নিয়োগে কোটা দাবি করে রংপুর মেডিকেলে তাণ্ডব- সেই সাংসদকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র by আরিফুল হক
কাঁচা বাঁশের লাঠিসহ ট্রাক ভর্তি লোক নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘেরাও করতে যান রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। বাধা দিলে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সঙ্গে বাধে সংঘর্ষ। এতে আহত হন সাংসদসহ অনেকে।
ঘেরাও ও সংঘর্ষের দৃশ্যচিত্র প্রচারিত হয় টেলিভিশনে। আলোকচিত্র ছাপা হয় সংবাদপত্রে। সারা দেশে আলোচিত হয় ঘটনাটি।
ওই ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র থেকে সাংসদ শাহরিয়ারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) চন্দন কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তদন্তকালে সাংসদ শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই এই মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এসআই চন্দন গত ২০ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও সাংসদকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চার মাস ধরে গোপন করে রাখেন। সম্প্রতি রংপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের কার্যালয় থেকে অভিযোগপত্র সংগ্রহ করার পর সাংসদকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি জানা যায়।
সাংসদ শাহরিয়ার (আসিফ শাহরিয়ার) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা।
হাসপাতালে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে পরদিন ২৯ জানুয়ারি প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ‘রংপুর মেডিকেলে সাংসদের তাণ্ডব’ শিরোনামে ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন ও প্রথম আলোর অনুসন্ধান অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ১৮১ জন কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ৪০ জন কর্মচারী নিয়োগ দিতে কোটা দাবি করেন সাংসদ শাহরিয়ার। কিন্তু হাসপাতালের পরিচালক রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন সাংসদ।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাংসদ শাহরিয়ার ও তাঁর পাঁচ শতাধিক কর্মী-সমর্থক বাঁশের লাঠি নিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন। পুলিশের বাধা সত্ত্বেও তাঁরা হাসপাতালে কর্মচারী নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ এনে পরিচালকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ-মিছিল করেন। বিক্ষোভকারীদের ছবি তুলতে গেলে সাত সাংবাদিককে বাঁশ দিয়ে পেটান শাহরিয়ারের লোকজন। একপর্যায়ে হাসপাতালের কর্মচারীরা এসে ধাওয়া দেন সাংসদ ও তাঁর লোকদের। হাসপাতালের ভেতরে চলে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ। একপর্যায়ে শাহরিয়ারকে মাটিতে ফেলে বাঁশ দিয়ে পেটান কয়েকজন ক্ষুব্ধ কর্মচারী।
এ ঘটনায় ১২ পুলিশ, সাত সাংবাদিক, হাসপাতালের কর্মচারী, জাতীয় পার্টির সমর্থকসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। আতঙ্কে রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে।
হাসপাতালে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় সাংসদ শাহরিয়ারসহ নয়জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান। ৩১ জানুয়ারি হাসপাতালের পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম, যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম, কর্মচারী নেতা মশিউরসহ নয়জনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করা হয়। সাংসদের পক্ষে সামসুল হক নামের এক ব্যক্তি এ মামলা করেন। গত মে মাসে দুটি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। সামসুলের করা মামলার অভিযোগপত্রে হাসপাতালের পরিচালক ও ঠিকাদারকে অব্যাহতি দিয়ে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়। আর মশিউরের করা মামলায় সাংসদসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়ে এজাহারভুক্ত চারজনসহ ২৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
নির্দোষ সাংসদ!: এসআই চন্দন তাঁর অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, ‘রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার সাহেব তাঁর নির্বাচনী এলাকার বেশ কিছু লোকজনকে নিয়ে ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তাঁরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থেকে স্মারকলিপি দিতে হাসপাতালের পরিচালক সাহেবের কক্ষের দিকে যেতে চাইলে কর্মচারীরা বাধা দেন। দুই পক্ষের তর্কবিতর্কের পর মারামারি লেগে যায়। এমপি সাহেব ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও মারদাঙ্গার ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা বা ইন্ধনের বিষয়ে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
সাংসদের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদের নেতৃত্বে ১০ ট্রাক ভর্তি লোকজন লাঠি নিয়ে হাসপাতালে এসে হামলা চালায়। হাসপাতালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য কর্মচারীরা বাধা দিলে সাংসদের লোকজনই হামলা চালায়। ঘটনাটি ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়। কিন্তু সেই মামলার অভিযোগপত্র থেকে তদন্ত কর্মকর্তা পরিকল্পিতভাবে সাংসদের নাম বাদ দিয়েছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই সময় ট্রাক ভর্তি লোকজন লাঠি নিয়ে হাসপাতাল ঘেরাও করেছিল। বাধা দিলে হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে, এ কথা সবারই জানা। মামলার অভিযোগপত্র থেকে সাংসদকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি পুলিশই বলতে পারবে।
