বিজয়ের মাস- গোপন তৎপরতায় জড়ান ইরানের শাহ by মিজানুর রহমান খান
গোপন সংলাপে নিক্সন-কিসিঞ্জারের আরেকজন সহযোগী জুটেছিল। এত দিন জানা ছিল, কলকাতার মার্কিন মিশনই কেবল ইয়াহিয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগারদের একটি অংশের আপস করানোর উদ্যোক্তা ছিল।
কিন্তু এখন জানা গেল, এ রকম একটি উদ্যোগে ইরানের সর্বশেষ শাহেনশা মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি নিজেকে জড়িয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ‘পাকিস্তানিদের দুটি গ্রুপকে’ তেহরানে এনে বৈঠক করাতে। জেনারেল ইয়াহিয়া ইরানের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলেন।
কলকাতার প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কথিত আপসকামী অংশের সঙ্গে ইয়াহিয়া গ্রুপের যোগাযোগ করিয়ে দিতে শাহ তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস খালাতবারিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তবে একাত্তরে বাংলাদেশ বিষয়ে তাঁর ওই উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। এটুকু বোঝা যায়, এই গোপন তৎপরতা সম্পর্কে একাত্তরে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার মি. অটল আগেভাগে টের পেয়েছিলেন। সম্ভবত সে কারণে এটার অঙ্কুরেই বিনাশ ঘটে।
১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর তেহরানের মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো এক গোপন তারবার্তায় ওই ঘটনার বিবরণ পাওয়া গেছে। এ থেকে নতুন প্রশ্ন জাগে, একাত্তরে আওয়ামী লীগের কারও কারও সঙ্গে ইরানিদের এ বিষয়ে যোগাযোগ ঘটেছিল কি না। তেহরানের মার্কিন দূতাবাসে তখন উপপ্রধান (১৯৭০-৭৪) ছিলেন ডগলাস হেক। দক্ষিণ এশিয়া তাঁর অজানা ছিল না। হেক লিখেছেন, ‘৫ ডিসেম্বরের সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালাতবারি আমাকে ডাকেন। এ সময় ইসলামাবাদের মার্কিন মিশনের উপপ্রধান সিডনি সোবার আমার সঙ্গে ছিলেন। তিনি তেহরান হয়ে ইসলামাবাদ যাচ্ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রতিককালে উপমহাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তেহরান-ওয়াশিংটন আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইরান সরকার এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখতে চায়। উপরন্তু একটি উপযুক্ত উপায় খুঁজে বের করতে অন্যান্য দেশের সঙ্গেও কাজ করতে আগ্রহী। এ প্রসঙ্গে খালাতবারি বলেন, তেহরানে ইয়াহিয়া ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের একত্র করার একটি উদ্যোগে ইরান যুক্ত হয়েছে। ইয়াহিয়া এতে সায় দেওয়ার পর শাহ ইঙ্গিত করেছেন যে দুই পাকিস্তানি গ্রুপের মধ্যে আলাপ করিয়ে দিতে তিনি যেকোনো উপায় বের করতে এবং তাতে অন্যদের সাহায্য করতে রাজি আছেন।’
ডগলাস হেক এই পর্যায়ে উল্লেখ করেন যে খালাতবারি যা বলেছেন, তাতে পাকিস্তানের সংকট প্রশ্নে মার্কিন সরকারের অনুসৃত নীতিরই প্রতিফলন ঘটেছে। তবে এটা ভারতীয় হাইকমিশনার অটল উদ্ঘাটন করেছেন বলে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানিয়েছেন। তারবার্তায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘ফারল্যান্ডের বিবরণ অনুযায়ী তেহরানের এই দূতিয়ালির বিষয়টি পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার অটল খোলসমুক্ত করায় তা অর্থহীন হয়ে পড়ে।’
