এ খবর দিয়ে এদিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানান, ইন্দিরা তাঁর ভাষণের আগে বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ডিফেন্স অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট পাস করাতে কাল লোকসভার বিশেষ অধিবেশন বসছে। রাষ্ট্রপতি গিরি জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
এদিনই ইন্দিরার ভাষণের প্রতিক্রিয়া দেখায় পাকিস্তান। ওয়াশিংটনে ইসলামাবাদের দূতাবাস মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানাল ভিন্ন গল্প। তারা বলল, গত তিন থেকে চার দিন ধরে ভারতীয়রা পশ্চিম পাকিস্তান ফ্রন্টে উসকানি দিয়ে চলছিল। এরপর তারা আজ সাড়ে তিনটা থেকে চারটার মধ্যে পাকিস্তান ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালায়। তাই তারা ভারতীয় বিমানক্ষেত্রে হামলা চালায়, যা ছিল একটি ‘প্রয়োজনীয় পাল্টা ব্যবস্থা।’
কেনেথ কিটিং এক তারবার্তায় জানান, ‘কে যুদ্ধটা শুরু করেছে তা আমরা এখনো জানি না। তাই উভয়পক্ষকে সংযত হতে আহ্বান জানানোই হওয়া উচিত আমাদের বর্তমান অবস্থান।’
কিটিং ওই দিন আলাদা এক তারবার্তায় পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানান, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব টি এন কাউল পৌনে সাতটায় মার্কিন মিশনের উপপ্রধানকে টেলিফোনে নিশ্চিত করেন যে পাকিস্তানি বিমান অমৃতসর, পাঠানকোট ও শ্রীনগরে হামলা করেছে। অথচ পাকিস্তান রেডিও বলছে, ভারত সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তান ফ্রন্টে হামলা চালাচ্ছে। কাউল বলেন, ‘আমি আপনাদের জানাতে চাই, তাদের এ দাবি ডাহা মিথ্যা (ব্লাডি লাই)।’
ওয়াশিংটন সময় ১০:৪৫ (৬ ডিসেম্বর)। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্স ও প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা চলছে। কিসিঞ্জারের বক্তব্যে স্পষ্ট যে তিনি সত্যটা ঠিকই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। কারণ তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, পশ্চিম পাকিস্তানই হামলা চালিয়েছে। কারণ, পূর্ব পাকিস্তান তো ভেঙে পড়ছে। পররাষ্ট্র দপ্তর ভারতে সামরিক সহায়তা চুক্তি বাতিল করে বিবৃতি না দিতে এটাকেই অজুহাত হিসেবে খাড়া করছে। কিন্তু আমি বরং মনে করি, একে কাজে লাগিয়েই চুক্তিটা বাতিল করা ভালো।’ ১০টা ৫৫ মিনিটে রজার্সকে আবার কিসিঞ্জারের ফোন: ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এখনই কথা বললাম। তিনি একেবারেই একরোখা। তিনি পাকিস্তানের দিকেই ঝুঁকে থাকবেন। আমার হয়েছে যত জ্বালা।’ এদিন ১১টা ১৯ থেকে ১১টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের বৈঠক হয়। এর সিদ্ধান্তমতে রজার্স পাকিস্তান রাষ্ট্রদূত রাজার সঙ্গে কথা বলেন। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার প্রস্তাবিত সময় ও প্রস্তাবের খসড়ার বিষয়ে রাজা একমত হন। ওই বৈঠকে কিসিঞ্জার বলেন, ‘প্রত্যেক আধঘণ্টা অন্তর প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে তাগাদা পাচ্ছি। তিনি মনে করছেন, ভারতের বিরুদ্ধে আমরা যথেষ্ট কড়া হতে পারছি না।’
পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের খবরে বিচলিত আফগানিস্তানের বাদশাহ জহির শাহ তাঁর লন্ডন সফর বাতিলে উদ্যোগী হন। নরওয়ের সঙ্গে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী কোসিগিনের আলোচনা স্থির ছিল। যুদ্ধের কথা শুনে তিনি তা বাতিল করেন। তবে ২৭ নভেম্বর নিক্সন তাঁকে যে চিঠি লিখেছিলেন তিনি আজই এর উত্তর দেন। কোসিগিন এতে ইঙ্গিত দেন সীমান্ত থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার ‘টেনেটুনে সম্ভব’। তিনি রাজনৈতিক সমাধানে গুরুত্ব দেন। তবে এর দায়টা পাকিস্তানের বলেও মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, যুদ্ধ শুরুর এই দিনটিতে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড ইয়াহিয়ার বাসভবনে ছিলেন। স্থানীয় সময় রাত প্রায় আটটা। এ সময় সেখানে পররাষ্ট্রসচিব ও সেনাপ্রধান আসেন। ইয়াহিয়া ফারল্যান্ডকে বলেন, ‘স্থানীয় সময় বিকেল প্রায় তিনটায় ভারতীয়রা কাশ্মীর সীমান্তে ব্যাপক হামলা শুরু করেছে।’ ফারল্যান্ডের অনুরোধে হামলার বিস্তারিত অবিলম্বে জানাতে ইয়াহিয়া রাজি হন।
আরেকটি মার্কিন নথি বলছে, ‘রজার্স কিসিঞ্জারকে বলেছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রদূতের করণীয় বিষয়ে তার সরকারের তরফে কোনো নির্দেশনা নেই। দেশের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের মাধ্যমও দুর্বল। আমরাই তাঁর ভরসা।’ কিসিঞ্জার বলেন, প্রেসিডেন্ট নিক্সন নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনতে চান। এ সময় রজার্স বলেন, ‘সময়টা ভারতকে দোষারোপ বা নিন্দা করার নয়। আমরা ভারতের ওপর দোষ চাপালে একটা সাধারণ যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। এটা হবে একটা অদূরদর্শিতা যদি আমরা ভাবি যে কঠোর নিন্দার মাধ্যমে আমরা এখন ভারতকে শাস্তি দিতে পারব। তার চেয়ে আমরা বরং একটা যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করি।’ কিসিঞ্জার তখন বলেন, ‘আমিও তো সেটাই চাই। কিন্তু আগে ঠিক করতে হবে যুদ্ধটা বাধালটা কে।’ রজার্স বলেন, ‘আরে আগে তো বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে তুলতে হবে। সেটা সবার আগেই করতে হবে। আমরা না করলে অন্য কেউ সেটা করবে।’ কিসিঞ্জার বলেন, ‘এমনভাবে করুন, যাতে পাকিস্তান চোট না পায়।’
সময় তখন বিকেল পৌনে চারটা। রজার্স বলছেন, ‘যুদ্ধ যদি ছড়িয়ে পড়ে আর দ্রুত নিরাপত্তা পরিষদে না গিয়ে আমরা বসে থাকি, তখন সবাই প্রেসিডেন্টকে দোষ দেবেন।’
একাত্তরের ৩ ডিসেম্বরের মূল নথিপত্র ঘেঁটে এক বিদেশি মুক্তিযোদ্ধার কথাও জানা গেল। তাঁর নাম কোথাও লেখা আছে কি না, জানি না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আজ হোয়াইট হাউসকে জানিয়েছিল, প্যারিসের অর্লি বিমানবন্দরে আজ বাংলাদেশের পক্ষে পাকিস্তানের একটি বেসামরিক বিমান ছিনতাই করা হয়। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাদা পোশাকধারী পুলিশ বিমান ছিনতাইকারীকে পরাস্ত করে। তাঁর পরিচয় তিনি আলজেরীয় বংশোদ্ভূত একজন ফরাসি। ধস্তাধস্তির কারণে হামলাকারী আহত হয়েছেন। কিন্তু যাত্রীরা অক্ষত থাকেন।
একাত্তরের ১১ ডিসেম্বর ইসলামাবাদের মার্কিন মিশন তাদের দিল্লির দূতাবাসকে জানিয়েছিল যে ৬ ডিসেম্বর সিআইএ বলেছে, পাকিস্তানই প্রথম হামলা শুরু করেছে। ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনও স্বাধীনভাবে তদন্ত করে দেখেছে যে এটা পাকিস্তানের কাজ।
