শিশু নির্যাতন-অমানবিকতার জবাব দিতে হবে
মোবাইল ফোনসেট চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহের বশে চাঁদপুরের ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের ঈদগাহ বাজারে দু'জন মানবশিশুর ওপর কী ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছে, মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত আলোকচিত্রটিতেও তা স্পষ্ট।
লোকালয়ে বন্য প্রাণী ধরা পড়লে দুষ্ট লোকেরা যেভাবে খোঁচাখুঁচির মাধ্যমে বিকৃত আনন্দ লাভ করে, বাজারের বেঞ্চের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা ১০-১১ বছরের শিশু দুটিকে ঘিরে থাকা তথাকথিত মানুষগুলোর অবয়বে তেমন নিষ্ঠুরতাই ফুটে উঠেছে। এই দৃশ্য আমাদের সভ্যতার মুখে চপেটাঘাতই বিবেচিত হবে। ওই দুই মানব সন্তানের চোখে যখন উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন থাকার কথা, সমাজের প্রভাবশালী কতিপয় 'মোবাইলওয়ালা'র কারণে তখন তাদের প্রাণ বাঁচানোর আকুতি জানাতে হচ্ছে। এর চেয়ে বেদনাদায়ক চিত্র আর কিছু হতে পারে না। কেবল শাস্তিদাতাদের প্রতি ক্ষোভ নয়, প্রকাশ্য দিবালোকে যারা এমন একটি ঘটনা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলতে দিয়েছে, তাদের মানবিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। অন্যায় যে করে, তার প্রতি আমাদের ধিক্কার অবধারিত; কিন্তু যারা অন্যায় দেখেও নির্লিপ্ত থাকে, তাদের প্রতিও করুণা ছাড়া আর কিছু বরাদ্দ থাকে না। কবির ভাষায় বলতে গেলে, অন্যায় সহ্যকারীকেও আমাদের ঘৃণা যেন তৃণসম দহন করে। এক শিশু ইসমাইলের মায়ের এই আক্ষেপের সঙ্গে আমরাও একমত যে, কেবল দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে বলেই বোধহয় তার সন্তানকে এমন নিগ্রহ সইতে হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। কারও প্রতি চুরিকর্মের সন্দেহ হলে, এর জন্য প্রচলিত আইনে প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। সমাজের দশজনে মিলে স্থানীয়ভাবেও বিচার সম্পন্ন করতে পারে। কিন্তু এমন ইতরোচিত কাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এমন অমানবিক ঘটনার পরও অপরাধীরা যদি বিনা দণ্ডে পার পেয়ে যায়, তাহলে আমাদের যে আরও বড় অন্যায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে, তাতে আর সন্দেহ কি?
No comments