বিজয়ের নতুন ইতিহাস by মাসুদ পারভেজ
এনামুল হকের প্রতি বড় এক অবিচারই করা হলো বোধ হয়! নব্বইয়ের ঘর থেকে তিন অঙ্কে পৌঁছতে সময় নিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নার্ভাস নাইনটিজ থেকে সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে লাগল ২৩ বল।
এর আগে-পরে দলের স্বার্থ ভুলে ব্যাটিংয়ের দায়ে তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ফেলা হচ্ছিল প্রায়। যে দলের ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংসকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে না পারার জন্য অভিযুক্ত হন বেশির ভাগ সময়, সেই দলেরই একজন কৃতিত্বের সঙ্গে সেটি করার পরও ভক্তদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ভরে উঠছিল ক্রিকইনফোর লাইভ কমেন্ট্রির পেজ। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে প্রেসবক্স- সর্বত্রই মৃদু সমালোচনা।
দিনের শেষে সেগুলো নিতান্ত অর্থহীনই হয়ে গেল। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং তাদের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা। একা এনামুলই যেখানে করেছেন ১২০ রান, সেখানে পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল মাত্র ১৩২! ২৯৩ রানের টার্গেট তাড়া করতে নামা ক্যারিবীয়দের তাই দিনের শেষে 'কেনিয়া' কিংবা 'স্কটল্যান্ড'ই মনে হলো যেন। হওয়ারই কথা। কারণ ২০০৬ সালে ঢাকায় স্কটিশদের ১৪৬ রানে হারানোই এত দিন ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়। টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে তেমন জয় একই বছর ভারতের জয়পুরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল ১০১ রানে। আর র্যাংকিংয়ের সেরা আট দলের বিপক্ষে বড় জয়টা আরো কম রানের। ২০০৭ বিশ্বকাপে গায়ানার প্রভিডেন্সে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল ৬৭ রানে। কাল এসব কিছুকে ছাপিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ড্যারেন সামিদের দিল ১৬০ রানে হারের লজ্জা। তাঁরা ৩১.১ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই অর্থাৎ বিকেল সাড়ে ৩টায় খেলা শেষ। ২০০৬ সালে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে কেনিয়ার সঙ্গেও তো এমনই ছেলেখেলা করেছিল বাংলাদেশ!
যদিও এ ম্যাচে প্রবলভাবেই ঘুরে দাঁড়ানোর হুঙ্কার দিয়ে রেখেছিলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক সামি। আগের ম্যাচের অভিজ্ঞতায় এবার টস জিতে বাংলাদেশকে পাঠালেন ব্যাট করতে। শুরুটা যেন প্রথম ওয়ানডের ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতোই। অফস্টাম্পের বাইরের বল টেনে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে এলেন তামিম ইকবাল (৫)। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের পরও (৪৯ রানে ৫ উইকেট) দিনের শেষে একদমই আলোচনায় না থাকা রবি রামপালের শর্ট বল সামলাতে না পেরে একটু পরেই সাজঘরের পথ ধরলেন প্রথম ম্যাচের আরেক হাফ সেঞ্চুরিয়ান নাঈম ইসলামও (৬)। ২১ রানেই তাঁদের দুজনকে হারিয়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ অন্য চেহারায় দেখা দিতে থাকল এরপর থেকেই। যখন আগের ম্যাচেই অভিষিক্ত এনামুলের সঙ্গে এসে যোগ দিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
