পিছু হটলে চলবে না by রূপা মাহমুদ

 সম্প্রতি সরকারের ঘোষিত নারী উন্নয়ন নীতিকে পবিত্র কোরআনবিরোধী আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে গত ৪ এপ্রিল ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। হরতাল চলাকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করানো হয় কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বিশ্বাস করে, নারীর চেয়ে পুরুষ শ্রেষ্ঠ। তাই পুরুষ তার শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করে নারীকে তার প্রাপ্য পাওনা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত করে তার ওপর কর্তৃত্ব ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে। এ ঘৃণ্য কাজের অগ্রভাগে রয়েছে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী। তারা নারী শব্দটির সঙ্গে দমন-পীড়ন পরমুখাপেক্ষী-দাসী ইত্যাদি শব্দ খুব পছন্দ করে। নারীর সঙ্গে উন্নয়ন শব্দটি শুনলেই তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।
তাই নারীনীতিতে কোরআনবিরোধী কিছু নেই_ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার একথা বলা সত্ত্বেও এবং অনেক আলেম-ওলামা সরকারের সঙ্গে একমত হওয়ার পরও ফজলুল হক আমিনীরা নারীনীতির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ এপ্রিল এক সভায় আমিনী বলেন, নারী উন্নয়নের নয়, নারীকে পুরুষ বানানোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তারা। নারীকে পুরুষ বানানো বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা বোঝা কঠিন নয়। ধর্মান্ধরা নারী নির্যাতনের পক্ষে। সে জন্য যৌতুকের কারণে যখন নারীর লাশ পড়ে ও সে লাঞ্ছিত হয় চরমভাবে, যখন এসিড নিক্ষেপ করে নারীর মুখ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, বখাটের অত্যাচার সইতে না পেরে কিশোরী-তরুণীরা আত্মহত্যা করে, যখন নারী ধর্ষণের শিকার হয় এমনকি কোলের বাচ্চা পর্যন্ত রেহাই পায় না ধর্ষকের থাবা থেকে, তখন এসবের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না আমিনীদের কাছ থেকে। ধর্মান্ধরা চায়, নারী তার ওপর চালানো দমন-পীড়ন এবং তাকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ইত্যাদি অন্যায় বিনা প্রতিবাদে মেনে নিয়ে কোনো রকম জীবন কাটিয়ে দেবে। কিন্তু নারীনীতির বাস্তবায়ন ঘটলে নারী অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সব অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারবে। নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের যে উঁচু দেয়ালটি রয়েছে তা ধীরে ধীরে ভেঙে ফেলার একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে নারীর ওপর আধিপত্য খাটিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা সহজ হবে না পুরুষের পক্ষে, যা সে সহ্য করতে পারবে না কিছুতেই। তাই নীতিমালা বাতিল করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে আমিনীরা। এ অপকর্মে তারা পাশে পেয়েছে বিএনপিকে। বিএনপি ২০০১ সালে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করে ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের করা নারীনীতিটি গোপনে বদলে ফেলে। ফলে নারী এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রণীত নীতিমালাটি নারীর পিছিয়ে পড়ার নীতিমালায় পরিণত হয়। বিএনপি এবারও আমিনীর ডাকা হরতালে সমর্থন দিয়ে নারীর স্বার্থের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অথচ বিএনপির নারী চেয়ারপারসনসহ সব নেতার মনে রাখা দরকার, বর্তমানে দেশের অর্ধেকেরও বেশি ভোটার নারী। তাই নারী প্রগতির শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নারীর সঙ্গে শত্রুতা করা থেকে বিরত থেকে তাদের উচিত, নারীর দাবি-দাওয়ার প্রতি সম্মান দেখানো, নারীনীতির পক্ষে কথা বলা।
আবর্জনা সময়মতো পরিষ্কার না করলে তা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে মানুষের বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা এ আবর্জনার সঙ্গে তুলনীয়। তারা ধর্মের নামে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, মানুষের অগ্রগতিতে বাধা দেয়। তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়। আমিনী ও তার সঙ্গী-সাথীদের শক্ত হাতে দমন করে দ্রুত নারীনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে। এবার যদি সরকার তাদের হুঙ্কারে ভীত হয়ে নারীনীতি বাস্তবায়ন থেকে পিছু হটে তাহলে আর কখনোই নারীনীতি আলোর মুখ দেখবে না। সংবিধানে উলি্লখিত নারী-পুরুষের সমঅধিকারের বিষয়টি কেবল কথার কথা হয়েই থাকবে। নারী সমাজ পেছনে পড়ে থাকবে চিরদিন, যা হবে দেশের জন্য অকল্যাণকর।
 

No comments

Powered by Blogger.