নারী উন্নয়ন-সমতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবেই by শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন
বাংলাদেশের নারীরা শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবেনই। বর্ণচোরা রাজনীতির কূটচাল ও ধর্মান্ধতার বিভ্রান্তি কেটে গিয়ে নারী উন্নয়ন নীতিমালার বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে_ এমন প্রত্যাশা সবসময়ই করি
নারীদের পিছিয়ে রেখে, ঘরের মধ্যে বন্দি করে রেখে, নারীদের বিকাশের সব পথ রুদ্ধ করে দিয়ে কোনো জাতি সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। এটা কোনো তত্ত্বকথা নয়, এ আজ প্রমাণিত সত্য। বিশ্বের সব সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশ তাদের সত্যিকার উন্নয়নকে সম্ভব করে তুলেছে শিক্ষা, চিকিৎসা, সম্পত্তির মালিকানাসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে। নানা সামাজিক প্রতিকূলতা ও দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন সত্ত্বেও নারীশিক্ষা ও নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখ্যযোগ্য। উন্নয়নশীল বিশ্বের সমস্যা ভারাক্রান্ত একটা দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী দু'জনই মহিলা। বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক নানা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের নারীরা অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করছেন। কিন্তু সেই বাংলাদেশে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে কয়েকটি ডানপন্থি দল হরতালের নামে যে তাণ্ডব ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করল তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
সরকারি নীতিনির্ধারকদের ভাষ্য অনুযায়ী, নারী উন্নয়ন নীতিমালার ২৩.৫ ও ২৫.২ ধারায় কোরআনবিরোধী কোনো কথা নেই। ২৩.৫ ধারায় সম্পদ বলতে কোনো উত্তরাধিকার সম্পদকে বোঝানো হয়নি। ২৫.২ ধারায় উত্তরাধিকার হিসেবে নারী যে সম্পত্তি অর্জন করেন সেই অর্জিত সম্পত্তির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির নেতাদের মতে, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা কোরআনবিরোধী। ইসলামী ঐক্যজোট নেতা ফজলুল হক আমিনীর ভাষায়, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার প্রথম লাইনই কোরআনবিরোধী, কেননা এতে সব নারীর সমান সুযোগ ও অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কী সাংঘাতিক কথা! নারী-পুরুষের সমান সুযোগ ও অধিকারপ্রাপ্তির কথা কোরআনবিরোধী হবে কী করে? সৃষ্টিকর্তা কি তাহলে নারী-পুরুষকে অসমান করে তৈরি করেছেন? সৃষ্টিকর্তা কি তাহলে তার প্রিয় সৃষ্টি মানুষের দুটি ধারার মধ্যে করেছেন বৈষম্য? এটা ঠিক যে, নারী ও পুরুষ তাদের শারীরিক গড়ন, শারীরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও কর্মক্ষমতায় ভিন্ন। মানব প্রজাতির টিকে থাকা, বংশবিস্তার ও বিকাশের স্বার্থেই সৃষ্টিকর্তা তা করেছেন। সেজন্য পুরুষ ও নারীর মেধা বিকাশ এবং সুযোগ ও অধিকারের সমতার বিন্যাসে তো কোনো বৈষম্য নেই, থাকতে পারে না। পুরুষের পোটেনশিয়ালিটি এক ধরনের, নারীর পোটেনশিয়ালিটি ভিন্ন ধরনের। উভয়কেই মেধা বিকাশে সমান সুযোগ দিতে হবে, উভয়েরই শিক্ষা, চিকিৎসা, সম্পত্তির মালিকানা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমান অধিকার থাকবে। নইলে সেই সমাজ সামনের দিকে এগোবে কী করে?
