আস্থাহীনতার সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে- নির্বাক নির্বাচন কমিশন

অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে ছয় মাস আগে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও এই কমিশন ঘুমিয়ে পড়েছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা হয়নি।


এমনকি এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলেও মনে হয় না। সবচেয়ে উদ্বেগজনক, চারজন কমিশনারের মধ্যে কোনো স্বাধীন কণ্ঠ আছে বলে মনে হয় না। তাঁরা তাঁদের বর্তমান আচরণ বজায় রাখলে সরকারের জন্যও বোঝা হয়ে উঠতে পারেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত কোনো ইস্যু খুঁজে পায় না, যা নিয়ে তারা সংলাপ করতে পারে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকেও যেন একই রাহুতে পেয়েছে। তাদের নিষ্ক্রিয়তা ও নীরবতা অস্বস্তিকর বললে অত্যুক্তি হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে বহাল থাকা অবস্থায় ইসি যতটা সক্রিয় থেকেছে, এখন সেটাও লক্ষ করা যাচ্ছে না। অথচ, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা চলছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের যেন কিছুই করার নেই। নাগরিক সমাজের সঙ্গে সংলাপেও তাদের সীমাহীন অনীহা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের মন্তব্য রীতিমতো দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো রোডম্যাপের কথা আপাতত আমরা ভাবছি না।’ ‘আপাতত’ না ভাবলে কবে ভাববেন, সেটা তো পরিষ্কার করতে হবে। এ রকম নিস্পৃহ মনোভাব দেখিয়ে চললে তাঁদের সামর্থ্য, সততা ও যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় দেখা দিতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে জাতিকে অতীতে অনেক মাশুল দিতে হয়েছে। এর পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগে বা পরের ব্যবধান মাত্র ৯০ দিনের। দিন-তারিখের অজুহাতে নির্বাচন কমিশনের আনুষঙ্গিক কাজ ফেলে রাখা বা নিষ্ক্রিয় থাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর সঙ্গে সংলাপ, নির্বাচনী আইনের অসংগতি দূর করা, ভোটার তালিকা ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন হালনাগাদকরণ, চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন, সংসদ নির্বাচনী আসনের সীমানাবিন্যাস ইত্যাদি বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু ও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে। এবং তা অবশ্যই জনগণকে জানাতে হবে।
নির্বাচনকালে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা গ্রহণে সাবেক নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে বর্তমান কমিশন দ্বিমত করলে তারা তার কারণ উল্লেখপূর্বক উন্নত কোনো বিকল্প প্রস্তাব জনগণের সামনে পেশ করতে পারে। গত ছয় মাসে নির্বাচন কমিশন কী করেছে, সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা করা প্রয়োজন। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে এই কমিশনের কোনো কর্মপরিকল্পনা আদৌ রয়েছে কি না, এবং তারা বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় আদৌ কোনো পরিবর্তন আনতে চায় কি না, সেটা জনগণকে জানানো হয়নি। নির্বাচন কমিশনের কাজে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আস্থার সংকট কাটাতে এখনই চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ।

No comments

Powered by Blogger.