'দুদের ছোলঢ্যার প্যাটের আগুন নিম্বামু ক্যামনে' by তায়েফুর রহমান
গতকাল রবিবার, বেলা আনুমানিক ১২টা। শীতের চাদর খুলে মাথার ওপর উত্তাপ ছড়ানোর অপেক্ষায় সূর্য। আর সেই সূর্যের নিচে নিশ্চিন্তপুর বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অপেক্ষায় হাজারো মানুষ। তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই ছোট্ট শিশুকোলে এগিয়ে এলেন এক নারী।
রোদের আঁচ থেকে শিশুটিকে বাঁচানোর ধরনই বলে দেয় ওই শিশুর মা তিনি। রোদে পোড়ার কথা উঠতেই বললেন, 'আগুনোত পুড়্যা অভ্যাস আছে। গারমেঞ্চের আগুনোত থ্যাকাও ব্যাঁচিছি। কিন্তু দুদের ছোলঢ্যার (দুধের ছেলেটার) প্যাটের আগুন নিম্বামু ক্যামনে?' ততক্ষণে পানিতে চোখ ভরে এসেছে তাঁর। চোখ মুছতে ছেলের মাথার ওপর থাকা শাড়ির আঁচল টানতে গিয়েও সূর্যের দিকে চেয়ে হাত সরিয়ে নিলেন। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, 'দোকানের ব্যাঁকি, বাড়িআলার ভাড়া তো দিতে পারিইনি। ছোলঢ্যার দুদের যে সাড়ে পাশ শো ট্যাকা ল্যাগবে সেট্যার কোনো জোগাড় হয়নি। এগারো মাসের ছোলঢ্যা ভাত খ্যাতে খ্যাতে অসুকোত পড়িছে।'
এ কথা শুধু ফেরদৌসী বেগমের নয়, আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের হাজারো শ্রমিকের কথাই যেন বেরিয়ে এলো তাঁর কণ্ঠে।
ফেরদৌসী জানান, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থানার চান্দইর গ্রামে তাঁর বাড়ি। স্বামীর বেকারত্বের কারণে ঢাকায় এসে দুই বছর আগে চাকরি নেন আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে। মাস শেষে চাকরি আর ওভারটাইমের যে ছয়-সাত হাজার টাকা পেতেন তা দিয়েই কোনোমতে চলত তাঁর পাঁচজনের সংসার। ২৪ নভেম্বর রাতে আগুন-যুদ্ধে জিতে গেলেও পেরে উঠছেন না জীবন-যুদ্ধে। কারখানার সঙ্গে যেন পুড়েছে তাঁর কপালও। এখন প্রতিদিন স্থানীয় নিশ্চিন্তপুর বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে বসে থাকেন বকেয়া বেতন-ভাতার টাকা পাওয়ার আশায়। যে স্কুলে বড় ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিলেন অনেক বড় মানুষ বানানোর আশায়, সেই স্কুলের মাঠেই এখন তাঁর নিরন্তর প্রতীক্ষা।
ফেরদৌসী আরো জানান, অন্য কারখানায় চাকরি খুঁজতেও যেতে পারছেন না, তাজরীনের মালিক তো আর তাঁকে খুঁজে বের করে পাওনা টাকা দেবেন না। তাই সব সময় কারখানার আশপাশেই থাকেন তিনি।
তাজরীনের আরেক শ্রমিক মোরশেদা আক্তার বললেন, 'বাড়িওয়ালা তো ভাড়ার জন্য দেরি করবই না, উল্টা কইছে বাড়িতে থাকতে ওইলে এই মাস থেইকা দুই শো ট্যাকা বাড়ায়া দিতে ওইবো।'
হাতভরা পোড়া ঘা নিয়ে অপেক্ষায় থাকা আরিফা বললেন, 'কত মানুষ কত কিছু কইলো, কত কিছু লেখলো। কিন্তুক কেউ তো কোনো ট্যাকা-পইসা দিলো না। হাতের চিকিৎসা তো নিজেরই করতে ওইতাছে। আর ছোড বুইনডা তো অহনো ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালেই পইড়া আছে।'