নারী উন্নয়ন নীতিমালায় ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের কথা নেই। অথচ তা নিয়ে যত বিভ্রান্তি! ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের সরল পাঠ হচ্ছে, পৈতৃক উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী পুরুষের অর্ধেক পায়। যে সময় মহানবী (সা.) এ উত্তরাধিকার আইনের প্রবর্তন করেন, সেই সামাজিক প্রেক্ষাপটে তার যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা দুই-ই ছিল। কেননা সামাজিকভাবে একটা ছেলের ওপর যে দায়িত্ব এসে পড়ত, মেয়েটাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হতো না। সামাজিক দায়িত্ব, সম্পত্তি অর্জন সবকিছু মিলে ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের যৌক্তিকতা ও যথার্থতা দুই-ই ছিল। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে সমাজে মেয়েদের সম্পত্তিতে কোনো অধিকারই ছিল না, তখন মহানবী (সা.) সম্পত্তিতে নারীদের অধিকার প্রদান করে তাকে সুরক্ষিত করেছিলেন। এটিই হচ্ছে ইসলাম ও ইসলামী আইনের মূল স্পিরিট। আজ দেশে দেশে কোরআন ও ইসলামী আইনের 'প্রগ্রেসিভ ইন্টারপ্রিটেশন' বা 'প্রগতিশীল ব্যাখ্যা' করা হচ্ছে। যখন নারীদের সম্পত্তিতে কোনো অধিকারই ছিল না, তখন যদি তাদের অধিকার দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে ইসলামের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কোরআনের 'প্রগ্রেসিভ ইন্টারপ্রিটেশনে'র মাধ্যমে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীদের পুরুষের সমান অধিকার দিতে বাধা কোথায়?
কয়েকটি 'ছুটকা-ছাটকা' ডানপন্থি দল জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতা করে হরতালের নামে বিক্ষিপ্তভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করল, তাতে আমি খুব শঙ্কিত নই। আমি মর্মাহত এজন্য যে, বিএনপির মতো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দল এ হরতালে নৈতিক সমর্থন দিয়ে বসেছে। বিএনপির এই দ্বৈত চরিত্র ও বর্ণচোরা অবস্থান বিএনপির যেমন ক্ষতি করে, তেমনি বাংলাদেশেরও ক্ষতি করে। বিএনপি একদিকে তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক দাবি করে, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে জোট গড়ে ক্ষমতায় যায়। বিএনপি একদিকে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের কথা বলে, অন্যদিকে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতাকারীদের কর্মকাণ্ডে নৈতিক সমর্থন দেয়। নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতাকারী ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সমর্থন না দিয়ে বিএনপি যদি একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার (সেক্যুলার বলতে আমি ধর্মনিরপেক্ষতা বোঝাচ্ছি, ধর্মহীনতা নয়) দল হয়ে উঠত, তাহলে তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য সত্যিকারের সুফল বয়ে আনত বলে আমার মনে হয়।
শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ ও সমাজের মধ্যে এক ধরনের সহজাত উদারতা আছে। না হলে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না (আফগানিস্তান ও সৌদি আরবের নারীদের কথা ভাবুন!)।
সহজাত ওই উদারতার জন্য বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শিক্ষার উৎকর্ষ সম্ভব হয়েছে। আমিনীরা যতই বাঁদর নাচের সঙ সাজুন বা লল্ফম্ফঝল্ফম্ফ করে উন্মাদনা তৈরি করুন, বাংলাদেশের নারীরা শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবেনই। বর্ণচোরা রাজনীতির কূটচাল ও ধর্মান্ধতার বিভ্রান্তি কেটে গিয়ে নারী উন্নয়ন নীতিমালার বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে_ এমন প্রত্যাশা সবসময়ই করি। মুশকিল হচ্ছে, নারীনীতি নিয়ে আমিনীরা অহেতুক বিভ্রান্তি তৈরি করছেন, আর তাদের পেছন থেকে উস্কে দিচ্ছে বর্ণচোরা রাজনৈতিক শক্তি। সারাবিশ্বের সব মুসলমান দেশের সংগঠন 'অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ' (ওআইসি) তাদের ঈধরৎড় উবপষধৎধঃরড়হ ড়হ ঐঁসধহ জরমযঃং রহ ওংষধস-এর ৬(ক)তে সুস্পষ্ট করে বলেছে : 'মর্যাদা ও তা ভোগ করার অধিকারের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের দিক থেকেও নারী-পুরুষ সমান...'