চারদিক- অলিম্পিকের সিনেমাগুলো by বদিউজ্জামান
ঘটনাটা ১৯৮০ সালের মস্কো অলিম্পিকের। ছেলেদের আইস হকিতে ফেবারিট তখন যুক্তরাষ্ট্র। সেই যুক্তরাষ্ট্রকেই কিনা ঘোল খাইয়ে ছাড়ল সোভিয়েত ইউনিয়ন। তাদের হারিয়ে জিতল অলিম্পিকের সোনা।
ব্যাপারটা অবিশ্বাস্যই! আর এই অবিশ্বাস্য ঘটনা কীভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছিল, সেটা নিয়েই ২০০৪ সালে তৈরি হলো অলিম্পিক-ভিত্তিক সিনেমা মিরাকল! অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হওয়ার আগে এই সোভিয়েত ইউনিয়নই জিতে এসেছিল টানা ৪২টি ম্যাচ। সিনেমাটির নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন কার্ট রাসেল, দলের কোচ হার্ব ব্রুকসের চরিত্রে।
শুধু মিরাকলই নয়, অলিম্পিক গেমসের ওপর বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে যুগে যুগে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি উপভোগ্য সিনেমা—ইন্টারন্যাশনাল ভেলভেট, চ্যারিওটস অব ফায়ার, মিউনিখ, প্রিফন্টেইন, দি কাটিং এজ, ব্লেডস অব গ্লোরি, উইদআউট লিমিটস, পারসোনাল বেস্ট, কুল রানিংস ও ইট হ্যাপেনড ইন এথেন্স। সাদা-কালো যুগের সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাইন অ্যান্ড থ্রি-ফিফথস সেকেন্ডস, মিলিয়ন ডলার লেগস, এ মিলিয়ন টু ওয়ান, জিম থর্প-অল আমেরিকান।
ইন্টারন্যাশনাল ভেলভেট ছবিতে দেখা গেছে একজন সারা ব্রাউনের অলিম্পিকের সোনা জয়ের গল্প। সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা দুজনকেই হারিয়ে বড়ই বিপাকে পড়েছিল ছোট্ট সারা ব্রাউন। ঠিক তখনই ত্রাতা হয়ে এলেন খালা ভেলভেট ব্রাউন ও খালু জন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সারাকে ইংল্যান্ডে নিয়ে এলেন ভেলভেট। সারাকে কিনে দিলেন একটি ছোটখাটো ঘোড়া। দি পাই নামের ঘোড়াটিকে সারা ডাকত আরিজোনা পাই বলে। তো সেই পাইকে নিয়েই সারা দিন খেলত সারা। একবার ঘোড়দৌড়েও যোগ দিল সে এবং জিতেও গেল। ধীরে ধীরে ঘোড়দৌড়ে আরও ভালো করতে লাগল সারা—সুযোগ পেল ব্রিটিশ অলিম্পিক দলে। স্বপ্ন দেখত, একদিন অলিম্পিকে সোনা জিতবে সারা। পুরো অলিম্পিক দলে সারাই ছিল সবচেয়ে ছোট। তাই একটু বাড়তি আদরই পেত কোচ ক্যাপ্টেন জনসনের কাছে। তিন দিনের ইভেন্টে শেষ পর্যন্ত গ্রেট ব্রিটেনের হয়ে সোনা জিতল সারা। কিন্তু একপর্যায়ে আমেরিকান প্রতিযোগীর সঙ্গে গড়ে উঠল ভালোবাসার সম্পর্ক। এবং তার সঙ্গেই ফিরে গেল যুক্তরাষ্ট্রে। যাওয়ার আগে তার সোনার পদকটা দিয়ে যায় খালাকে। তবে যাওয়ার আগে খালার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে, ‘স্কট, আমি তোমাকে আমার মা-বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে চাই।’
চ্যারিওটস অব ফায়ারের গল্পটি মূলত দুই ব্রিটিশ অ্যাথলেট হ্যারল্ড আব্রাহাম ও এরিক লিডেলকে নিয়ে। ধর্মপ্রাণ এরিক লিডেল ১৯২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত খেলতে অস্বীকৃতি জানান। ১০০ মিটার স্প্রিন্ট হওয়ার কথা ছিল রোববার, কিন্তু ওই দিন খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী লিডেল চার্চে ধর্মীয় আচার পালনের জন্য ট্র্যাকেই নামতে রাজি হননি। এমনকি তখনকার প্রিন্স অব ওয়েলস এবং ব্রিটিশ অলিম্পিক কমিটির শত অনুরোধও মন গলাতে পারেনি লিডেলকে। ওইদিন তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্যারিসের একটি চার্চে ধর্মীয় বক্তৃতা দিতে। পরে অবশ্য ৪০০ মিটারে সোনা জেতেন লিডেল। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮১ সালে, চারটি বিভাগে জিতেছিল অস্কার পুরস্কার।
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। সেই মৃত্যুর প্রতিশোধের কাহিনি নিয়েই ২০০৫ সালে তৈরি হয় বিখ্যাত ছবি মিউনিখ। একই বছরের আরেকটি ঘটনা নিয়ে তৈরি হয় প্রিফন্টেইন সিনেমাটি। অলিম্পিক শুরুর আগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা প্রিফন্টেইন ভালোবাসতেন মেয়েদের। ভালোবাসতেন পার্টি। কিন্তু এসবই কাল হয় তাঁর, অলিম্পিকে গিয়ে হন চতুর্থ। তিন বছর পর অবশ্য এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান মাত্র ২৪ বছর বয়সী এই অলিম্পিয়ান। তাঁকে ঘিরেই এগিয়ে চলে কাহিনি, পুরো সিনেমাই তাঁকে নিয়ে। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি। সমকামী মহিলা অ্যাথলেটদের গল্প নিয়ে বানানো হয়েছে পারসোনাল বেস্ট সিনেমাটি, ১৯৮২ সালে।
