শিথিল হরতালে মারমুখী জামায়াত-শিবির-ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
রাজধানীসহ সারা দেশে গতকালের শিথিল হরতালে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা মাঠে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া ছিল। পুলিশ ও সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের মুখে বিভিন্ন সময় তারা মারমুখী হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন স্থানে পিকেটাররা বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে জড়ায়, অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করে বা আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে পুলিশ ছিল তাদের প্রধান টার্গেট। নিরাপত্তাবাহিনীর গাড়ি দেখলেই শিবিরকর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়ে। বাদ যায়নি দূতাবাসের গাড়িও। এবারের হরতালের ব্যতিক্রমী ঘটনা হলো- সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ। রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্তে হামলা ও ভাঙচুরে লিপ্ত জামায়াত-শিবিরকর্মীদের প্রতিরোধে জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নামে এবং গণধোলাই দেয়। এর মধ্যে মিরপুরের কালসিতে একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করার সময় শিবিরের কর্মীদের গণধোলাই দেয় জনতা।
এ ঘটনায় শিবিরের এক কর্মী নিহত হয়েছে বলে জামায়াতের দাবি। জানানো হয়েছে, তার নাম নিজাম উদ্দিন।
জামায়াতের নেতারা জানান, পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। পিটুনিতে আহত হয়েছে শতাধিক। তবে পুলিশ বলেছে, গতকাল রাজধানীতে ৬৯ জন জামায়াত-শিবিরকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। এক শিবিরকর্মী নিহত হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ বলেছে, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার সময় জনতার গণধোলাইয়ে সে মারা যেতে পারে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আটক শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী এ হরতাল ডাকে। এতে বিএনপিসহ অন্যান্য শরিক দল নৈতিক সমর্থন দিলেও জামায়াত-শিবির ছাড়া অন্য দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিল না।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ দাবি করেন, পুলিশের পাশাপশি যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের ওপর হামলা চালায়। ক্ষমতাসীন দলের এই হামলার প্রতিবাদে আজ বুধবার সারা দেশে দলটি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বলে তিনি জানান।
রাজধানীতে হরতালের চিত্র : গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী ও খিলক্ষেতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ঘটে যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনাও। পুলিশকে টার্গেট করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা ঠেকাতে গতকাল ভোর থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় সশস্ত্র অবস্থান নেন পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। রায়ট কার ও সাঁজোয়া যানের টহল ছিল জোরদার।
সকাল সাড়ে ১০টায় খিলক্ষেত ফ্লাইওভারের নিচে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি গাড়িতে ঢিল ছোড়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় গাড়ির গতি কমে এলে তাতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালানো হয়। হামলার পর পরই গাড়িটি দ্রুতগতিতে ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে যায়।
সকালে মহাখালী ও মগবাজারে এবং দুপুরে জিপিও মোড়ে মিছিল করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায় সকাল পৌনে ৭টার দিকে জামায়াত-শিবিরের কিছু নেতা-কর্মী হঠাৎ রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে দিলে গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় অন্তত চারটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও শেওড়াপাড়ায় ঝটিকা মিছিল বের করে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় সাভার থেকে আসা বিশ্বাস পরিবহনের একটি গাড়িতে আগুন দেয় শিবিরকর্মীরা। সকাল ১০টায় মিরপুরের আনসার ক্যাম্প এলাকায় একটি বাসে আগুন ও তিনটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায় তারা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর সড়কে বনানীর কাছে নৌবাহিনীর সদর দপ্তরের ফটকের উল্টো দিকে আগুন দেওয়া হয় একটি বাসে। দুপুরে বাংলামোটরে একটি বাস পোড়ানো হয়।