। আগেই উলেল্গখ করেছি যে, পবিত্র কোরআনের রয়েছে নানা ইন্টারপ্রিটেশন, নানা তাফসির। কোনোটি উদার ও প্রগতিশীল, কোনোটিবা খুব রক্ষণশীল। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভীরু হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের উদার ব্যাখ্যা ও ধ্যান-ধারণাকে লালন-পালন এবং সমর্থন করেন। সেজন্যই জামায়াতে ইসলামীর মতো উগ্র ধর্মান্ধ দল বারবার পরাজিত হয়। ওই একই কারণে আমিনীদের তাণ্ডব, উন্মাদনা ও নৈরাজ্যও পরাজিত হবে বলে মনে করি।
শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন :সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
hrkarzon@yahoo.com
সরকারি নীতিনির্ধারকদের ভাষ্য অনুযায়ী, নারী উন্নয়ন নীতিমালার ২৩.৫ ও ২৫.২ ধারায় কোরআনবিরোধী কোনো কথা নেই। ২৩.৫ ধারায় সম্পদ বলতে কোনো উত্তরাধিকার সম্পদকে বোঝানো হয়নি। ২৫.২ ধারায় উত্তরাধিকার হিসেবে নারী যে সম্পত্তি অর্জন করেন সেই অর্জিত সম্পত্তির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির নেতাদের মতে, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা কোরআনবিরোধী। ইসলামী ঐক্যজোট নেতা ফজলুল হক আমিনীর ভাষায়, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার প্রথম লাইনই কোরআনবিরোধী, কেননা এতে সব নারীর সমান সুযোগ ও অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কী সাংঘাতিক কথা! নারী-পুরুষের সমান সুযোগ ও অধিকারপ্রাপ্তির কথা কোরআনবিরোধী হবে কী করে? সৃষ্টিকর্তা কি তাহলে নারী-পুরুষকে অসমান করে তৈরি করেছেন? সৃষ্টিকর্তা কি তাহলে তার প্রিয় সৃষ্টি মানুষের দুটি ধারার মধ্যে করেছেন বৈষম্য? এটা ঠিক যে, নারী ও পুরুষ তাদের শারীরিক গড়ন, শারীরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও কর্মক্ষমতায় ভিন্ন। মানব প্রজাতির টিকে থাকা, বংশবিস্তার ও বিকাশের স্বার্থেই সৃষ্টিকর্তা তা করেছেন। সেজন্য পুরুষ ও নারীর মেধা বিকাশ এবং সুযোগ ও অধিকারের সমতার বিন্যাসে তো কোনো বৈষম্য নেই, থাকতে পারে না। পুরুষের পোটেনশিয়ালিটি এক ধরনের, নারীর পোটেনশিয়ালিটি ভিন্ন ধরনের। উভয়কেই মেধা বিকাশে সমান সুযোগ দিতে হবে, উভয়েরই শিক্ষা, চিকিৎসা, সম্পত্তির মালিকানা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমান অধিকার থাকবে। নইলে সেই সমাজ সামনের দিকে এগোবে কী করে?
নারী উন্নয়ন নীতিমালায় ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের কথা নেই। অথচ তা নিয়ে যত বিভ্রান্তি! ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের সরল পাঠ হচ্ছে, পৈতৃক উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী পুরুষের অর্ধেক পায়। যে সময় মহানবী (সা.) এ উত্তরাধিকার আইনের প্রবর্তন করেন, সেই সামাজিক প্রেক্ষাপটে তার যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা দুই-ই ছিল। কেননা সামাজিকভাবে একটা ছেলের ওপর যে দায়িত্ব এসে পড়ত, মেয়েটাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হতো না। সামাজিক দায়িত্ব, সম্পত্তি অর্জন সবকিছু মিলে ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের যৌক্তিকতা ও যথার্থতা দুই-ই ছিল। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে সমাজে মেয়েদের সম্পত্তিতে কোনো অধিকারই ছিল না, তখন মহানবী (সা.) সম্পত্তিতে নারীদের অধিকার প্রদান করে তাকে সুরক্ষিত করেছিলেন। এটিই হচ্ছে ইসলাম ও ইসলামী আইনের মূল স্পিরিট। আজ দেশে দেশে কোরআন ও ইসলামী আইনের 'প্রগ্রেসিভ ইন্টারপ্রিটেশন' বা 'প্রগতিশীল ব্যাখ্যা' করা হচ্ছে। যখন নারীদের সম্পত্তিতে কোনো অধিকারই ছিল না, তখন যদি তাদের অধিকার দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে ইসলামের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কোরআনের 'প্রগ্রেসিভ ইন্টারপ্রিটেশনে'র মাধ্যমে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীদের পুরুষের সমান অধিকার দিতে বাধা কোথায়?