আগামীকাল লন্ডনে শুরু হচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনের মহাযজ্ঞ অলিম্পিক গেমস। লন্ডনে যেতে না পারেন, অলিম্পিকের কিছু সিনেমা না হয় অবসরের সঙ্গী হোক আপনার।
বদিউজ্জামান
শুধু মিরাকলই নয়, অলিম্পিক গেমসের ওপর বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে যুগে যুগে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি উপভোগ্য সিনেমা—ইন্টারন্যাশনাল ভেলভেট, চ্যারিওটস অব ফায়ার, মিউনিখ, প্রিফন্টেইন, দি কাটিং এজ, ব্লেডস অব গ্লোরি, উইদআউট লিমিটস, পারসোনাল বেস্ট, কুল রানিংস ও ইট হ্যাপেনড ইন এথেন্স। সাদা-কালো যুগের সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাইন অ্যান্ড থ্রি-ফিফথস সেকেন্ডস, মিলিয়ন ডলার লেগস, এ মিলিয়ন টু ওয়ান, জিম থর্প-অল আমেরিকান।
ইন্টারন্যাশনাল ভেলভেট ছবিতে দেখা গেছে একজন সারা ব্রাউনের অলিম্পিকের সোনা জয়ের গল্প। সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা দুজনকেই হারিয়ে বড়ই বিপাকে পড়েছিল ছোট্ট সারা ব্রাউন। ঠিক তখনই ত্রাতা হয়ে এলেন খালা ভেলভেট ব্রাউন ও খালু জন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সারাকে ইংল্যান্ডে নিয়ে এলেন ভেলভেট। সারাকে কিনে দিলেন একটি ছোটখাটো ঘোড়া। দি পাই নামের ঘোড়াটিকে সারা ডাকত আরিজোনা পাই বলে। তো সেই পাইকে নিয়েই সারা দিন খেলত সারা। একবার ঘোড়দৌড়েও যোগ দিল সে এবং জিতেও গেল। ধীরে ধীরে ঘোড়দৌড়ে আরও ভালো করতে লাগল সারা—সুযোগ পেল ব্রিটিশ অলিম্পিক দলে। স্বপ্ন দেখত, একদিন অলিম্পিকে সোনা জিতবে সারা। পুরো অলিম্পিক দলে সারাই ছিল সবচেয়ে ছোট। তাই একটু বাড়তি আদরই পেত কোচ ক্যাপ্টেন জনসনের কাছে। তিন দিনের ইভেন্টে শেষ পর্যন্ত গ্রেট ব্রিটেনের হয়ে সোনা জিতল সারা। কিন্তু একপর্যায়ে আমেরিকান প্রতিযোগীর সঙ্গে গড়ে উঠল ভালোবাসার সম্পর্ক। এবং তার সঙ্গেই ফিরে গেল যুক্তরাষ্ট্রে। যাওয়ার আগে তার সোনার পদকটা দিয়ে যায় খালাকে। তবে যাওয়ার আগে খালার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে, ‘স্কট, আমি তোমাকে আমার মা-বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে চাই।’
চ্যারিওটস অব ফায়ারের গল্পটি মূলত দুই ব্রিটিশ অ্যাথলেট হ্যারল্ড আব্রাহাম ও এরিক লিডেলকে নিয়ে। ধর্মপ্রাণ এরিক লিডেল ১৯২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত খেলতে অস্বীকৃতি জানান। ১০০ মিটার স্প্রিন্ট হওয়ার কথা ছিল রোববার, কিন্তু ওই দিন খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী লিডেল চার্চে ধর্মীয় আচার পালনের জন্য ট্র্যাকেই নামতে রাজি হননি। এমনকি তখনকার প্রিন্স অব ওয়েলস এবং ব্রিটিশ অলিম্পিক কমিটির শত অনুরোধও মন গলাতে পারেনি লিডেলকে। ওইদিন তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্যারিসের একটি চার্চে ধর্মীয় বক্তৃতা দিতে। পরে অবশ্য ৪০০ মিটারে সোনা জেতেন লিডেল। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮১ সালে, চারটি বিভাগে জিতেছিল অস্কার পুরস্কার।
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। সেই মৃত্যুর প্রতিশোধের কাহিনি নিয়েই ২০০৫ সালে তৈরি হয় বিখ্যাত ছবি মিউনিখ। একই বছরের আরেকটি ঘটনা নিয়ে তৈরি হয় প্রিফন্টেইন সিনেমাটি। অলিম্পিক শুরুর আগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা প্রিফন্টেইন ভালোবাসতেন মেয়েদের। ভালোবাসতেন পার্টি। কিন্তু এসবই কাল হয় তাঁর, অলিম্পিকে গিয়ে হন চতুর্থ। তিন বছর পর অবশ্য এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান মাত্র ২৪ বছর বয়সী এই অলিম্পিয়ান। তাঁকে ঘিরেই এগিয়ে চলে কাহিনি, পুরো সিনেমাই তাঁকে নিয়ে। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি। সমকামী মহিলা অ্যাথলেটদের গল্প নিয়ে বানানো হয়েছে পারসোনাল বেস্ট সিনেমাটি, ১৯৮২ সালে।
আগামীকাল লন্ডনে শুরু হচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনের মহাযজ্ঞ অলিম্পিক গেমস। লন্ডনে যেতে না পারেন, অলিম্পিকের কিছু সিনেমা না হয় অবসরের সঙ্গী হোক আপনার।
বদিউজ্জামান
No comments