শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি-অনিয়ম-অবক্ষয় থেকে বাঁচাতে হবে
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্থির ও অশান্ত হয়ে উঠেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অস্থিরতা শিক্ষা-পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে নাগরিকরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। লক্ষণীয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় ধরনের ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই।
শিক্ষার্থীরা গুরুতর কোনো দাবি নিয়েও মাঠে সক্রিয় নন। তারপরও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সময়ে-সময়ে অস্থির হয়ে উঠছে; দীর্ঘ আন্দোলনের কারণে বন্ধ থাকছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্থিরতার পেছনে ক্ষমতাসীন দল সমর্থক ছাত্র সংগঠনের দখল-টেন্ডারবাজি-আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রশাসনের কর্মকাণ্ডও অস্থিরতার পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে। বলাবাহুল্য, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে পুনর্গঠিত হয়। সরকার সমর্থক ব্যক্তিরাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হন। বর্তমান সরকারামলেও তা-ই। নিয়োগ যে সরকারের আমলেই হোক, নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির মতাদর্শ যা-ই হোক না কেন; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজ করবেন_ সেটিই প্রত্যাশিত। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অনেকটাই তার উল্টো দেখা যাচ্ছে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিয়োগ বাণিজ্য, ক্রয়ে অনিয়ম, অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণ, এখতিয়ারবহির্ভূর্র্র্ত ক্ষমতা চর্চার দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছেন। তাদের এসব কর্মকাণ্ড শুধু বিরোধীদেরকেই নয়, নিজ দলের সমর্থক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরও অতিষ্ঠ করে তুলছে। শেষ পর্যন্ত তারা উপাচার্যসহ শীর্ষ ব্যক্তিদের পদত্যাগের দাবি তুলছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জন্ম নিচ্ছে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিকতম ঘটনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের। উপাচার্যসহ উচ্চপদস্থদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি অনেক লম্বা। অভিযোগ নিয়ে তদন্তও চলছে। আন্দোলনে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় তিন মাস অচল। আন্দোলন করতে গিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থী নামধারীদের দ্বারা প্রহৃত আর লাঞ্ছিতও হয়েছেন। কিন্তু কোনো সমাধান আসেনি। দিনের পর দিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেশনজট বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা তৈরি হলে তা সমাধানে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগ দরকার। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার সুষ্ঠু তদন্তও দরকার। কিন্তু যথাসময়ে যথাবিহিত পদক্ষেপের দেখা মেলে না। সমস্যা ফেলে রাখার কারণে শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি ওঠে। চূড়ান্ত পর্যায়ে এমন দাবিকে অসঙ্গত বলার উপায়ও নেই। কিন্তু অভিযুক্ত উপাচার্যের পদত্যাগই সব অনিয়ম ও অবৈধ ক্ষমতা চর্চার একমাত্র সমাধান কি না_ সে প্রশ্নও উঠবে। দুর্নীতি-অনিয়ম হলে তার বিহিত করতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তি পদে থাকতে পারবেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কোনো যুক্তিতেই দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথায় দুর্নীতি বাসা বাঁধলে আগামী দিনের নাগরিকরা কী শিখবে? নৈতিকতার অবক্ষয় কোন পর্যায়ে পেঁৗছাবে? শুধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নয়; সম্প্রতি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতেই হবে। প্রয়োজনে রাজনৈতিক নিয়োগ ও নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন পুনর্বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষার জন্য, এগুলোকে দুর্নীতি-অনিয়ম থেকে বাঁচানোর পদক্ষেপ এখনই নেওয়া দরকার।
No comments