রাজধানীর মিরপুরের কালসি এলাকায় শিবিরকর্মীরা নির্বিচার ভাঙচুর শুরু করলে এলাকাবাসী প্রতিরোধে নেমে আসে। এলাকাবাসী একজোট হয়ে শিবিরকর্মীদের গণধোলাই দেয়। এ ঘটনায় এক শিবিরকর্মীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তারা অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় কয়েকজনকে আটক করে পল্লবী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল পৌনে ৩টায় মিরপুরের কালসি থেকে শিবিরের মিরপুর থানা কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো. ইয়াহিয়া, ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি সাজ্জাদ হোসাইনের নেতৃত্বে শিবিরকর্মীরা একটি মিছিল বের করে পূরবী সিনেমা হলের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগকর্মীরা বাধা দেয়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় হরতালের সমর্থনে পিকেটাররা ১০-১৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। টহলরত পুলিশ বাধা দিলে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলে। সেখান থেকে জামায়াত-শিবিরের সাত কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
লঞ্চ, ট্রেন, ব্যাংক ছিল স্বাভাবিক : হরতালে রাজধানীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অফিস-আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম চলেছে। সচল ছিল ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও। সচিবালয়ে কাজ হয়েছে অন্য দিনের মতোই। রাজধানীতে হরতালবিরোধী মিছিল হয়েছে। সকালে রাজধানীতে যান চলাচল কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল বাড়তে থাকে। তবে গাবতলী থেকে দূরপাল্লার বাস না ছাড়লেও সায়েদাবাদ থেকে ঠিকই বাস ছেড়েছে বিভিন্ন গন্তব্যে। রেল চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সদরঘাট থেকে বিভিন্ন নদীপথে লঞ্চ আগের দিনের মতো ছেড়ে গেছে। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মো. খায়রুল বশির কালের কণ্ঠকে জানান, ট্রেনের সময়সূচিতে হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রতিটি ট্রেন সময়মতো স্টেশন ছেড়েছে ও পৌঁছেছে। বিআইডাবি্লউটিএর জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক (ট্রাফিক) সাইফুল হক খান জানান, লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কম হলেও স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন রুট থেকে লঞ্চ সকালে এসে ঘাটে ভিড়েছে এবং বিকেলে ছেড়ে গেছে।
৩৫ নেতা-কর্মী রিমান্ডে : আদালত প্রতিবেদক জানান, হরতাল ও এর আগের দিন গ্রেপ্তার হওয়া ৩৬ জামায়াত-শিবিরকর্মীর মধ্যে একজন ছাড়া বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার তাদের ঢাকার চিফ মেট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইলে আদালত আবেদন অনুমোদন করেন। এদের মধ্যে মতিঝিল থানায় ১৪ জন, যাত্রাবাড়ী থানায় আট, তেজগাঁও থানায় সাত, বাড্ডা থানায় পাঁচ এবং পল্টন ও রমনা থানায় একজন করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
রাজশাহীতে শিবির-পুলিশ সংঘর্ষ, বোমা বিস্ফোরণ, আহত ১০, আটক ২০ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে শিবিরের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে শিবির ক্যাডাররা অন্তত ১০টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের কয়েকটি গুলি ও টিয়ার শেল ছোড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুজনসহ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ২০ জনকে আটক করেছে।
পুলিশ জানায়, রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন ইয়াহইয়ার নেতৃত্বে শিবিরের নেতা-কর্মীরা বিনোদপুরে টায়ার ও বাঁশের বেড়া জ্বালিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা চালায়। এরপর তারা একটি মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।
সিলেটে পুলিশের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, আহত ১০ : সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শিবির নগরের বেশ কয়েকটি রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং চণ্ডিপুলে পুলিশের একটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। সকাল সাড়ে ৭টায় দক্ষিণ সুরমার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জামায়াত-শিবিরের একটি গ্রুপ মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়। এ সময় তারা পুলিশের গাড়িসহ বেশকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। বাধা দিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে জামায়াত-শিবির ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, জবাবে পুলিশ ২৫টি শটগানের গুলি এবং একটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় শিবিরের ১০ জন আহত হয়।
