বহে কাল নিরবধি-দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ওবামার সফর : উদ্দেশ্য ও অর্জন by এম আবদুল হাফিজ
সম্প্রতি ছয় ঘণ্টারও কম সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমার সফর করেন। দীর্ঘ সামরিক শাসনের কারণে অচ্ছুৎ বলে পরিগণিত মিয়ানমারে প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় মেয়াদে এটিই ছিল ওবামার প্রথম গন্তব্য। স্বল্প সময়ের সফর হলেও এর তাৎপর্য ছিল গভীর।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ত্রিদেশীয় এ সফরের প্রথম দেশ হিসেবে মিয়ানমারের বাছাইও মিয়ানমার সফরের গুরুত্ব বহন করে। কেননা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের ভিত ওবামা রচনা করেছিলেন তাঁর মার্কিন শাসনের প্রথম মেয়াদেই। গণচীনের অব্যাহত উত্থানের বিপরীতে উলি্লখিত অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব ও প্রতিপত্তি সংহত করার এখনই সময়।
ক্ষমতাসীন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম সফরেই মিয়ানমারের মার্কিন-বৈরিতার অপবাদই শুধু ঘুচল না- যে যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন আগেও মিয়ানমারকে Outposts of Tyrrany বলে অভিহিত করত এবং দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির জন্য অসামান্য হুমকি ভাবত, তার অবসান ঘটল। অবশ্য এমন একটি পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছিল, যখন ২০১০ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে পাশ্চাত্যের চাপে মিয়ানমারের গণতন্ত্রবাদী নেত্রী অং সান সু চিকে দীর্ঘ অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছিল। দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন তখন সংস্কার ও বহির্বিশ্বের জন্য মিয়ানমারকে খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। তা সত্ত্বেও থেইন সেইনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সফরের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত ছিল। শুধু ওবামার একটি জাদুকরী সফরেই সেসব তিক্ততার অবসান হলো।
মিয়ানমারে রওনা হওয়ার আগে ওবামা বলেছিলেন, তিনি সেখানে যাচ্ছেন গত দুই বছরে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনে দেশটিকে তাঁর সফরের মধ্য দিয়ে পুরস্কৃত করতে, যাতে সামরিক শাসকরা আরো সংস্কারে উৎসাহী হন; কিন্তু সেখানকার গণতন্ত্রকর্মী ও মিয়ানমার থেকে নির্বাসিতরা এতে খুশি হয়নি। তারা বরং ওবামার স্বৈরতন্ত্র শাসিত মিয়ানমারের জন্য এত আতিশয্যের সমালোচনাই করেছে। তাদের দৃষ্টিতে সামরিক শাসকগোষ্ঠী মিয়ানমারের অগ্রগতিতে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের তাঁর সফরের মধ্য দিয়ে তাদের কৃতার্থ করার কোনো যুক্তি ছিল না। কেননা এ শাসকগোষ্ঠীর কারাগারে এখনো রাজনৈতিক বন্দিদের ভিড় এবং এ সরকার এখনো কাচিন জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নোংরা যুদ্ধে লিপ্ত।
এ ছাড়া দেশের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশে সাম্প্রতিককালে ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীগত যুদ্ধের আগুন জ্বলেছে, যার সব নৃশংসতাই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। গত জুন মাসে জাতিগোষ্ঠীগত দাঙ্গা রাখাইন প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে, শত শত নিরীহ সংখ্যালঘু তাতে প্রাণ হারায় এবং এক লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা রাষ্ট্রীয় আশ্রয় থেকে বিতাড়িত হয়। মিয়ানমার সরকারের অনিচ্ছা বা অক্ষমতাকেই পর্যবেক্ষকরা দাঙ্গার ব্যাপকতা এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী করছেন। কয়েক প্রজন্ম ধরে রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিতাড়ন ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতায় যে মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে, তা অবশ্যই মানবিকতাবর্জিত। এতে এ-ও প্রমাণিত হয়, সরকারের মৌন সম্মতি ছাড়া এমন অমানবিকতা ঘটতে পারে না। তাহলে এ নিষ্ঠুরতার প্রতীক সরকারকেই কি অবলাইজ করতে বারাক ওবামা জরুরি সফরে মিয়ানমারে তাঁর পদধূলি দিতে এসেছিলেন?