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী একাত্তরের এদিনে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এতে তিনি বলেন, পাকিস্তানের বিমানবাহিনী কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে ছয়টি ভারতীয় বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। ভারতের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তজুড়ে তাদের গোলন্দাজ বাহিনী গোলাবর্ষণ করে চলেছে। তাই ভারতকে যুদ্ধে যেতেই হচ্ছে। ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কিটিং এ খবর দিয়ে এদিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানান, ইন্দিরা তাঁর ভাষণের আগে বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ডিফেন্স অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট পাস করাতে কাল লোকসভার বিশেষ অধিবেশন বসছে। রাষ্ট্রপতি গিরি জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
এদিনই ইন্দিরার ভাষণের প্রতিক্রিয়া দেখায় পাকিস্তান। ওয়াশিংটনে ইসলামাবাদের দূতাবাস মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানাল ভিন্ন গল্প। তারা বলল, গত তিন থেকে চার দিন ধরে ভারতীয়রা পশ্চিম পাকিস্তান ফ্রন্টে উসকানি দিয়ে চলছিল। এরপর তারা আজ সাড়ে তিনটা থেকে চারটার মধ্যে পাকিস্তান ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালায়। তাই তারা ভারতীয় বিমানক্ষেত্রে হামলা চালায়, যা ছিল একটি ‘প্রয়োজনীয় পাল্টা ব্যবস্থা।’
কেনেথ কিটিং এক তারবার্তায় জানান, ‘কে যুদ্ধটা শুরু করেছে তা আমরা এখনো জানি না। তাই উভয়পক্ষকে সংযত হতে আহ্বান জানানোই হওয়া উচিত আমাদের বর্তমান অবস্থান।’
কিটিং ওই দিন আলাদা এক তারবার্তায় পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানান, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব টি এন কাউল পৌনে সাতটায় মার্কিন মিশনের উপপ্রধানকে টেলিফোনে নিশ্চিত করেন যে পাকিস্তানি বিমান অমৃতসর, পাঠানকোট ও শ্রীনগরে হামলা করেছে। অথচ পাকিস্তান রেডিও বলছে, ভারত সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তান ফ্রন্টে হামলা চালাচ্ছে। কাউল বলেন, ‘আমি আপনাদের জানাতে চাই, তাদের এ দাবি ডাহা মিথ্যা (ব্লাডি লাই)।’
ওয়াশিংটন সময় ১০:৪৫ (৬ ডিসেম্বর)। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্স ও প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা চলছে। কিসিঞ্জারের বক্তব্যে স্পষ্ট যে তিনি সত্যটা ঠিকই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। কারণ তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, পশ্চিম পাকিস্তানই হামলা চালিয়েছে। কারণ, পূর্ব পাকিস্তান তো ভেঙে পড়ছে। পররাষ্ট্র দপ্তর ভারতে সামরিক সহায়তা চুক্তি বাতিল করে বিবৃতি না দিতে এটাকেই অজুহাত হিসেবে খাড়া করছে। কিন্তু আমি বরং মনে করি, একে কাজে লাগিয়েই চুক্তিটা বাতিল করা ভালো।’ ১০টা ৫৫ মিনিটে রজার্সকে আবার কিসিঞ্জারের ফোন: ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এখনই কথা বললাম। তিনি একেবারেই একরোখা। তিনি পাকিস্তানের দিকেই ঝুঁকে থাকবেন। আমার হয়েছে যত জ্বালা।’ এদিন ১১টা ১৯ থেকে ১১টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের বৈঠক হয়। এর সিদ্ধান্তমতে রজার্স পাকিস্তান রাষ্ট্রদূত রাজার সঙ্গে কথা বলেন। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার প্রস্তাবিত সময় ও প্রস্তাবের খসড়ার বিষয়ে রাজা একমত হন। ওই বৈঠকে কিসিঞ্জার বলেন, ‘প্রত্যেক আধঘণ্টা অন্তর প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে তাগাদা পাচ্ছি। তিনি মনে করছেন, ভারতের বিরুদ্ধে আমরা যথেষ্ট কড়া হতে পারছি না।’
পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের খবরে বিচলিত আফগানিস্তানের বাদশাহ জহির শাহ তাঁর লন্ডন সফর বাতিলে উদ্যোগী হন। নরওয়ের সঙ্গে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী কোসিগিনের আলোচনা স্থির ছিল। যুদ্ধের কথা শুনে তিনি তা বাতিল করেন। তবে ২৭ নভেম্বর নিক্সন তাঁকে যে চিঠি লিখেছিলেন তিনি আজই এর উত্তর দেন। কোসিগিন এতে ইঙ্গিত দেন সীমান্ত থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার ‘টেনেটুনে সম্ভব’। তিনি রাজনৈতিক সমাধানে গুরুত্ব দেন। তবে এর দায়টা পাকিস্তানের বলেও মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, যুদ্ধ শুরুর এই দিনটিতে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড ইয়াহিয়ার বাসভবনে ছিলেন। স্থানীয় সময় রাত প্রায় আটটা। এ সময় সেখানে পররাষ্ট্রসচিব ও সেনাপ্রধান আসেন। ইয়াহিয়া ফারল্যান্ডকে বলেন, ‘স্থানীয় সময় বিকেল প্রায় তিনটায় ভারতীয়রা কাশ্মীর সীমান্তে ব্যাপক হামলা শুরু করেছে।’ ফারল্যান্ডের অনুরোধে হামলার বিস্তারিত অবিলম্বে জানাতে ইয়াহিয়া রাজি হন।
আরেকটি মার্কিন নথি বলছে, ‘রজার্স কিসিঞ্জারকে বলেছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রদূতের করণীয় বিষয়ে তার সরকারের তরফে কোনো নির্দেশনা নেই। দেশের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের মাধ্যমও দুর্বল। আমরাই তাঁর ভরসা।’ কিসিঞ্জার বলেন, প্রেসিডেন্ট নিক্সন নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনতে চান। এ সময় রজার্স বলেন, ‘সময়টা ভারতকে দোষারোপ বা নিন্দা করার নয়। আমরা ভারতের ওপর দোষ চাপালে একটা সাধারণ যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। এটা হবে একটা অদূরদর্শিতা যদি আমরা ভাবি যে কঠোর নিন্দার মাধ্যমে আমরা এখন ভারতকে শাস্তি দিতে পারব। তার চেয়ে আমরা বরং একটা যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করি।’ কিসিঞ্জার তখন বলেন, ‘আমিও তো সেটাই চাই। কিন্তু আগে ঠিক করতে হবে যুদ্ধটা বাধালটা কে।’ রজার্স বলেন, ‘আরে আগে তো বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে তুলতে হবে। সেটা সবার আগেই করতে হবে। আমরা না করলে অন্য কেউ সেটা করবে।’ কিসিঞ্জার বলেন, ‘এমনভাবে করুন, যাতে পাকিস্তান চোট না পায়।’
সময় তখন বিকেল পৌনে চারটা। রজার্স বলছেন, ‘যুদ্ধ যদি ছড়িয়ে পড়ে আর দ্রুত নিরাপত্তা পরিষদে না গিয়ে আমরা বসে থাকি, তখন সবাই প্রেসিডেন্টকে দোষ দেবেন।’
একাত্তরের ৩ ডিসেম্বরের মূল নথিপত্র ঘেঁটে এক বিদেশি মুক্তিযোদ্ধার কথাও জানা গেল। তাঁর নাম কোথাও লেখা আছে কি না, জানি না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আজ হোয়াইট হাউসকে জানিয়েছিল, প্যারিসের অর্লি বিমানবন্দরে আজ বাংলাদেশের পক্ষে পাকিস্তানের একটি বেসামরিক বিমান ছিনতাই করা হয়। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাদা পোশাকধারী পুলিশ বিমান ছিনতাইকারীকে পরাস্ত করে। তাঁর পরিচয় তিনি আলজেরীয় বংশোদ্ভূত একজন ফরাসি। ধস্তাধস্তির কারণে হামলাকারী আহত হয়েছেন। কিন্তু যাত্রীরা অক্ষত থাকেন।
No comments