চট্টগ্রামে ২৬ গাড়ি ভাঙচুর, গ্রেপ্তার ১২ : বিক্ষিপ্ত ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড ও গাড়ি ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে হরতাল পালিত হয়েছে। মহানগরের শাহ আমানত সেতু, বাকলিয়া, কোতোয়ালি, খুলশী ও হালিশহর এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিছিল নিয়ে গাড়ি চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে এবং গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় খুলশী থানার ওসির গাড়িসহ ছয়টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে
এদিকে সাতকানিয়ায় ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে পিকেটাররা। বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অর্ধশতাধিক রাবার বুলেট ছোড়ে। সাতকানিয়া থেকে তিনজন ও লোহাগাড়া থেকে চার শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলা এলাকায় দুপুর ১২টার দিকে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা একটি তেলের ট্যাংকারে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের গাড়িতে আগুন, গ্রেপ্তার ১১ : সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। পুলিশ লাইন থেকে শহরের দিকে যাওয়ার পথে পীরবাড়ি মোড়ে পিকআপ ভ্যানটিতে জামায়াত-শিবির আগুন দেয়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জেলার কসবা থেকে পাঁচজন এবং বিজয়নগর থেকে দুজন ও আখাউড়া থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হরতাল চলাকালে আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি ছিল স্বাভাবিক।
লক্ষ্মীপুরে পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, আহত ১৫ : বিসিক এলাকায় লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়কে যানবাহন ভাঙচুরের সময় পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ডিবি পুলিশের দুই সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। এর আগে ভোরে উপজেলার মান্দারীতে একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করে পিকেটাররা। এ ছাড়া উপজেলার দালাল বাজার, মান্দারী, মিয়ার রাস্তার মাথা, ভবানীগঞ্জ চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে শিবিরকর্মীরা পিকিটিং করে।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে পুুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, আহত ২০ : উপজেলার বিপুলাসার বাজারে সকাল ১০টার দিকে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা বিভিন্ন বাস, ট্রাক, সিএনজিসহ অন্তত ১০টি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় বাধা দিলে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এতে মনোহরগঞ্জ থানার ওসি, এসআই, এএসআই, কনস্টেবল ও পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
কক্সবাজারে চোরাগোপ্তা মিছিল-পিকেটিং, গাড়ি ভাঙচুর, আটক ১৬ : চোরাগোপ্তা মিছিল-পিকেটিং ও গাড়ি ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে হরতাল পালিত হয়েছে। জেলায় ছয়টি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে বাসে আগুন : সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক ও সানারপাড় এলাকায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে পিকেটাররা। ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় এসবি গার্মেন্টের সামনে বন্ধন বাসে এবং দাপা এলাকায় আরেকটি বাসে আগুন দেয় পিকেটাররা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ-শিবির সংর্ঘষ, গুলি : বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সেতুসংলগ্ন স্থানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কে বিদ্যুতের পোল ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পিকেটাররা। এ সময় জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। শিবগঞ্জের কানসাটে দোকানপাট ও যানবাহন ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৯টি শটগানের গুলি ও একটি পিস্তলের ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
বগুড়া : শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার সীমান্ত এলাকা রূপীহারে জামায়াত ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে উভয়পক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছে। এ সময় একটি দোকানসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। শেরপুরে পুলিশের ওপর হামলা ও পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে জামায়াতকর্মীরা। বগুড়া সদর, শেরপুর, শাজাহানপুর, দুপচাঁচিয়া ও শিবগঞ্জে ১৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
