প্রসাধন বাণিজ্য-সৌন্দর্যের বিনিময়ে স্বাস্থ্যহানি?
১৯৯১ সালে 'দ্য বিউটি মিথ :হাউ ইমেজেস অব বিউটি আর ইউজ্ড এগেইনস্ট উইমেন' নামে একটি বই লিখেছেন মার্কিন লেখক নাওমি উলফ। এই বইয়ে তিনি দেখিয়েছেন, সৌন্দর্যের প্রতি নারীর আকর্ষণ কাজে লাগিয়ে কীভাবে বিশ্বব্যাপী সৌন্দর্য-বাণিজ্যের পসার তৈরি হয়েছে।
আকর্ষণীয় বলে অভিহিত শরীরের আকার, রঙ ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য। এ বাণিজ্য শুধু প্রসাধনী বা ওষুধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর বিস্তৃতি মেডিকেল সামগ্রী ও অস্ত্রোপচার বাণিজ্য পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী নারীরা আদর্শ সৌন্দর্য বলে একটি ধারণার শিকার। আর এই আদর্শ সৌন্দর্য আয়ত্ত করিয়ে দিতে তাদের হাতের নাগালে থাকে বিপুল প্রসাধনসামগ্রী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত কোনো প্রসাধনই রঙ ফর্সা করতে পারে বলে প্রমাণিত হয়নি। অথচ অনেক প্রসাধনই বিজ্ঞাপনে উজ্জ্বলতর বা অধিকতর ফর্সা রঙের প্রতিশ্রুতি দেয়। আর নারীরাও ফর্সা রঙকে শ্রেয়তর মনে করে এসব প্রসাধন ব্যবহারে আগ্রহী হয়। বলাবাহুল্য, নামকরা ব্র্যান্ডের বহু প্রসাধনসামগ্রীও ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়েছে। এমনকি পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমে ফর্সা করে দেওয়া প্রসাধনসামগ্রীর বিজ্ঞাপন বর্ণবাদী বলে আখ্যায়িত হয়েছে। কার্যত এসব বিজ্ঞাপন এখন খুব কমই প্রচারিত হয়। প্রসাধনসামগ্রীর প্রতি আমাদের দেশের ভোক্তা বিশেষত নারীদের তীব্র আকর্ষণ। আর ভোক্তাদের বিস্তার বিভিন্ন অর্থনৈতিক শ্রেণীতে। ক্রয়ক্ষমতা অনুসারে সবার নজরে আছে প্রসাধনী। নামকরা বিদেশি ব্র্যান্ডের দ্রব্যের পাশাপাশি আছে স্বীকৃত দেশীয় ব্র্যান্ডও। নিম্নবিত্তের নারীদের জন্য সস্তা ও ভেজাল প্রসাধনী। এসব প্রসাধনীতে ক্ষতিকর উপাদান তুলনামূলক বেশি। এগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হলেও আদপে ত্বকের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর ও অনেক রোগের কারণ। নিয়ম অনুসারে, ক্ষতিকর প্রসাধনী বাজারে অনুমোদন পাওয়া দূরের কথা, এগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হওয়ার কথা। এসব উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যত্যয় ঘটছে। সবার নাকের ডগায় ক্ষতিকর প্রসাধনীর রমরমা বাণিজ্য চলছে। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যমগুলোতেও প্রসাধনীর বিজ্ঞাপন কোনো বাছবিচার ছাড়াই প্রচারিত হচ্ছে। দ্রুত এ প্রবণতাগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। সরকারের তরফে ক্ষতিকর প্রসাধন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সব আয়োজন দ্রুত বন্ধের উদ্যোগই কাম্য। এ বিষয়ে ভোক্তাদেরও সচেতন করতে হবে। ক্ষতিকর প্রসাধনের বিজ্ঞাপন প্রচার না করে এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন করার প্রয়াসই গণমাধ্যমের কাছে কাম্য।
No comments