ওবামা-রমনি সমানে সমান

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা এবং জনমত জরিপগুলো এখন মানুষের আগ্রহের তুঙ্গে। এই নির্বাচনী উত্তেজনা চরমে নিয়ে গেছে সর্বশেষ প্রকাশিত এক জনমত জরিপের ফল।


এনবিসি নিউজ ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বারাক ওবামা ও রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি সমানে সমান অবস্থানে আছেন। গতকাল সোমবার (বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টায়) সর্বশেষ প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের আগে এই জরিপের ফল ভোটারদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সময় গতকাল রাত ৯টায় ওবামা ও রমনির মধ্যে তৃতীয় ও সর্বশেষ টেলিভিশন বিতর্ক হয়। গত ৩ অক্টোবর ফ্লোরিডায় প্রথম বিতর্কে রমনি তুখোড় যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে ওবামাকে পরাস্ত করেন। এরপর ১৬ অক্টোবর নিউ ইয়র্কে দ্বিতীয় বিতর্কে ওবামা রমনির বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ান। বাক-চাতুর্যে রমনিকে পরাজিত করেন তিনি। তাঁদের সমানে সমান অবস্থানের কারণেই তৃতীয় ও শেষ বিতর্ককে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ফ্লোরিডার বোকা রেটন শহরের লেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ৯০ মিনিটের এই বিতর্ককে ২০১২ সালের নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম আকর্ষণ বিবেচনা করা হচ্ছিল। ৬ নভেম্বর ভোটের আগে এটাই ওবামা ও রমনির শেষ মুখোমুখি সাক্ষাৎ।
শেষ বিতর্কে দুই প্রার্থীর সম্ভাব্য বক্তব্যের বিষয়গুলো তাঁদের নিজ নিজ মহড়া থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে আগেই। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে পররাষ্ট্রনীতি। এর বাইরে লিবিয়ায় নিরাপত্তাব্যবস্থায় ত্রুটি, ইরানকে নিয়ন্ত্রণে আনার উপায়, সিরিয়ার চলমান সংকট সমাধান, উদীয়মান শক্তি হিসেবে চীনের মোকাবিলা এবং আফগান যুদ্ধের অবসান বিষয়েও যুক্তি-তর্ক হবে বলে আশা করা হয়।
ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রমনি সাধারণত অর্থনৈতিক বিষয়েই কথা বলতে আগ্রহী। তবে গত ১১ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন কনস্যুলেটে হামলার বিষয়ে এবার ওবামাকে আরো একহাত দেখে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। বেনগাজি হামলা ও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ওবামার সঙ্গে রমনি তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়াবেন বলে জানা গেছে।
তবে রমনিকে মোকাবিলা করে ওবামার জয়ী হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত এক জরিপে, পররাষ্ট্রনীতি ইস্যুতে রমনির চেয়ে চার পয়েন্ট এগিয়ে আছেন ওবামা। ইরাকযুদ্ধের সমাপ্তি এবং আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন হত্যায় নেতৃত্ব দেওয়ার ঘটনা আমেরিকানদের মধ্যে সেনাপতি হিসেবে ওবামার ভাবমূর্তি বাড়িয়েছে। রমনি ক্ষমতায় এলে বৈদেশিক সংকট সমাধানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশের আমলের ব্যর্থতা ও যুক্তরাষ্ট্রকে ঝামেলায় জড়িয়ে ফেলার নমুনাই আবার দেখতে পাবে বলে ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করতে পারেন তিনি। পররাষ্ট্রনীতি দিয়ে অর্থনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকারও চেষ্টা করতে পারেন তিনি। ওবামার সাবেক চিফ অব স্টাফ এবং শিকাগোর মেয়র র‌্যাম এমানুয়েল গত রবিবার বলেন, 'পররাষ্ট্র নীতিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকেও সামলে উঠতে পারব আমরা।'
এদিকে গত রবিবার প্রকাশিত এক জরিপে এনবিসি ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, দোদুল্যমান ভোটারদের মধ্যে ওবামা ও রমনি সমান সমান অবস্থানে আছেন। দুজনই ৪৭ পয়েন্ট পেয়েছেন। ১৭ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত এক হাজার নিবন্ধিত ভোটার এবং দোদুল্যমান ভোটারের মধ্যে এই জরিপ হয়। প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক শুরু হওয়ার আগে এনবিসি ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের পূর্ববর্তী জরিপে, ওবামা রমনির চেয়ে তিন পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। সূত্র : এএফপি, গার্ডিয়ান।

No comments

Powered by Blogger.