পাবনা : জেলা শহর এবং প্রধান সড়ক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দখলে থাকলেও ঈশ্বরদী এবং পুষ্পপাড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছে ১০ জন। জেলার ৬ থানা পুলিশ ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সাভার : ভোর পৌনে ৭টার দিকে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রাবেয়া ক্লিনিকের সামনে অবস্থানরত বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজের একটি বাসে (ঢাকা-চ-৩১৩৫) হরতাল সমর্থকরা অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সাভার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ছাড়া রংপুর, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, বরিশাল, গাজীপুর, খুলনা, নোয়াখালী, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, রাঙামাটি, শেরপুর, টঙ্গী, কুড়িগ্রাম, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পিরোজপুর, ভোলা, কেশবপুর, মেহেরপুর, নবাবগঞ্জ (ঢাকা) ও কেরানীগঞ্জে ঢিলেঢালা হরতাল হয়েছে।
এ ঘটনায় শিবিরের এক কর্মী নিহত হয়েছে বলে জামায়াতের দাবি। জানানো হয়েছে, তার নাম নিজাম উদ্দিন।
জামায়াতের নেতারা জানান, পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। পিটুনিতে আহত হয়েছে শতাধিক। তবে পুলিশ বলেছে, গতকাল রাজধানীতে ৬৯ জন জামায়াত-শিবিরকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। এক শিবিরকর্মী নিহত হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ বলেছে, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার সময় জনতার গণধোলাইয়ে সে মারা যেতে পারে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আটক শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী এ হরতাল ডাকে। এতে বিএনপিসহ অন্যান্য শরিক দল নৈতিক সমর্থন দিলেও জামায়াত-শিবির ছাড়া অন্য দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিল না।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ দাবি করেন, পুলিশের পাশাপশি যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের ওপর হামলা চালায়। ক্ষমতাসীন দলের এই হামলার প্রতিবাদে আজ বুধবার সারা দেশে দলটি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বলে তিনি জানান।
রাজধানীতে হরতালের চিত্র : গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী ও খিলক্ষেতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ঘটে যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনাও। পুলিশকে টার্গেট করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা ঠেকাতে গতকাল ভোর থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় সশস্ত্র অবস্থান নেন পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। রায়ট কার ও সাঁজোয়া যানের টহল ছিল জোরদার।
সকাল সাড়ে ১০টায় খিলক্ষেত ফ্লাইওভারের নিচে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি গাড়িতে ঢিল ছোড়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় গাড়ির গতি কমে এলে তাতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালানো হয়। হামলার পর পরই গাড়িটি দ্রুতগতিতে ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে যায়।
সকালে মহাখালী ও মগবাজারে এবং দুপুরে জিপিও মোড়ে মিছিল করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায় সকাল পৌনে ৭টার দিকে জামায়াত-শিবিরের কিছু নেতা-কর্মী হঠাৎ রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে দিলে গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় অন্তত চারটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও শেওড়াপাড়ায় ঝটিকা মিছিল বের করে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় সাভার থেকে আসা বিশ্বাস পরিবহনের একটি গাড়িতে আগুন দেয় শিবিরকর্মীরা। সকাল ১০টায় মিরপুরের আনসার ক্যাম্প এলাকায় একটি বাসে আগুন ও তিনটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায় তারা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর সড়কে বনানীর কাছে নৌবাহিনীর সদর দপ্তরের ফটকের উল্টো দিকে আগুন দেওয়া হয় একটি বাসে। দুপুরে বাংলামোটরে একটি বাস পোড়ানো হয়।
রাজধানীর মিরপুরের কালসি এলাকায় শিবিরকর্মীরা নির্বিচার ভাঙচুর শুরু করলে এলাকাবাসী প্রতিরোধে নেমে আসে। এলাকাবাসী একজোট হয়ে শিবিরকর্মীদের গণধোলাই দেয়। এ ঘটনায় এক শিবিরকর্মীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তারা অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় কয়েকজনকে আটক করে পল্লবী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল পৌনে ৩টায় মিরপুরের কালসি থেকে শিবিরের মিরপুর থানা কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো. ইয়াহিয়া, ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি সাজ্জাদ হোসাইনের নেতৃত্বে শিবিরকর্মীরা একটি মিছিল বের করে পূরবী সিনেমা হলের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগকর্মীরা বাধা দেয়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় হরতালের সমর্থনে পিকেটাররা ১০-১৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। টহলরত পুলিশ বাধা দিলে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলে। সেখান থেকে জামায়াত-শিবিরের সাত কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