ক্যারিবীয় পেসাররা শর্ট বলে তাঁদের অপ্রস্তুত করে যেতে চাইলেন। কিন্তু তাঁরাও পাল্টা আক্রমণে রানের চাকায় যথেষ্ট গতি রাখলেন। ২০০৬ সালে ফতুল্লায় কেনিয়ার বিপক্ষে হাবিবুল বাশার আর রাজিন সালেহর যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ডও (১৭৫ রানের) প্রায় টপকে যাচ্ছিলেন। রামপালের বলে মুশফিকের বিদায়ে (৮৭ বলে ৭৯) সেটি না হলেও তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ ১৭৪ রানের পার্টনারশিপটা ঠিকই হলো। হওয়ার পরে নব্বই থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে এনামুলের একটু বিলম্ব। ১৩৮ বলে সেটি হয়ে যাওয়ার পরই সময়ের দাবি মেটাতে থাকলেন এনামুল। আন্দ্রে রাসেলের এক ওভারেই দুটি ছক্কা আর এক বাউন্ডারিসহ তুললেন ২০ রান। আগের ম্যাচে অভিষেক হলেও ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পাওয়া মমিনুল হকও (২৯ বলে ৩১) দলের স্কোর যতটা সম্ভব এগিয়ে নেওয়ার কাজে লাগলেন। ১৩ বাউন্ডারি আর দুই ছক্কায় ১২০ রানের ইনিংস খেলে অনেকটাই পুষিয়ে দেওয়া এনামুলের সঙ্গে শেষদিকে যোগ হলো মাশরাফি বিন মর্তুজার ৬ বলে ১৮ রানের ছোট্ট এক ঝড়ও।
সুবাদে বাংলাদেশ যে জায়গায় গেল, সেখানে পৌঁছানোর জন্য ক্যারিবীয় শিবির থেকে ক্রিস গেইলের কাছে আরেকটি ঝড়ের প্রত্যাশাই ছিল। সে ঝড় শুরুর ইঙ্গিতও দিচ্ছিলেন মাশরাফিকে মারা ছক্কায়। কিন্তু সেই মাশরাফির বলেই গেইল (১৫) আরেকটি ব্যর্থতার গল্প লিখে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগেই ধ্বংসযজ্ঞে নেমে পড়েছেন সোহাগ গাজী। টেস্টের মতো এবার ওয়ানডেতেও এ অফস্পিনারকে দিয়েই বোলিং ওপেন করান অধিনায়ক। ওপেনার লে-ল সিমন্সকে ফিরিয়ে শুরু করা সোহাগের সঙ্গে আগের ম্যাচের মতোই এসে যোগ দিলেন বাঁ হাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাকও। টপাটপ উইকেট পড়তে থাকল। সোহাগ (৩/২১) আর রাজ্জাকের (৩/১৯) মধ্যে অলিখিত এক লড়াইও যেন চলতে থাকল। যে লড়াইয়ের শেষটা হলো সোহাগের বলে। যখন শর্ট মিড অফে 'অ্যাক্রোবেটিক' কায়দায় সুনীল নারিনের ক্যাচ নিলেন তামিম ইকবাল। ক্যারিবীয়রা তখন ১৩২ রানে, এনামুলের একারই খেলা ১২০ রানের ইনিংসের চেয়ে একটু বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে ১৬০ রান কম!
এর পরও কি বলা যাবে যে এনামুলের প্রতি অবিচার হয়নি!
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৯২/৬ ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩১.১ ওভারে ১৩২
ফল : বাংলাদেশ ১৬০ রানে জয়ী
দিনের শেষে সেগুলো নিতান্ত অর্থহীনই হয়ে গেল। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং তাদের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা। একা এনামুলই যেখানে করেছেন ১২০ রান, সেখানে পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল মাত্র ১৩২! ২৯৩ রানের টার্গেট তাড়া করতে নামা ক্যারিবীয়দের তাই দিনের শেষে 'কেনিয়া' কিংবা 'স্কটল্যান্ড'ই মনে হলো যেন। হওয়ারই কথা। কারণ ২০০৬ সালে ঢাকায় স্কটিশদের ১৪৬ রানে হারানোই এত দিন ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়। টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে তেমন জয় একই বছর ভারতের জয়পুরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল ১০১ রানে। আর র্যাংকিংয়ের সেরা আট দলের বিপক্ষে বড় জয়টা আরো কম রানের। ২০০৭ বিশ্বকাপে গায়ানার প্রভিডেন্সে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল ৬৭ রানে। কাল এসব কিছুকে ছাপিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ড্যারেন সামিদের দিল ১৬০ রানে হারের লজ্জা। তাঁরা ৩১.১ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই অর্থাৎ বিকেল সাড়ে ৩টায় খেলা শেষ। ২০০৬ সালে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে কেনিয়ার সঙ্গেও তো এমনই ছেলেখেলা করেছিল বাংলাদেশ!