একই রকম উৎকণ্ঠা প্রকাশ পেয়েছে ওবামার দ্বিতীয় গন্তব্য কম্বোডিয়ায়, যেখানে তাঁর পদস্পর্শ হয়েছে রাজধানী নমপেনে অনুষ্ঠিত পূর্ব এশিয়া সামিট সম্মেলনে। যুক্তরাষ্ট্রের দুটি দলের কংগ্রেসম্যানসহ অনেকেই ওবামার দেশটির লৌহমানব হুন সেনের ঘনিষ্ঠ সানি্নধ্যকে সুনজরে দেখেননি। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার তো দূরের কথা, হুন সেন বজ্রমুষ্টিতে তিন যুগ ধরে কম্বোডিয়াকে তাঁর কর্তৃত্বাধীন রেখেছেন। শুধু ওবামার থাইল্যান্ড সফর নিয়ে কোনো বৈরী বিতর্ক নেই।
দেশ ও বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়লেও ওবামা সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন এই বিবেচনায় যে উত্থানরত গণচীন এবং কিছুদিন আগে পর্যন্ত চীনের প্রভাবাধীন মিয়ানমার, যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে সহায়ক ভূমিকায় পাওয়াকে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দিতে চায়। মিয়ানমারের চীনের সঙ্গে ১২৫০ মাইল সীমান্তও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ অঞ্চলে ওবামার সফরে মিয়ানমারকে প্রথম গন্তব্য নির্ধারণ করে ওবামা দেশটিকে সেই বার্তাই পেঁৗছে দিয়েছেন, যা মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীসহ গণতন্ত্রকামী নেত্রী অবশ্যই অনুধাবন করে থাকবেন।
এ ছাড়া এ সফর তাঁর আপস-নিষ্পত্তিকারী বৈদেশিক নীতি, যা ওবামা ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তাঁর প্রেসিডেন্সির উদ্বোধনী ভাষণে ব্যক্ত করেছিলেন। তাঁর পূর্বসূরি জর্জ বুশের বৈদেশিক নীতির তুলনায় এই নীতি বন্ধুসুলভ বলে ওবামা দাবি করেন। তাঁর সূচিত বৈদেশিক নীতির সঙ্গে সংহতি রেখেই ওবামার এই প্রথম সফর। ওবামার এ নমনীয় নীতি উত্তর কোরিয়া বা ইরানে সাফল্য পায়নি; কিন্তু মিয়ানমারের প্রতিক্রিয়ায় তা কিঞ্চিৎ হলেও সাফল্য পেয়েছে।ক্ষমতাসীন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম সফরেই মিয়ানমারের মার্কিন-বৈরিতার অপবাদই শুধু ঘুচল না- যে যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন আগেও মিয়ানমারকে Outposts of Tyrrany বলে অভিহিত করত এবং দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির জন্য অসামান্য হুমকি ভাবত, তার অবসান ঘটল। অবশ্য এমন একটি পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছিল, যখন ২০১০ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে পাশ্চাত্যের চাপে মিয়ানমারের গণতন্ত্রবাদী নেত্রী অং সান সু চিকে দীর্ঘ অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছিল। দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন তখন সংস্কার ও বহির্বিশ্বের জন্য মিয়ানমারকে খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। তা সত্ত্বেও থেইন সেইনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সফরের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত ছিল। শুধু ওবামার একটি জাদুকরী সফরেই সেসব তিক্ততার অবসান হলো।
