চরাচর-বাংলা একাডেমী by ফাহমিদা আক্তার রিম্পি
'যারে ছেড়ে এলাম অবহেলেরে সে কি আবার আসবে ফিরে'। নাহ, যাকে অবহেলায় ছেড়ে আসবে সে কেন ফিরে আসবে আবার? আর যাকে পাওয়ার জন্য কেবল রক্ত নয়, বরং প্রাণ দিতে হয়েছে, তাকে কি অবহেলা করা যায়? মোটেও না।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে ভাষাসংক্রান্ত একটি একাডেমী প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। ১৯৫২ সালে উর্দু ভাষা দিয়ে বাঙালির মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা 'কাইড়া নিতে' চাইল তৎকালীন পাকিস্তানি ফ্যাসিস্ট মুসলিম লীগ সরকার। বাংলা মায়ের পাগল ছেলেরা তখন পৃথিবীকে দেখিয়ে দিল ভাষার প্রতি কতটা দরদ থাকলে এর জন্য প্রাণ দেওয়া যায়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর স্বপ্নটা আবার জাগিয়ে দিল দৈনিক আজাদ পত্রিকা। ১৯৫২ সালের ২৯ এপ্রিল সে পত্রিকার সম্পাদকীয়তে 'বাংলা একাডেমী' নামের একটি একাডেমীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। দৈনিক আজাদের এই বিষয়ে জনমত গড়ার কাজে এগিয়ে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৫৪ সালে এই বিষয়ে একটি প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অর্থাভাবে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। ১৯৫৪ সালেই যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলে শিক্ষামন্ত্রী সৈয়দ আজিজুল হক নির্দেশ দেন 'যুক্তফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী বর্ধমান হাউসের বদলে অপেক্ষাকৃত কম বিলাসের বাড়িতে বাসস্থান নির্দিষ্ট করিবেন এবং বর্ধমান হাউসকে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষার গবেষণাগারে পরিণত করা হইবে।' অবশেষে ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার উদ্বোধন করেন 'বাংলা একাডেমীর'। বাংলা একাডেমীর প্রথম সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মুহম্মদ বরকতউল্লাহকে। তাঁর পদবি দেওয়া হয় 'স্পেশাল অফিসার'। ১৯৫৬ সালে একাডেমীর প্রথম মহাপরিচালক নিযুক্ত হন অধ্যাপক মুহম্মদ এনামুল হক। উজির বাহরাম খান রচিত ও আহমদ শরীফ সম্পাদিত 'লাইলি মজনু' নামের বই প্রকাশের মাধ্যমে প্রকাশনা শুরু করে বাংলা একাডেমী।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারে বাংলা একাডেমীর নিরন্তর চেষ্টা রয়েছে। বাংলা একাডেমী চত্বরে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ ব্যাপারে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন মুক্তধারার প্রয়াত চিত্তরঞ্জন সাহা। যদিও এই মেলা স্বাধীনতার পরপরই শুরু হয়ে ১৯৭৪ সালের পর থেকে তা ক্রমেই বিশাল আকার ধারণ করে চলেছে। এখন এই বইমেলাকে বাংলার প্রাণের মেলা আখ্যায়িত করা হয়।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৬০ সাল থেকে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন শাখায় বছরে ৯ জনকে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। ১৯৮৬ সাল থেকে বছরে দুজনকে এই পুরস্কার দেওয়ার নিয়ম করা হয়। পরে ২০০৯ সাল থেকে চারটি শাখায় পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৮৫, ১৯৯৭ ও ২০০০ সালে কাউকেই এই পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
ভাষার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে আমরা প্রাণ দিয়েছি। এর স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই ভাষার গুণগত মান যেন ঠিক থাকে, এই ভাষায় যেন উন্নতমানের সাহিত্য চর্চা হয়, এই ভাষা দিয়ে আজ আমরা বিশ্বে সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে পরিচিত। এই ভাষার মান বজায় রাখার দায়িত্ব বাংলা একাডেমীর।
ফাহমিদা আক্তার রিম্পি
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারে বাংলা একাডেমীর নিরন্তর চেষ্টা রয়েছে। বাংলা একাডেমী চত্বরে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ ব্যাপারে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন মুক্তধারার প্রয়াত চিত্তরঞ্জন সাহা। যদিও এই মেলা স্বাধীনতার পরপরই শুরু হয়ে ১৯৭৪ সালের পর থেকে তা ক্রমেই বিশাল আকার ধারণ করে চলেছে। এখন এই বইমেলাকে বাংলার প্রাণের মেলা আখ্যায়িত করা হয়।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৬০ সাল থেকে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন শাখায় বছরে ৯ জনকে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। ১৯৮৬ সাল থেকে বছরে দুজনকে এই পুরস্কার দেওয়ার নিয়ম করা হয়। পরে ২০০৯ সাল থেকে চারটি শাখায় পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৮৫, ১৯৯৭ ও ২০০০ সালে কাউকেই এই পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
ভাষার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে আমরা প্রাণ দিয়েছি। এর স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই ভাষার গুণগত মান যেন ঠিক থাকে, এই ভাষায় যেন উন্নতমানের সাহিত্য চর্চা হয়, এই ভাষা দিয়ে আজ আমরা বিশ্বে সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে পরিচিত। এই ভাষার মান বজায় রাখার দায়িত্ব বাংলা একাডেমীর।
ফাহমিদা আক্তার রিম্পি
No comments