সাংসদ হোসেন মকবুল শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম হয়। তাই জনগণকে নিয়ে পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করতে যাই। কিন্তু আমাদের শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে কর্মচারীরা হামলা চালায়। এতে আমিও আহত হয়েছি। পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এখানে আমারই বা কী করার আছে।’
ওই ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র থেকে সাংসদ শাহরিয়ারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) চন্দন কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তদন্তকালে সাংসদ শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই এই মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এসআই চন্দন গত ২০ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও সাংসদকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চার মাস ধরে গোপন করে রাখেন। সম্প্রতি রংপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের কার্যালয় থেকে অভিযোগপত্র সংগ্রহ করার পর সাংসদকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি জানা যায়।
সাংসদ শাহরিয়ার (আসিফ শাহরিয়ার) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা।
হাসপাতালে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে পরদিন ২৯ জানুয়ারি প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ‘রংপুর মেডিকেলে সাংসদের তাণ্ডব’ শিরোনামে ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন ও প্রথম আলোর অনুসন্ধান অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ১৮১ জন কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ৪০ জন কর্মচারী নিয়োগ দিতে কোটা দাবি করেন সাংসদ শাহরিয়ার। কিন্তু হাসপাতালের পরিচালক রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন সাংসদ।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাংসদ শাহরিয়ার ও তাঁর পাঁচ শতাধিক কর্মী-সমর্থক বাঁশের লাঠি নিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন। পুলিশের বাধা সত্ত্বেও তাঁরা হাসপাতালে কর্মচারী নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ এনে পরিচালকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ-মিছিল করেন। বিক্ষোভকারীদের ছবি তুলতে গেলে সাত সাংবাদিককে বাঁশ দিয়ে পেটান শাহরিয়ারের লোকজন। একপর্যায়ে হাসপাতালের কর্মচারীরা এসে ধাওয়া দেন সাংসদ ও তাঁর লোকদের। হাসপাতালের ভেতরে চলে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ। একপর্যায়ে শাহরিয়ারকে মাটিতে ফেলে বাঁশ দিয়ে পেটান কয়েকজন ক্ষুব্ধ কর্মচারী।
এ ঘটনায় ১২ পুলিশ, সাত সাংবাদিক, হাসপাতালের কর্মচারী, জাতীয় পার্টির সমর্থকসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। আতঙ্কে রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে।
হাসপাতালে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় সাংসদ শাহরিয়ারসহ নয়জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান। ৩১ জানুয়ারি হাসপাতালের পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম, যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম, কর্মচারী নেতা মশিউরসহ নয়জনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করা হয়। সাংসদের পক্ষে সামসুল হক নামের এক ব্যক্তি এ মামলা করেন। গত মে মাসে দুটি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। সামসুলের করা মামলার অভিযোগপত্রে হাসপাতালের পরিচালক ও ঠিকাদারকে অব্যাহতি দিয়ে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়। আর মশিউরের করা মামলায় সাংসদসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়ে এজাহারভুক্ত চারজনসহ ২৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
নির্দোষ সাংসদ!: এসআই চন্দন তাঁর অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, ‘রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার সাহেব তাঁর নির্বাচনী এলাকার বেশ কিছু লোকজনকে নিয়ে ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তাঁরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থেকে স্মারকলিপি দিতে হাসপাতালের পরিচালক সাহেবের কক্ষের দিকে যেতে চাইলে কর্মচারীরা বাধা দেন। দুই পক্ষের তর্কবিতর্কের পর মারামারি লেগে যায়। এমপি সাহেব ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও মারদাঙ্গার ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা বা ইন্ধনের বিষয়ে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
সাংসদের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদের নেতৃত্বে ১০ ট্রাক ভর্তি লোকজন লাঠি নিয়ে হাসপাতালে এসে হামলা চালায়। হাসপাতালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য কর্মচারীরা বাধা দিলে সাংসদের লোকজনই হামলা চালায়। ঘটনাটি ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়। কিন্তু সেই মামলার অভিযোগপত্র থেকে তদন্ত কর্মকর্তা পরিকল্পিতভাবে সাংসদের নাম বাদ দিয়েছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই সময় ট্রাক ভর্তি লোকজন লাঠি নিয়ে হাসপাতাল ঘেরাও করেছিল। বাধা দিলে হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে, এ কথা সবারই জানা। মামলার অভিযোগপত্র থেকে সাংসদকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি পুলিশই বলতে পারবে।
সাংসদ হোসেন মকবুল শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম হয়। তাই জনগণকে নিয়ে পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করতে যাই। কিন্তু আমাদের শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে কর্মচারীরা হামলা চালায়। এতে আমিও আহত হয়েছি। পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এখানে আমারই বা কী করার আছে।’
No comments