মিয়ানমারে রওনা হওয়ার আগে ওবামা বলেছিলেন, তিনি সেখানে যাচ্ছেন গত দুই বছরে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনে দেশটিকে তাঁর সফরের মধ্য দিয়ে পুরস্কৃত করতে, যাতে সামরিক শাসকরা আরো সংস্কারে উৎসাহী হন; কিন্তু সেখানকার গণতন্ত্রকর্মী ও মিয়ানমার থেকে নির্বাসিতরা এতে খুশি হয়নি। তারা বরং ওবামার স্বৈরতন্ত্র শাসিত মিয়ানমারের জন্য এত আতিশয্যের সমালোচনাই করেছে। তাদের দৃষ্টিতে সামরিক শাসকগোষ্ঠী মিয়ানমারের অগ্রগতিতে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের তাঁর সফরের মধ্য দিয়ে তাদের কৃতার্থ করার কোনো যুক্তি ছিল না। কেননা এ শাসকগোষ্ঠীর কারাগারে এখনো রাজনৈতিক বন্দিদের ভিড় এবং এ সরকার এখনো কাচিন জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নোংরা যুদ্ধে লিপ্ত।
এ ছাড়া দেশের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশে সাম্প্রতিককালে ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীগত যুদ্ধের আগুন জ্বলেছে, যার সব নৃশংসতাই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। গত জুন মাসে জাতিগোষ্ঠীগত দাঙ্গা রাখাইন প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে, শত শত নিরীহ সংখ্যালঘু তাতে প্রাণ হারায় এবং এক লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা রাষ্ট্রীয় আশ্রয় থেকে বিতাড়িত হয়। মিয়ানমার সরকারের অনিচ্ছা বা অক্ষমতাকেই পর্যবেক্ষকরা দাঙ্গার ব্যাপকতা এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী করছেন। কয়েক প্রজন্ম ধরে রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিতাড়ন ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতায় যে মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে, তা অবশ্যই মানবিকতাবর্জিত। এতে এ-ও প্রমাণিত হয়, সরকারের মৌন সম্মতি ছাড়া এমন অমানবিকতা ঘটতে পারে না। তাহলে এ নিষ্ঠুরতার প্রতীক সরকারকেই কি অবলাইজ করতে বারাক ওবামা জরুরি সফরে মিয়ানমারে তাঁর পদধূলি দিতে এসেছিলেন?
একই রকম উৎকণ্ঠা প্রকাশ পেয়েছে ওবামার দ্বিতীয় গন্তব্য কম্বোডিয়ায়, যেখানে তাঁর পদস্পর্শ হয়েছে রাজধানী নমপেনে অনুষ্ঠিত পূর্ব এশিয়া সামিট সম্মেলনে। যুক্তরাষ্ট্রের দুটি দলের কংগ্রেসম্যানসহ অনেকেই ওবামার দেশটির লৌহমানব হুন সেনের ঘনিষ্ঠ সানি্নধ্যকে সুনজরে দেখেননি। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার তো দূরের কথা, হুন সেন বজ্রমুষ্টিতে তিন যুগ ধরে কম্বোডিয়াকে তাঁর কর্তৃত্বাধীন রেখেছেন। শুধু ওবামার থাইল্যান্ড সফর নিয়ে কোনো বৈরী বিতর্ক নেই।
দেশ ও বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়লেও ওবামা সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন এই বিবেচনায় যে উত্থানরত গণচীন এবং কিছুদিন আগে পর্যন্ত চীনের প্রভাবাধীন মিয়ানমার, যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে সহায়ক ভূমিকায় পাওয়াকে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দিতে চায়। মিয়ানমারের চীনের সঙ্গে ১২৫০ মাইল সীমান্তও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ অঞ্চলে ওবামার সফরে মিয়ানমারকে প্রথম গন্তব্য নির্ধারণ করে ওবামা দেশটিকে সেই বার্তাই পেঁৗছে দিয়েছেন, যা মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীসহ গণতন্ত্রকামী নেত্রী অবশ্যই অনুধাবন করে থাকবেন।