কয়েকটি 'ছুটকা-ছাটকা' ডানপন্থি দল জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতা করে হরতালের নামে বিক্ষিপ্তভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করল, তাতে আমি খুব শঙ্কিত নই। আমি মর্মাহত এজন্য যে, বিএনপির মতো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দল এ হরতালে নৈতিক সমর্থন দিয়ে বসেছে। বিএনপির এই দ্বৈত চরিত্র ও বর্ণচোরা অবস্থান বিএনপির যেমন ক্ষতি করে, তেমনি বাংলাদেশেরও ক্ষতি করে। বিএনপি একদিকে তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক দাবি করে, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে জোট গড়ে ক্ষমতায় যায়। বিএনপি একদিকে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের কথা বলে, অন্যদিকে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতাকারীদের কর্মকাণ্ডে নৈতিক সমর্থন দেয়। নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতাকারী ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সমর্থন না দিয়ে বিএনপি যদি একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার (সেক্যুলার বলতে আমি ধর্মনিরপেক্ষতা বোঝাচ্ছি, ধর্মহীনতা নয়) দল হয়ে উঠত, তাহলে তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য সত্যিকারের সুফল বয়ে আনত বলে আমার মনে হয়।
শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ ও সমাজের মধ্যে এক ধরনের সহজাত উদারতা আছে। না হলে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না (আফগানিস্তান ও সৌদি আরবের নারীদের কথা ভাবুন!)।
সহজাত ওই উদারতার জন্য বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শিক্ষার উৎকর্ষ সম্ভব হয়েছে। আমিনীরা যতই বাঁদর নাচের সঙ সাজুন বা লল্ফম্ফঝল্ফম্ফ করে উন্মাদনা তৈরি করুন, বাংলাদেশের নারীরা শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবেনই। বর্ণচোরা রাজনীতির কূটচাল ও ধর্মান্ধতার বিভ্রান্তি কেটে গিয়ে নারী উন্নয়ন নীতিমালার বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে_ এমন প্রত্যাশা সবসময়ই করি। মুশকিল হচ্ছে, নারীনীতি নিয়ে আমিনীরা অহেতুক বিভ্রান্তি তৈরি করছেন, আর তাদের পেছন থেকে উস্কে দিচ্ছে বর্ণচোরা রাজনৈতিক শক্তি। সারাবিশ্বের সব মুসলমান দেশের সংগঠন 'অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ' (ওআইসি) তাদের ঈধরৎড় উবপষধৎধঃরড়হ ড়হ ঐঁসধহ জরমযঃং রহ ওংষধস-এর ৬(ক)তে সুস্পষ্ট করে বলেছে : 'মর্যাদা ও তা ভোগ করার অধিকারের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের দিক থেকেও নারী-পুরুষ সমান...'। আগেই উলেল্গখ করেছি যে, পবিত্র কোরআনের রয়েছে নানা ইন্টারপ্রিটেশন, নানা তাফসির। কোনোটি উদার ও প্রগতিশীল, কোনোটিবা খুব রক্ষণশীল। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভীরু হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের উদার ব্যাখ্যা ও ধ্যান-ধারণাকে লালন-পালন এবং সমর্থন করেন। সেজন্যই জামায়াতে ইসলামীর মতো উগ্র ধর্মান্ধ দল বারবার পরাজিত হয়। ওই একই কারণে আমিনীদের তাণ্ডব, উন্মাদনা ও নৈরাজ্যও পরাজিত হবে বলে মনে করি।
শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন :সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
hrkarzon@yahoo.com
No comments