লঞ্চ, ট্রেন, ব্যাংক ছিল স্বাভাবিক : হরতালে রাজধানীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অফিস-আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম চলেছে। সচল ছিল ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও। সচিবালয়ে কাজ হয়েছে অন্য দিনের মতোই। রাজধানীতে হরতালবিরোধী মিছিল হয়েছে। সকালে রাজধানীতে যান চলাচল কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল বাড়তে থাকে। তবে গাবতলী থেকে দূরপাল্লার বাস না ছাড়লেও সায়েদাবাদ থেকে ঠিকই বাস ছেড়েছে বিভিন্ন গন্তব্যে। রেল চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সদরঘাট থেকে বিভিন্ন নদীপথে লঞ্চ আগের দিনের মতো ছেড়ে গেছে। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মো. খায়রুল বশির কালের কণ্ঠকে জানান, ট্রেনের সময়সূচিতে হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রতিটি ট্রেন সময়মতো স্টেশন ছেড়েছে ও পৌঁছেছে। বিআইডাবি্লউটিএর জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক (ট্রাফিক) সাইফুল হক খান জানান, লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কম হলেও স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন রুট থেকে লঞ্চ সকালে এসে ঘাটে ভিড়েছে এবং বিকেলে ছেড়ে গেছে।
৩৫ নেতা-কর্মী রিমান্ডে : আদালত প্রতিবেদক জানান, হরতাল ও এর আগের দিন গ্রেপ্তার হওয়া ৩৬ জামায়াত-শিবিরকর্মীর মধ্যে একজন ছাড়া বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার তাদের ঢাকার চিফ মেট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইলে আদালত আবেদন অনুমোদন করেন। এদের মধ্যে মতিঝিল থানায় ১৪ জন, যাত্রাবাড়ী থানায় আট, তেজগাঁও থানায় সাত, বাড্ডা থানায় পাঁচ এবং পল্টন ও রমনা থানায় একজন করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
রাজশাহীতে শিবির-পুলিশ সংঘর্ষ, বোমা বিস্ফোরণ, আহত ১০, আটক ২০ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে শিবিরের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে শিবির ক্যাডাররা অন্তত ১০টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের কয়েকটি গুলি ও টিয়ার শেল ছোড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুজনসহ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ২০ জনকে আটক করেছে।
পুলিশ জানায়, রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন ইয়াহইয়ার নেতৃত্বে শিবিরের নেতা-কর্মীরা বিনোদপুরে টায়ার ও বাঁশের বেড়া জ্বালিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা চালায়। এরপর তারা একটি মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।
সিলেটে পুলিশের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, আহত ১০ : সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শিবির নগরের বেশ কয়েকটি রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং চণ্ডিপুলে পুলিশের একটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। সকাল সাড়ে ৭টায় দক্ষিণ সুরমার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জামায়াত-শিবিরের একটি গ্রুপ মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়। এ সময় তারা পুলিশের গাড়িসহ বেশকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। বাধা দিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে জামায়াত-শিবির ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, জবাবে পুলিশ ২৫টি শটগানের গুলি এবং একটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় শিবিরের ১০ জন আহত হয়।
চট্টগ্রামে ২৬ গাড়ি ভাঙচুর, গ্রেপ্তার ১২ : বিক্ষিপ্ত ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড ও গাড়ি ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে হরতাল পালিত হয়েছে। মহানগরের শাহ আমানত সেতু, বাকলিয়া, কোতোয়ালি, খুলশী ও হালিশহর এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিছিল নিয়ে গাড়ি চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে এবং গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় খুলশী থানার ওসির গাড়িসহ ছয়টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে
