স্মরণ-গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী by শরাফত হোসেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাঁর পথ অনুসরণ করে রাজনীতিতে পদচারণ করেন, যিনি গণতন্ত্রের মানসপুত্র হিসেবে আখ্যায়িত হন, শেখ মুজিবের স্বপ্নের বাংলা, আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর কদর কই? বলছিলাম ভারত ভাগের আগে ভারত ও পাকিস্তানের পাশাপাশি অখণ্ড স্বাধীন বাংলা নামে একটি
ডমিনিয়ন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন যিনি, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কথা। জন্ম ১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে। পরিবারের সদস্যরা ভারতের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের প্রথা হিসেবে উর্দুতে কথা বলতেন। কিন্তু প্রথা ভেঙে সোহরাওয়ার্দী নিজের উদ্যোগে বাংলা ভাষা শিখে, বাংলার চর্চা করেছিলেন। বাকস্বাধীনতা আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি তাঁর আস্থা ও বিশ্বাস অত্যন্ত স্বচ্ছ। ফলে তাঁরই সরকারের সময় পত্রিকাগুলো সরকারের কঠোর সমালোচনার সুযোগ পেয়েছিল। তিনি মন্তব্য করেন, সরকারের ত্রুটি না থাকলে সংবাদপত্র বলার সুযোগ পেত না। আর এই উদার নীতি ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তিনি স্থাপন করেন বিরল দৃষ্টান্ত। মহান এই নেতার শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায়। এরপর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে যুক্তরাজ্যে অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি নেন। এখানেই আইন বিষয়ে লেখাপড়া করে ১৯২১ সালে কলকাতায় এসে যোগ দেন আইন পেশায়। রাজনীতি শুরু করেন ১৯২৩ সালে চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টিতে যোগ দিয়ে। ১৯৩৬ সালের প্রথম দিকে ইনডিপেনডেন্ট মুসলিম পার্টি নামে একটি দল গঠন করেন, শেষের দিকে দলটি বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সঙ্গে এক হয়ে গেলে তিনি বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালের শেষ দিক পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। ওই বছর গঠিত খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রিসভায় তিনি অন্তর্ভুক্ত হন। সে বছরই দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে উল্লেখ আছে, 'এই সময় শহীদসাহেব লঙ্গরখানা খোলার হুকুম দিলেন। আমিও লেখাপড়া ছেড়ে দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়লাম।' তিনি রাতারাতি বিরাট সিভিল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্ট গড়ে তুললেন। 'কন্ট্রোল' দোকান খোলার বন্দোবস্ত করলেন। গ্রামে গ্রামে লঙ্গরখানা করার হুকুম দিলেন। দিলি্লতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ভয়াবহ অবস্থার কথা জানালেন এবং সাহায্য দিতে বললেন। ১৯৪৬ সালের ২৯ জুলাই বোম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগ সম্মেলনে পাকিস্তান অর্জনের জন্য প্রয়োজন হলে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম করা হবে বলে প্রস্তাব গৃহীত হয়। এদিন চরমপন্থীদের প্ররোচনায় কলকাতায় ভয়াবহ সাম্প্র্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়, দাঙ্গায় মুসলমানরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁর নিজের জীবন বিপন্ন করে দাঙ্গা উপদ্রুত অঞ্চলে যান এবং দুর্গতদের সাহায্য করেন। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলার কথা চিন্তা করতে থাকেন। ১৯৪৭ সালের ৯ এপ্রিল তিনি অখণ্ড সার্বভৌম বাংলার প্রস্তাব করেন। সর্বস্তরের জনসাধারণের স্বার্থে তাঁর জীবন ছিল নিবেদিত। জনগণের প্রতি অসীম ভালোবাসা এবং গণতন্ত্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাই ছিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আজ ৫ ডিসেম্বর মহান এ নেতার মৃত্যু দিবসে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
শরাফত হোসেন
শরাফত হোসেন
No comments