ডগলাস হেক উপসংহারে লেখেন, ‘আমাকে ডাকার আগে সেখানে ইরানে নিযুক্ত সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। আমার পরে অপেক্ষমাণ ছিলেন ইরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনের উপপ্রধান। আমি খালাতবারিকে বলি, সোভিয়েতরা কোন লাইনে? তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর, ভারতের। তবে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা উদ্বিগ্ন। তাই সম্ভবত তারা ভারতকে সতর্ক করে দিতে চাইছে।’
ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিং একাত্তরের ৫ ডিসেম্বর এক তারবার্তায় ৩ ডিসেম্বর কে পশ্চিম ফ্রন্টে হামলা করেছে, সে বিষয়ে তাঁকে অন্ধকারে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিসিঞ্জারের নীতিতে বিরক্ত কিটিং বলেন, ‘ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ধারণা, হামলাটা পাকিস্তানই করেছে। আমারও তাই অনুমান।’ পৃথক এক বার্তায় কিটিং তথ্য দেন যে অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনারকে ডেকে ভারত সাফ বলেছে, তারা নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রস্তাব মানবে না। বাংলাদেশকে স্বাধীন করানো থেকে কোনো কিছুই তাদের দমাতে পারবে না।
ঢাকা থেকে এই দিনটিতেই (৫ ডিসেম্বর) মার্কিন কনসাল জেনারেল হার্বার্ট দানিয়েল স্পিভাক ‘ঢাকা কনস্যুলেট জেনারেলের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক একটি তারবার্তা পাঠান। স্পিভাক লিখেছিলেন, ‘ভারত বাংলাদেশ স্বাধীন করার যে পণ করছে, তা নির্ভেজাল, অকাট্য ও অপ্রতিরোধ্য। পাকিস্তানি সৈন্যদের দুর্বলতা, মুক্তিযোদ্ধাদের অভ্যন্তরীণ তৎপরতা এবং স্বাধীনতার প্রতি বাঙালিদের সর্বসম্মত সমর্থন দেখে মনে হয় এটা অর্জনযোগ্য।’
স্পিভাক লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক অবস্থান তো ঘোরতর পাকিস্তানপন্থী হয়ে পড়েছে। সে কারণেই এর বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমানভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা ফুঁসে উঠতে বাধ্য। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে এই কনস্যুলেট জেনারেল ধরে রাখা দুরূহ হবে। এটা বেআইনি হয়ে পড়বে। কারণ, ঢাকায় যেখানে আমাদের এই দপ্তরটি আছে, সেটিও হবে নতুন রাষ্ট্রের অংশ।’
ইন্দিরা গান্ধী একাত্তরের ৫ ডিসেম্বর নিক্সনকে লিখেছেন, ‘জাতির এক ভয়ংকর দুর্দিনে পাকিস্তানকে নিবৃত্ত করতে আপনার সাহায্য প্রার্থনা করছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাফল্য আজ পাকিস্তানের সামরিক যন্ত্রের হঠকারিতার কারণে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে।’ ইন্দিরার এই চিঠিতে তাঁর সই ছিল টাইপ করা। এদিন কিসিঞ্জারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্স ফোনে বলেন, যুদ্ধের ক্ষতি প্রেসে অতিরঞ্জিত করে বলা হচ্ছে। উভয় পক্ষ হয়তা ১৫টি করে বিমান হারাতে পারে। কিসিঞ্জার এ সময় প্রসঙ্গক্রমে রজার্সকে বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হওয়া ছাড়া তো উপায় নেই।’
নিক্সন-কিসিঞ্জারের সেদিনের (৫ ডিসেম্বর) একটি টেলিফোন আলাপচারিতার শুরুতেই নিক্সন জানতে চান, ‘আমাদের “বিপৎসংকুল কর্মকাণ্ডের” অগ্রগতি কত দূর?’ এর মানে, তাঁরা সচেতন ছিলেন যে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত আনাতলি দোবরিনিন মস্কোয় ছিলেন। কিসিঞ্জার তাই সোভিয়েত দূতাবাসের মিনস্টার কাউন্সিলর ইউলি ভরনস্তবকে ডেকে তাঁদের অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভকে একটি চিঠি দেবন। কাল তা দেওয়া হবে। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে প্রেসিডেন্ট এটা এখনই অবহিত করতে চান যে দুই সপ্তাহ আগে আমাদের সম্পর্ক যা ছিল, সেখানেই আমরা ফিরতে উদ্গ্রীব। এখন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রের বিরুদ্ধে ভারতকে আগ্রাসনে সহায়তা দিলে তা কীভাবে সম্ভব হবে?’ ভরনস্তব এ সময় জানুয়ারিতে কিসিঞ্জারের মস্কো সফরের আমন্ত্রণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