এদিকে সাতকানিয়ায় ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে পিকেটাররা। বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অর্ধশতাধিক রাবার বুলেট ছোড়ে। সাতকানিয়া থেকে তিনজন ও লোহাগাড়া থেকে চার শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলা এলাকায় দুপুর ১২টার দিকে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা একটি তেলের ট্যাংকারে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের গাড়িতে আগুন, গ্রেপ্তার ১১ : সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। পুলিশ লাইন থেকে শহরের দিকে যাওয়ার পথে পীরবাড়ি মোড়ে পিকআপ ভ্যানটিতে জামায়াত-শিবির আগুন দেয়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জেলার কসবা থেকে পাঁচজন এবং বিজয়নগর থেকে দুজন ও আখাউড়া থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হরতাল চলাকালে আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি ছিল স্বাভাবিক।
লক্ষ্মীপুরে পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, আহত ১৫ : বিসিক এলাকায় লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়কে যানবাহন ভাঙচুরের সময় পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ডিবি পুলিশের দুই সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। এর আগে ভোরে উপজেলার মান্দারীতে একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করে পিকেটাররা। এ ছাড়া উপজেলার দালাল বাজার, মান্দারী, মিয়ার রাস্তার মাথা, ভবানীগঞ্জ চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে শিবিরকর্মীরা পিকিটিং করে।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে পুুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, আহত ২০ : উপজেলার বিপুলাসার বাজারে সকাল ১০টার দিকে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা বিভিন্ন বাস, ট্রাক, সিএনজিসহ অন্তত ১০টি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় বাধা দিলে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এতে মনোহরগঞ্জ থানার ওসি, এসআই, এএসআই, কনস্টেবল ও পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
কক্সবাজারে চোরাগোপ্তা মিছিল-পিকেটিং, গাড়ি ভাঙচুর, আটক ১৬ : চোরাগোপ্তা মিছিল-পিকেটিং ও গাড়ি ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে হরতাল পালিত হয়েছে। জেলায় ছয়টি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে বাসে আগুন : সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক ও সানারপাড় এলাকায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে পিকেটাররা। ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় এসবি গার্মেন্টের সামনে বন্ধন বাসে এবং দাপা এলাকায় আরেকটি বাসে আগুন দেয় পিকেটাররা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ-শিবির সংর্ঘষ, গুলি : বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সেতুসংলগ্ন স্থানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কে বিদ্যুতের পোল ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পিকেটাররা। এ সময় জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। শিবগঞ্জের কানসাটে দোকানপাট ও যানবাহন ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৯টি শটগানের গুলি ও একটি পিস্তলের ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
বগুড়া : শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার সীমান্ত এলাকা রূপীহারে জামায়াত ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে উভয়পক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছে। এ সময় একটি দোকানসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। শেরপুরে পুলিশের ওপর হামলা ও পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে জামায়াতকর্মীরা। বগুড়া সদর, শেরপুর, শাজাহানপুর, দুপচাঁচিয়া ও শিবগঞ্জে ১৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
পাবনা : জেলা শহর এবং প্রধান সড়ক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দখলে থাকলেও ঈশ্বরদী এবং পুষ্পপাড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছে ১০ জন। জেলার ৬ থানা পুলিশ ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সাভার : ভোর পৌনে ৭টার দিকে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রাবেয়া ক্লিনিকের সামনে অবস্থানরত বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজের একটি বাসে (ঢাকা-চ-৩১৩৫) হরতাল সমর্থকরা অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সাভার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ছাড়া রংপুর, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, বরিশাল, গাজীপুর, খুলনা, নোয়াখালী, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, রাঙামাটি, শেরপুর, টঙ্গী, কুড়িগ্রাম, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পিরোজপুর, ভোলা, কেশবপুর, মেহেরপুর, নবাবগঞ্জ (ঢাকা) ও কেরানীগঞ্জে ঢিলেঢালা হরতাল হয়েছে।
No comments