যদিও এ ম্যাচে প্রবলভাবেই ঘুরে দাঁড়ানোর হুঙ্কার দিয়ে রেখেছিলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক সামি। আগের ম্যাচের অভিজ্ঞতায় এবার টস জিতে বাংলাদেশকে পাঠালেন ব্যাট করতে। শুরুটা যেন প্রথম ওয়ানডের ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতোই। অফস্টাম্পের বাইরের বল টেনে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে এলেন তামিম ইকবাল (৫)। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের পরও (৪৯ রানে ৫ উইকেট) দিনের শেষে একদমই আলোচনায় না থাকা রবি রামপালের শর্ট বল সামলাতে না পেরে একটু পরেই সাজঘরের পথ ধরলেন প্রথম ম্যাচের আরেক হাফ সেঞ্চুরিয়ান নাঈম ইসলামও (৬)। ২১ রানেই তাঁদের দুজনকে হারিয়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ অন্য চেহারায় দেখা দিতে থাকল এরপর থেকেই। যখন আগের ম্যাচেই অভিষিক্ত এনামুলের সঙ্গে এসে যোগ দিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
ক্যারিবীয় পেসাররা শর্ট বলে তাঁদের অপ্রস্তুত করে যেতে চাইলেন। কিন্তু তাঁরাও পাল্টা আক্রমণে রানের চাকায় যথেষ্ট গতি রাখলেন। ২০০৬ সালে ফতুল্লায় কেনিয়ার বিপক্ষে হাবিবুল বাশার আর রাজিন সালেহর যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ডও (১৭৫ রানের) প্রায় টপকে যাচ্ছিলেন। রামপালের বলে মুশফিকের বিদায়ে (৮৭ বলে ৭৯) সেটি না হলেও তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ ১৭৪ রানের পার্টনারশিপটা ঠিকই হলো। হওয়ার পরে নব্বই থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে এনামুলের একটু বিলম্ব। ১৩৮ বলে সেটি হয়ে যাওয়ার পরই সময়ের দাবি মেটাতে থাকলেন এনামুল। আন্দ্রে রাসেলের এক ওভারেই দুটি ছক্কা আর এক বাউন্ডারিসহ তুললেন ২০ রান। আগের ম্যাচে অভিষেক হলেও ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পাওয়া মমিনুল হকও (২৯ বলে ৩১) দলের স্কোর যতটা সম্ভব এগিয়ে নেওয়ার কাজে লাগলেন। ১৩ বাউন্ডারি আর দুই ছক্কায় ১২০ রানের ইনিংস খেলে অনেকটাই পুষিয়ে দেওয়া এনামুলের সঙ্গে শেষদিকে যোগ হলো মাশরাফি বিন মর্তুজার ৬ বলে ১৮ রানের ছোট্ট এক ঝড়ও।
সুবাদে বাংলাদেশ যে জায়গায় গেল, সেখানে পৌঁছানোর জন্য ক্যারিবীয় শিবির থেকে ক্রিস গেইলের কাছে আরেকটি ঝড়ের প্রত্যাশাই ছিল। সে ঝড় শুরুর ইঙ্গিতও দিচ্ছিলেন মাশরাফিকে মারা ছক্কায়। কিন্তু সেই মাশরাফির বলেই গেইল (১৫) আরেকটি ব্যর্থতার গল্প লিখে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগেই ধ্বংসযজ্ঞে নেমে পড়েছেন সোহাগ গাজী। টেস্টের মতো এবার ওয়ানডেতেও এ অফস্পিনারকে দিয়েই বোলিং ওপেন করান অধিনায়ক। ওপেনার লে-ল সিমন্সকে ফিরিয়ে শুরু করা সোহাগের সঙ্গে আগের ম্যাচের মতোই এসে যোগ দিলেন বাঁ হাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাকও। টপাটপ উইকেট পড়তে থাকল। সোহাগ (৩/২১) আর রাজ্জাকের (৩/১৯) মধ্যে অলিখিত এক লড়াইও যেন চলতে থাকল। যে লড়াইয়ের শেষটা হলো সোহাগের বলে। যখন শর্ট মিড অফে 'অ্যাক্রোবেটিক' কায়দায় সুনীল নারিনের ক্যাচ নিলেন তামিম ইকবাল। ক্যারিবীয়রা তখন ১৩২ রানে, এনামুলের একারই খেলা ১২০ রানের ইনিংসের চেয়ে একটু বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে ১৬০ রান কম!
এর পরও কি বলা যাবে যে এনামুলের প্রতি অবিচার হয়নি!
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৯২/৬ ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩১.১ ওভারে ১৩২
ফল : বাংলাদেশ ১৬০ রানে জয়ী
No comments