বিশ্লেষণ- দ্বীপ নিয়ে চীন-জাপান বিরোধের নেপথ্যে...

পূর্ব চীন সাগরের একটি দ্বীপ এলাকা নিয়ে চীন ও জাপানের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। সংকট নিরসনে কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। আটটি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে এলাকাটি গঠিত। আর প্রতিটি দ্বীপই জনমানবহীন।


জনমানবহীন এই দ্বীপগুলো নিয়েই চীন-জাপান বিরোধ। জাপানের কাছে এই এলাকাটি সেনকাকু আর চীনের কাছে দিয়াওউ নামে পরিচিত।
সেনকাকু বা দিয়াওউ এলাকায় সাগর তলদেশে মূল্যবান প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাই উভয় দেশই চায় এলাকাটির দখল। সেখানকার মালিকানা নিয়ে জটিলতার ব্যাপারে দুটি দেশই ১৮৯৫ সালকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর বলে উল্লেখ করে থাকে। জাপানের দাবি, ওই বছরের জানুয়ারিতে তারা দ্বীপ এলাকাটির মালিকানা অর্জন করেছে। সে সময় তারা চীনকে পরাজিত করে এবং তাইওয়ানে উপনিবেশ স্থাপন করে। তখন থেকেই এলাকাটি ‘নানসেই শোতো’ (দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয়) দ্বীপপুঞ্জের অংশ হয়ে যায়। ওই এলাকাটি কখনো চীনের কিং রাজবংশের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে প্রমাণ মেলেনি।
এদিকে চীনের দাবি, বিরোধপূর্ণ এলাকাটি ‘প্রাচীনকাল’ থেকেই তাদের ভূখণ্ডের অংশ। জাপান ১৮৯৫ সালে এলাকাটি অবৈধভাবে দখল করে নেয়। তখন কিং সরকারকে জোর করে শিমোনোসেকি চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীন ওই ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করে। এ ক্ষেত্রে ১৯৪৩ সালের কায়রো ঘোষণা এবং ১৯৪৫ সালের পোটসড্যাম ঘোষণা অনুসরণ করা হয়।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দিয়াওউ ও আশপাশের দ্বীপগুলোর মালিকানা ইতিমধ্যে চীনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জাপানের দাবি, ১৯৫১ সালে স্বাক্ষরিত সান ফ্রান্সিসকো শান্তিচুক্তির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা যে ভূখণ্ড পরিত্যাগ করেছিল, সেনকাকু দ্বীপ এলাকা তার অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং চুক্তির তৃতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এলাকাটি নানসেই শোতো দ্বীপ এলাকার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ হয়েছিল। পরে ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র-জাপান রিউকিউ ও দাইতো দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে সেনকাকু এলাকাটিও জাপানের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে ১৯৭১ সালে চীন ও তাইওয়ান উভয় দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়াওউ বা সেনকাকু এলাকার মালিকানা দাবি করে। তখন থেকে বিষয়টি নিয়ে চীন ও জাপানের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ শুরু হয়। আর এই বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে কোনো পক্ষই নমনীয় হয়নি। আল-জাজিরা অনলাইন।

No comments

Powered by Blogger.