মাছের আড়তে বন্দী বিএডিসি কমপ্লেক্স!

‘এই জায়গা দখলে...দখলদার আড়তদার মনু ভাই!’ সিলেট নগরের শেখঘাট এলাকায় বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) কমপ্লেক্সের দেয়ালে এ রকম ‘দখলদার’ নাম দিয়ে শুরু হয়েছে মাছের আড়তের স্থাপনা তৈরির হিড়িক।


সম্মুখভাগসহ দেয়াল ব্যবহার করে গত প্রায় এক সপ্তাহে গড়ে ওঠা অন্তত দুই শতাধিক স্থাপনা বিএডিসি কমপ্লেক্সকে বন্দী করে ফেলেছে। বিএডিসি কর্তৃপক্ষও ঠেকাতে পারছে না এ দখলযজ্ঞ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি কার্যালয়ের দেয়াল ব্যবহার করে নির্মিত মাছের আড়ত তৈরির সুবিধায় কাটা হচ্ছে গাছও। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সেতু প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে মাছের বাজার অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর করার প্রয়োজনে শেখঘাটে বন বিভাগের নার্সারির জায়গা ব্যবহার করা হয়। মাছের বাজার স্থানান্তর প্রক্রিয়া শেষে নির্ধারিত স্থানের বাইরে চলে সরকারি দপ্তরগুলোর সমঞ্চুখভাগসহ দেয়াল দখল।
অভিযোগ রয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের স্থানীয় এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রভাবে ‘মৎস্য আড়তদার কল্যাণ সমিতি’র নামে চলছে দেয়াল ব্যবহারের দখলযজ্ঞ। সওজ সিলেটের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, সুরমা নদীর ওপর নির্মাণাধীন কাজীরবাজার সেতুর শেষ পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করতে কাজীরবাজার মাছের আড়তসহ মাছের বাজার স্থানান্তর করার প্রয়োজন পড়ে।
মাছের আড়তদার ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে শেখঘাটে বন বিভাগের ৭০ শতাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে মাছের বাজার স্থানান্তর করতে গত ২৮ মে সওজ সিলেটের প্রকৌশল বিভাগ থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু করে। ১৬ জুলাই ‘মৎস্য আড়তদার কল্যাণ সমিতি’র কাছে মাছের বাজারের কর্তৃত্ব দেওয়া হলে ১৭ জুলাই উদ্বোধন করা হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, বন বিভাগের নার্সারির জায়গায় স্থানান্তরিত মাছের বাজারের জন্য নির্ধারিত জায়গায় অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও আশপাশের এলাকার ফাঁকা জায়গাগুলো আড়তদারদের দখলে নিতে ওই দিন থেকে তৎপরতা চলে।
নার্সারির সামনে প্রায় সাত একর জায়গায় বিএডিসি কমপ্লেক্সের সিলেট আঞ্চলিক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়, ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প ও হিসাব নিরীক্ষা বিভাগ—এই তিনটি কার্যালয় নিয়ে গঠিত বিএডিসি কমপ্লেক্সের সমঞ্চুখের দেয়ালকে ব্যবহার করে স্থাপন করা হয়েছে মাছের আড়ত। তিন কার্যালয়ে প্রবেশের শুধু ফটক বাকি রেখে পুরোটাই যেন মাছের আড়তবন্দী। বিএডিসি কমপ্লেক্সের পূর্বদিকের দেয়ালজুড়ে মাছের স্থাপনা দেওয়ার জন্য কোথাও ‘দখলদার’ লিখে আবার কোনো কোনো স্থানে দেয়ালে ঠেস দিয়ে বাঁশ পুঁতে রেখে দখলে রাখা হয়েছে।
সমঞ্চুখের দেয়ালে সারিবদ্ধভাবে তৈরি মাছের আড়তের সুবিধার জন্য সড়কের পাশের তিনটি কদমগাছ কাটা হয়েছে। ‘আড়তদার মনু ভাই’ নামে দেয়াল দখলে রাখার কাজে ব্যস্ত একজন ব্যবসায়ী জানান, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনুমতি নিয়েই তাঁরা এ কাজ করছেন। দখল পাওয়ার পর স্থাপনাপ্রতি দৈনিক ভাড়া হিসেবে টাকা নেবে সমিতি।
করলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিকান্দার আলী বলেন, ‘মাছের বাজারের জন্য বন বিভাগের জায়গায় স্থানসংকুলান না হওয়ায় এই অস্থায়ী স্থাপনাগুলো গড়ে উঠেছে। এই স্থাপনাগুলো বড়জোর পাঁচ থেকে থেকে ছয় মাস পর্যন্ত থাকবে। তাই এ সময়টুকুর জন্য সবাইকে একটু কষ্ট করতে হবে।’
গত প্রায় এক সপ্তাহে দেয়াল ব্যবহার করে দুই শতাধিক স্থাপনা তৈরি হয়েছে জানিয়ে বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএডিসি কমপ্লেক্সের সীমানা দেয়ালের আশপাশে যে জায়গা ছিল সবটুকুতেই অস্থায়ী স্থাপনা উঠেছে। যেহেতু একটি সরকারি কার্যালয়ের পাশেই এ জায়গা, তাই এভাবে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় আমাদের নানা রকম সমস্যা হচ্ছে।’

No comments

Powered by Blogger.