হোসনেয়ারা বেগম নামের অপর এক শ্রমিক জানান, অগ্নিকাণ্ডের রাতে তাজরীনের তিনতলা থেকে নামার সময় তিনি হাত, পা ও গলায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন। গত শনিবার তাঁদের কয়েকজন শ্রমিককে স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন বিজিএমইএর কর্মকর্তারা। ওই দিন বিকেলে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হলেও ডাক্তার না দেখিয়েই ফেরত পাঠানো হয়েছে নিশ্চিন্তপুরে। কেনই বা তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হলো আর ফেরতই বা কেন পাঠানো হলো, কিছুই বোঝেননি তিনি। তাই আগুন লাগার পরদিন থেকে এ পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটাই তাঁর চোখে 'তামাশা'।
এ কথা শুধু ফেরদৌসী বেগমের নয়, আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের হাজারো শ্রমিকের কথাই যেন বেরিয়ে এলো তাঁর কণ্ঠে।
ফেরদৌসী জানান, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থানার চান্দইর গ্রামে তাঁর বাড়ি। স্বামীর বেকারত্বের কারণে ঢাকায় এসে দুই বছর আগে চাকরি নেন আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে। মাস শেষে চাকরি আর ওভারটাইমের যে ছয়-সাত হাজার টাকা পেতেন তা দিয়েই কোনোমতে চলত তাঁর পাঁচজনের সংসার। ২৪ নভেম্বর রাতে আগুন-যুদ্ধে জিতে গেলেও পেরে উঠছেন না জীবন-যুদ্ধে। কারখানার সঙ্গে যেন পুড়েছে তাঁর কপালও। এখন প্রতিদিন স্থানীয় নিশ্চিন্তপুর বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে বসে থাকেন বকেয়া বেতন-ভাতার টাকা পাওয়ার আশায়। যে স্কুলে বড় ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিলেন অনেক বড় মানুষ বানানোর আশায়, সেই স্কুলের মাঠেই এখন তাঁর নিরন্তর প্রতীক্ষা।
ফেরদৌসী আরো জানান, অন্য কারখানায় চাকরি খুঁজতেও যেতে পারছেন না, তাজরীনের মালিক তো আর তাঁকে খুঁজে বের করে পাওনা টাকা দেবেন না। তাই সব সময় কারখানার আশপাশেই থাকেন তিনি।
তাজরীনের আরেক শ্রমিক মোরশেদা আক্তার বললেন, 'বাড়িওয়ালা তো ভাড়ার জন্য দেরি করবই না, উল্টা কইছে বাড়িতে থাকতে ওইলে এই মাস থেইকা দুই শো ট্যাকা বাড়ায়া দিতে ওইবো।'
হাতভরা পোড়া ঘা নিয়ে অপেক্ষায় থাকা আরিফা বললেন, 'কত মানুষ কত কিছু কইলো, কত কিছু লেখলো। কিন্তুক কেউ তো কোনো ট্যাকা-পইসা দিলো না। হাতের চিকিৎসা তো নিজেরই করতে ওইতাছে। আর ছোড বুইনডা তো অহনো ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালেই পইড়া আছে।'
হোসনেয়ারা বেগম নামের অপর এক শ্রমিক জানান, অগ্নিকাণ্ডের রাতে তাজরীনের তিনতলা থেকে নামার সময় তিনি হাত, পা ও গলায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন। গত শনিবার তাঁদের কয়েকজন শ্রমিককে স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন বিজিএমইএর কর্মকর্তারা। ওই দিন বিকেলে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হলেও ডাক্তার না দেখিয়েই ফেরত পাঠানো হয়েছে নিশ্চিন্তপুরে। কেনই বা তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হলো আর ফেরতই বা কেন পাঠানো হলো, কিছুই বোঝেননি তিনি। তাই আগুন লাগার পরদিন থেকে এ পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটাই তাঁর চোখে 'তামাশা'।
No comments