কলকাতার প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কথিত আপসকামী অংশের সঙ্গে ইয়াহিয়া গ্রুপের যোগাযোগ করিয়ে দিতে শাহ তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস খালাতবারিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তবে একাত্তরে বাংলাদেশ বিষয়ে তাঁর ওই উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। এটুকু বোঝা যায়, এই গোপন তৎপরতা সম্পর্কে একাত্তরে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার মি. অটল আগেভাগে টের পেয়েছিলেন। সম্ভবত সে কারণে এটার অঙ্কুরেই বিনাশ ঘটে।
১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর তেহরানের মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো এক গোপন তারবার্তায় ওই ঘটনার বিবরণ পাওয়া গেছে। এ থেকে নতুন প্রশ্ন জাগে, একাত্তরে আওয়ামী লীগের কারও কারও সঙ্গে ইরানিদের এ বিষয়ে যোগাযোগ ঘটেছিল কি না। তেহরানের মার্কিন দূতাবাসে তখন উপপ্রধান (১৯৭০-৭৪) ছিলেন ডগলাস হেক। দক্ষিণ এশিয়া তাঁর অজানা ছিল না। হেক লিখেছেন, ‘৫ ডিসেম্বরের সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালাতবারি আমাকে ডাকেন। এ সময় ইসলামাবাদের মার্কিন মিশনের উপপ্রধান সিডনি সোবার আমার সঙ্গে ছিলেন। তিনি তেহরান হয়ে ইসলামাবাদ যাচ্ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রতিককালে উপমহাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তেহরান-ওয়াশিংটন আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইরান সরকার এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখতে চায়। উপরন্তু একটি উপযুক্ত উপায় খুঁজে বের করতে অন্যান্য দেশের সঙ্গেও কাজ করতে আগ্রহী। এ প্রসঙ্গে খালাতবারি বলেন, তেহরানে ইয়াহিয়া ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের একত্র করার একটি উদ্যোগে ইরান যুক্ত হয়েছে। ইয়াহিয়া এতে সায় দেওয়ার পর শাহ ইঙ্গিত করেছেন যে দুই পাকিস্তানি গ্রুপের মধ্যে আলাপ করিয়ে দিতে তিনি যেকোনো উপায় বের করতে এবং তাতে অন্যদের সাহায্য করতে রাজি আছেন।’
ডগলাস হেক এই পর্যায়ে উল্লেখ করেন যে খালাতবারি যা বলেছেন, তাতে পাকিস্তানের সংকট প্রশ্নে মার্কিন সরকারের অনুসৃত নীতিরই প্রতিফলন ঘটেছে। তবে এটা ভারতীয় হাইকমিশনার অটল উদ্ঘাটন করেছেন বলে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানিয়েছেন। তারবার্তায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘ফারল্যান্ডের বিবরণ অনুযায়ী তেহরানের এই দূতিয়ালির বিষয়টি পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার অটল খোলসমুক্ত করায় তা অর্থহীন হয়ে পড়ে।’
ডগলাস হেক উপসংহারে লেখেন, ‘আমাকে ডাকার আগে সেখানে ইরানে নিযুক্ত সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। আমার পরে অপেক্ষমাণ ছিলেন ইরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনের উপপ্রধান। আমি খালাতবারিকে বলি, সোভিয়েতরা কোন লাইনে? তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর, ভারতের। তবে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা উদ্বিগ্ন। তাই সম্ভবত তারা ভারতকে সতর্ক করে দিতে চাইছে।’
ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিং একাত্তরের ৫ ডিসেম্বর এক তারবার্তায় ৩ ডিসেম্বর কে পশ্চিম ফ্রন্টে হামলা করেছে, সে বিষয়ে তাঁকে অন্ধকারে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিসিঞ্জারের নীতিতে বিরক্ত কিটিং বলেন, ‘ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ধারণা, হামলাটা পাকিস্তানই করেছে। আমারও তাই অনুমান।’ পৃথক এক বার্তায় কিটিং তথ্য দেন যে অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনারকে ডেকে ভারত সাফ বলেছে, তারা নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রস্তাব মানবে না। বাংলাদেশকে স্বাধীন করানো থেকে কোনো কিছুই তাদের দমাতে পারবে না।
ঢাকা থেকে এই দিনটিতেই (৫ ডিসেম্বর) মার্কিন কনসাল জেনারেল হার্বার্ট দানিয়েল স্পিভাক ‘ঢাকা কনস্যুলেট জেনারেলের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক একটি তারবার্তা পাঠান। স্পিভাক লিখেছিলেন, ‘ভারত বাংলাদেশ স্বাধীন করার যে পণ করছে, তা নির্ভেজাল, অকাট্য ও অপ্রতিরোধ্য। পাকিস্তানি সৈন্যদের দুর্বলতা, মুক্তিযোদ্ধাদের অভ্যন্তরীণ তৎপরতা এবং স্বাধীনতার প্রতি বাঙালিদের সর্বসম্মত সমর্থন দেখে মনে হয় এটা অর্জনযোগ্য।’
স্পিভাক লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক অবস্থান তো ঘোরতর পাকিস্তানপন্থী হয়ে পড়েছে। সে কারণেই এর বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমানভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা ফুঁসে উঠতে বাধ্য। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে এই কনস্যুলেট জেনারেল ধরে রাখা দুরূহ হবে। এটা বেআইনি হয়ে পড়বে। কারণ, ঢাকায় যেখানে আমাদের এই দপ্তরটি আছে, সেটিও হবে নতুন রাষ্ট্রের অংশ।’
ইন্দিরা গান্ধী একাত্তরের ৫ ডিসেম্বর নিক্সনকে লিখেছেন, ‘জাতির এক ভয়ংকর দুর্দিনে পাকিস্তানকে নিবৃত্ত করতে আপনার সাহায্য প্রার্থনা করছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাফল্য আজ পাকিস্তানের সামরিক যন্ত্রের হঠকারিতার কারণে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে।’ ইন্দিরার এই চিঠিতে তাঁর সই ছিল টাইপ করা। এদিন কিসিঞ্জারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্স ফোনে বলেন, যুদ্ধের ক্ষতি প্রেসে অতিরঞ্জিত করে বলা হচ্ছে। উভয় পক্ষ হয়তা ১৫টি করে বিমান হারাতে পারে। কিসিঞ্জার এ সময় প্রসঙ্গক্রমে রজার্সকে বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হওয়া ছাড়া তো উপায় নেই।’
নিক্সন-কিসিঞ্জারের সেদিনের (৫ ডিসেম্বর) একটি টেলিফোন আলাপচারিতার শুরুতেই নিক্সন জানতে চান, ‘আমাদের “বিপৎসংকুল কর্মকাণ্ডের” অগ্রগতি কত দূর?’ এর মানে, তাঁরা সচেতন ছিলেন যে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত আনাতলি দোবরিনিন মস্কোয় ছিলেন। কিসিঞ্জার তাই সোভিয়েত দূতাবাসের মিনস্টার কাউন্সিলর ইউলি ভরনস্তবকে ডেকে তাঁদের অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভকে একটি চিঠি দেবন। কাল তা দেওয়া হবে। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে প্রেসিডেন্ট এটা এখনই অবহিত করতে চান যে দুই সপ্তাহ আগে আমাদের সম্পর্ক যা ছিল, সেখানেই আমরা ফিরতে উদ্গ্রীব। এখন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রের বিরুদ্ধে ভারতকে আগ্রাসনে সহায়তা দিলে তা কীভাবে সম্ভব হবে?’ ভরনস্তব এ সময় জানুয়ারিতে কিসিঞ্জারের মস্কো সফরের আমন্ত্রণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
No comments