পবিত্র কোরআনের আলো-সত্য থেকে আংশিক বিচ্যুত হয়ে আমল না করার নির্দেশ
৯। ওয়া লায়িন আযাক্ব্নাল ইনছা-না মিন্না রাহ্মাতান ছুম্মা নাযা'না-হা- মিনহু; ইন্নাহূ লাইয়াঊছুন কাফূর। ১০। ওয়া লায়িন আযাক্ব্না-হু না'মা-আ বা'দা দ্বার্রা-আ মাচ্ছাত্হু লাইয়াক্বূলান্না যাহাবাচ্ছায়্যিআ-তু 'আন্নী; ইন্নাহূ লাফা-রিহুন ফাখূর।
১১। ইল্লাল্লাযীনা ছ্বাবারূ ওয়া 'আমিলুচ্ছ্বা-লিহ্বাতি; উলা-য়িকা লাহুম্ মাগ্ফিরাতন ওয়া আজরুন কাবীর।১২। ফালাআ'ল্লাকা তারিকুম্ বা'দ্বা মা- ইঊহ্বা- ইলাইকা ওয়া দ্বা-য়িক্বুম্ বিহী ছ্বাদরুকা আন ইয়্যাক্বূলূ লাও-লা- উনযিলা 'আলাইহি কানযুন আও জা-আমা'আহূ মালাক; ইন্নামা আনতা নাযীর; ওয়াল্লা-হু 'আলা- কুলি্ল শাইয়িন ওয়াকীল।
[সুরা : হুদ, আয়াত : ০৯-১২]
অনুবাদ : ৯। যখন আমি মানুষকে সদয় হয়ে আমার অনুগ্রহ আস্বাদন করাই এবং পরে (সংগত কারণে) তা প্রত্যাহার করি, তখন সে হতাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়।
১০। আর যখন দুঃখকষ্টে নিমজ্জিত থাকার পর তাকে নিয়ামতরাজি আস্বাদন করাই, তখন সে বলে আমার সব অমঙ্গল কেটে গেছে, এখন আমি সফল। তখন সে উৎফুল্ল হয়ে আত্ম-অহমিকা প্রদর্শন করতে থাকে।
১১। তবে যারা ধৈর্যধারণ করে এবং সৎকর্মশীল হয়, তারা এ রকম নয়। তারা মাগফিরাত ও মহা প্রতিদান লাভ করবে।
১২। (হে নবী!) তবে কি আপনি আপনার প্রতি যে ওহি নাজিল করা হয়েছে, তার কিছু অংশ ছেড়ে দেবেন? (অর্থাৎ কাফেররা তো আপনাকে এ প্রস্তাবই দিচ্ছে)। আর তারা যে বলে, তার অর্থাৎ আপনার প্রতি কোনো ধন-ভাণ্ডার অবতীর্ণ হলো না কেন; কিংবা আপনার সঙ্গে কোনো ফেরেশতা এলো না কেন? এ কারণে সম্ভবত আপনার অন্তর সংকুচিত হয়। প্রকৃত অর্থে আপনি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। প্রকৃত ক্ষমতা আল্লাহর হাতে এবং তিনিই তা সম্পাদন করেন।
ব্যাখ্যা : ৯, ১০ ও ১১ নম্বর আয়াতে বেশির ভাগ মানুষের এমন একটা স্বভাবের কথা বলা হয়েছে যে তারা অনেক সময় আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যায়। তাদের কাছ থেকে যখন নিয়ামত উঠিয়ে নেওয়া হয়, তখন তারা হতাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়। আবার যখন দুঃখকষ্টের পর তাদের সুখ-শান্তি দান করা হয়, তখন তারা উৎফুল্ল হয়ে আত্ম-অহমিকা প্রদর্শন করতে থাকে; আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করতে ভুলে যায়। তবে সব মানুষ আবার এ রকম হয় না। তারা ধৈর্যের সঙ্গে সৎকর্ম করে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে। আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত ও মহা প্রতিদানের সুসংবাদ দান করছেন।
১২ নম্বর আয়াতের শানেনুজুল এ রকম_মুশরিকরা নবী (সা.)-কে বলত, আপনি আমাদের উপাস্য মূর্তিদের সমালোচনা ত্যাগ করুন, তাহলে আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো বিবাদ থাকবে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহানবী (সা.)-কে বলা হচ্ছে, আপনার পক্ষে তো সম্ভব নয় যে মুশরিকদের খুশি করতে আপনার প্রতি নাজিল করা ওহির অংশবিশেষ ছেড়ে দেবেন। সুতরাং তাদের এ জাতীয় কথায় আপনি প্রভাবিত হবেন না, মন খারাপও করবেন না। আপনার কাজ হলো মানুষকে সত্য সম্পর্কে অবহিত করা। কে মানল বা না মানল, তা তাদের ব্যাপার। সে জন্য আপনাকে কোনো রকম জবাবদিহি করতে হবে না। অন্যদিকে এই আয়াতে মুশরিকরা নবী (সা.)-কে আল্লাহ কেন ধনভাণ্ডার দিয়ে পাঠালেন না, এ রকম ভ্রান্ত প্রশ্ন যে তুলেছে, ওর জবাব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাঁর নবীকে পাঠিয়েছেন স্বাভাবিক জীবন দিয়ে, সাধারণ মানুষের সঙ্গী করে। অলৌকিক ধনভাণ্ডারের প্রশ্ন তো অবান্তর। এ ছাড়া নবীর সঙ্গে ফেরেশতা পাঠানোর প্রশ্নও অবান্তর। এসব প্রশ্ন কেবল বিভ্রান্তরাই তুলতে পারে। কারণ তারা সত্য ও ন্যায়কে অনুসন্ধান করতে জানে না, শুধু ভাঁওতাবাজির ভেতরে ঘুরপাক খায়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments