১৮ সড়ক ও মহাসড়ক এখনো ঝুঁকিপূর্ণ by পার্থ সারথি দাস

ঈদুল ফিতরের সময় যে অবস্থা ছিল, এখনো সেই রকম অবস্থায় আছে বেশির ভাগ সড়ক-মহাসড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ কমপক্ষে ১৮টি সড়ক-মহাসড়ক এবার যান চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।


যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহা সামনে রেখে ৪৬টি সড়ক-মহাসড়ক চিহ্নিত করে সেগুলোতে 'পরিদর্শন অভিযানে' নেমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দেখতে পাচ্ছেন, বেশির ভাগ সড়ক আগের মতোই আছে। পরিদর্শন এখনো শেষ হয়নি। ঈদুল ফিতরের আগেও এ রকম পরিদর্শন অভিযান চালানো হয়েছিল।
এদিকে ঈদুল আজহার সময় মহাসড়কে তীব্র যানজট এড়াতে পাঁচটি বিকল্প সড়ক চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেটসহ কমপক্ষে ১৮টি সড়ক-মহাসড়ক এবার যান চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া দুই শতাধিক জেলা সড়কও বেহাল।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক গত বৃহস্পতিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আকস্মিক বন্যা ও বর্ষার কারণে কিছু সড়ক অপ্রত্যাশিতভাবে চলাচলের উপযোগিতা হারিয়েছিল, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়কের মানসম্মত কাজ আমরা ঈদের পর শুরু করব। আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ হবে।'
জানা গেছে, ঈদে বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৪৬টি সড়ক-মহাসড়ক পরিদর্শনের জন্য ১৫টি দল গঠন করা হয়েছে গত ২৬ সেপ্টেম্বর। এ পরিদর্শন পর্ব এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। প্রতিটি দলে নেতৃত্বে থাকছেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তবে পরিদর্শনে গিয়ে বিভিন্ন সড়কের নাজুক অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের আগে পরিদর্শনে সড়ক-মহাসড়কের যে অবস্থা দেখেছিলেন কর্মকর্তারা, এবারও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা তেমনই দেখতে পাচ্ছেন।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) সফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল ঈদুল ফিতরের আগে ১৩ থেকে ১৫ জুলাই ঢাকা-সিলেট-জাফলং মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেছিল। ওই সময় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে শোল্ডার (সড়কের মূল পাকা অংশের দুই পাশের আধা পাকা বা কাঁচা অংশ) ভাঙা অবস্থায় দেখতে পেয়েছিল পরিদর্শকদল। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের একই কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল একই মহাসড়ক পরিদর্শনে যায়। এবারও তাঁরা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙা শোল্ডার দেখতে পান।
জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোহাম্মদ তারেক ইকবাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের জেলায় সব মিলিয়ে মহাসড়ক ১২৪ কিলোমিটার। মহাসড়কের শোল্ডার বিভিন্ন স্থানে যে ভেঙে গেছে তা মেরামত করতে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে পরিদর্শকদল। পেভমেন্ট (গাড়ি চলাচলের পাকা অংশ) রক্ষণাবেক্ষণে ব্যস্ত ছিলাম। তাই শোল্ডার মেরামত করতে পারিনি। আমরা শুষ্ক মৌসুমে এই কাজ করব।'
সওজের প্রকৌশলী সন্তোষ কুমার রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, সড়কের শোল্ডার সংরক্ষণ করা জরুরি; না হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ছাড়া মূল রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক অবশ্য বলেন, 'ঈদের তিন দিন আগেই সব মহাসড়ক ও সড়ক যান চলাচলের উপযোগী করতে আমরা সচেষ্ট। ঈদের আগের শুক্র ও শনিবারও বিভিন্ন স্থানে প্রকৌশলীরা মূল রক্ষণাবেক্ষণকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। আমরা ঢাকা থেকে আসা-যাওয়ার জন্য গুরুত্ব বিবেচনা করে বিভিন্ন মহাসড়ক যানবাহন চলাচলের উপযোগী করছি। জেলাওয়ারি পরিস্থিতি নিয়েও প্রকৌশলীদের নিয়ে পর্যালোচনা সভা করছি।'
পাঁচ বিকল্প সড়ক : যানজট এড়াতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এবার দুটো করে মোট চারটি বিকল্প সড়ক থাকবে। বাবুবাজার ব্রিজ-ইকুরিয়া-পোস্তগোলা ব্রিজ-পাগলা-চাষাঢ়া-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড-সাইনবোর্ড হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্যবহার করা যাবে। একই মহাসড়কের কিছু অংশের অন্য বিকল্প সড়ক থাকবে টঙ্গী স্টেশন রোড-শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু-মিরেরবাজার-উলুখেলা-কাঞ্চন ব্রিজ-ভুলতা-মদনপুর হয়ে চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার ক্ষেত্রে যাত্রাবাড়ী হয়ে ডেমরা সড়ক ধরে সুলতানা কামাল সেতু হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া টঙ্গী স্টেশন রোড-শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু-মিরেরবাজার-ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা হয়ে সিলেট যাওয়া যাবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে। নরসিংদী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটগামী ছোট গাড়ি চলাচলের জন্য ব্যবহার করা যাবে খিলগাঁও-বাসাবো-মাদারটেক-নন্দীপাড়া ব্রিজ-শেকের জায়গা-আমুলিয়া-স্টাফ কোয়ার্টার-সুলতানা কামাল সেতু হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক।
বিকল গাড়ি সরাতে রেকার আছে মাত্র চারটি : ১১ হাজার ৮০৬ কিলোমিটার মহাসড়কের নিরাপত্তা রক্ষায় রয়েছে মহাসড়ক পুলিশ। জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এবার ঈদুল আজহায় যাত্রীদের বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে মহাসড়ক পুলিশ। কম ছুটি থাকায় মহাসড়কে এবার যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ পড়বে ধরে নিয়ে মহাসড়ক পুলিশ ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট নিরসন এবং দুর্ঘটনা রোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে মহাসড়ক পুলিশের কাছ থেকে জানা গেছে, বিকল গাড়ি সরাতে কমপক্ষে ১১টি রেকারের প্রয়োজন হলেও তাদের আছে মাত্র চারটি।
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই ঈদ মৌসুমে দিনে একাধিক গাড়ি বিকল হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অনেক দূর থেকে রেকার আনতেই সময় চলে যায়। অন্যদিকে বিকল গাড়ির জন্য যানজট বেড়েই চলে।
মহাসড়ক পুলিশের মহাপরিচালক হুমায়ুন কবীর বিষয়টি স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা আমাদের সাধ্যমতো সচেষ্ট থাকব। গত ঈদুল ফিতরে মহাসড়কে যাত্রীর চাপ ছিল কম। কারণ ছুটির দিন ছিল বেশি। কিন্তু এবার ছুটি কম থাকায় ঈদের আগের দুই দিন বেশি চাপ পড়বে। মহাসড়কে অনেক ক্ষেত্রে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে ঘটে দুর্ঘটনা। এ জন্য মহাসড়ক পুলিশ গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৩২টি স্পিডগান রাখবে।'

No comments

Powered by Blogger.