বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নতুন সংযোগ-আবাসন শিল্প বাঁচাতেই হবে
বাংলাদেশের শহর কিংবা গ্রাম যেখানেই ব্যক্তিগত কিংবা সরকারি উদ্যোগে বসতবাড়ি কিংবা শিল্প-কারখানা নির্মিত হোক না কেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের দায়িত্ব বর্তায় রাষ্ট্রীয় ইউটিলিটি সার্ভিসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর। রাজধানীতে পানি সরবরাহের দায়ও প্রধানত সরকারের।
বহু বছর টেলিফোন ছিল সরকারের একচেটিয়া কর্তৃত্বে। মোবাইল ফোনে তার অবসান ঘটেছে। এখন ব্যক্তিগত কিংবা দাফতরিক প্রয়োজনে কেউ আর টিঅ্যান্ডটি লাইন পেতে সরকারি অফিসে ঘোরাঘুরি করে না। কারণ একটিই_ উপযুক্ত ও সহজ বিকল্প। কিন্তু রাজধানীতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহের বিকল্প নেই। ফ্ল্যাট কিংবা পৃথক বাড়ি_ সব মালিকেরই নির্ভরতা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর। সরকারের এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা প্রধানত সরবরাহে ঘাটতিজনিত। নতুন নতুুন বাড়ি-ফ্ল্যাট নির্মিত হওয়া নিঃসন্দেহে অগ্রগতির লক্ষণ। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগ যেমন রয়েছে, তেমনি মধ্যবিত্ত এবং এমনকি নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না মেলায় এই ব্যবসায়ীদের অস্তিত্বই বিপন্ন হতে চলেছে। শনিবার রাজধানীতে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান রিহ্যাবের কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, 'বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের অভাবে ২০ থেকে ২২ হাজার ফ্ল্যাট বর্তমানে খালি পড়ে আছে।' তাদের হিসাবে এখানে আবাসন ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ রয়েছে ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা। যারা বুকিং দিয়েছেন তাদের সম্মিলিত বিনিয়োগের পরিমাণ রিহ্যাব উল্লেখ করেনি, কিন্তু এটা অনেক বেশি হওয়ারই কথা। ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগও রয়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতির জন্য সরকারি সিদ্ধান্তে পাইপলাইনে গ্যাস ও নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান বন্ধ রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় রান্নার জন্য কাঠের লাকড়ি বিকল্প হতে পারে না। উপযুক্ত বিকল্প হতে পারে সিলিন্ডার গ্যাস বা এলপিজি। এ জন্য সরকারি সিদ্ধান্তও রয়েছে। কিন্তু রোববারেই সমকালে 'পাইপলাইনে সংযোগ বন্ধ : এলপি গ্যাসের দাম বেড়েই চলেছে' শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়েছে। আধুনিক সমাজে জীবনযাপনে বিদ্যুতের বিকল্প নেই। মোমবাতি বা কেরোসিনের কুপিতে লোডশেডিং থেকে সাময়িক নিষ্কৃতি মেলে, কিন্তু ইলেকট্রিক-ইলেকট্রনিক সুবিধাগুলো কীভাবে চলবে? বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাত এগিয়ে এসেছে এবং তাদের সাফল্যও রয়েছে। কিন্তু বিতরণ ব্যবস্থা সরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে। সঙ্গত কারণেই সমস্যার সমাধানের দায় প্রধানত সরকারের ওপর। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করতে না পারলে আবাসন শিল্পে বিপর্যয় অনিবার্য। এ খাতে যে হাজার হাজার পরিবার বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে তাদেরও কষ্টের শেষ থাকবে না। এটাও মনে রাখতে হবে, নতুন সংযোগ বন্ধ থাকায় আগের সংযোগ সুবিধা থাকা বাড়িগুলোর মালিকরা এ সুযোগে ভাড়া নির্ধারণে জুলুম করছেন। আমরা জানি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলেই এ গুরুতর সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। কিন্তু চুপচাপ বসে থাকারও সময় নেই। সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে গত চার বছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানোর দাবি অব্যাহতভাবে করা হচ্ছে এবং তা অমূলক নয়। এ অবস্থায় নতুন সংযোগ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার সঙ্গত বলে আমরা মনে করি। একই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংযোগ চাহিদা পূরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদে প্রস্তুতি থাকা চাই। এ জন্য বেসরকারি খাতের সহযোগিতা গ্রহণের বিকল্প নেই।
No comments