উল্লেখ্য, এর আগে দীর্ঘদিন অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে টলাতে পারেনি, বরং তারা গণতন্ত্রের আন্দোলনকে প্রায় স্তব্ধ করে দিয়েছিল এবং গণতন্ত্রের প্রবক্তা অং সান সু চিকে কারারুদ্ধ করেছিল। প্রথম মেয়াদে ওবামা প্রশাসন স্থির করেছিল, অবরোধ বহাল থাকলেও ওয়াশিংটন মিয়ানমার নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবে। প্রশাসনের এ প্রজ্ঞা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ফল দিয়েছে। ওবামার সফরের আগে ও পরে মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামী রাজবন্দির মুক্তি, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ উপনির্বাচন ও গণমাধ্যমে সেন্সরশিপ বাতিল ইত্যাদি তার অন্যতম। অবশ্য এ প্রক্রিয়া কিছুদিন আগে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সফরের সময়ই সূচিত হয়েছিল। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন এরই মধ্যে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তাঁর দেশের সামরিক সম্পর্কও ছিন্ন করেছেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমৃদ্ধি মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে প্রলুব্ধ করলেও আশিয়ান দেশগুলো কদাচিৎ দেশটিকে তাদের সমৃদ্ধিতে যুক্ত করতে চেয়েছে; কিন্তু দেশটির 'অচ্ছুৎ' অপবাদ ও ধ্বংসোন্মুখ অর্থনীতি নিয়ে মিয়ানমার চেষ্টা করেও তাদের দলভুক্ত হতে পারেনি। এবার ওবামার সফরে দেশটি সম্পদ-সমৃদ্ধদের কাতারে যোগ দিতে সহায়তা করেছে। এ ছাড়া চীনের ওপর তাদের দীর্ঘদিনের নির্ভরতাকেও তারা ইতি টানতে চায়। মার্কিন নিরাপত্তা এখন উপলব্ধি করছে যে তাদের অবরোধের রাজনীতিই মিয়ানমারের মতো একটি সম্পদশালী কিন্তু অনুন্নত দেশকে চীনের বাহুবন্ধনে ঠেলে দিয়েছিল। তবে এখন চীনাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কের ক্রমাবনতিতে এবং তাদের পশ্চাৎভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের তৎপরতা সত্ত্বেও আশ্চর্যজনকভাবে চীন নীরব। মিয়ানমারের দৃশ্যমান মার্কিনপ্রীতিতেও চীনের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সম্ভবত মিয়ানমারের চীনাদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্কের সময় শুরু করা প্রকল্পগুলো নির্মাণাধীন থাকায় সেগুলো সমাপ্ত করার বৈধতা এখনো আছে। তবে চীনাদের দুশ্চিন্তার কেন্দ্রে রয়েছে অং সান সু চি ও তাঁর প্রয়াত ব্রিটিশ স্বামী। তাঁরা দুজনই তিব্বতের স্বাধিকার ও স্বতন্ত্র অবস্থান রক্ষার পক্ষপাতী। এরই মধ্যে চীনের বৈদেশিক নীতি এঙ্পার্টরা মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বুলিতে বিশ্বাসী নয়। একবার দেশটিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারলে মার্কিনদের ওই সব বুলির মুখোশ খুলে পড়বে এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে নতুন সমীকরণ প্রতিষ্ঠিত হবে, যা আবার চীন-মিয়ানমার সম্পর্কে চীনের অনুকূলে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। গণতন্ত্র বা মানবাধিকার নয়, ওবামার সফরের উদ্দেশ্যই ছিল ভূরাজনৈতিক ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাঁর প্রথম মেয়াদে সূচিত মার্কিন প্রভাব-প্রতিপত্তিকে ধরে রাখার প্রয়াস।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস; কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
No comments