বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ-আইনের নীতিগত অনুমোদন
ডেসটিনি গ্রুপে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান করতে গিয়ে দেশের সব বেসরকারি কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। কম্পানি আইন, ১৯৯৪ সংশোধন করে তাতে এমনই একটি ধারা যোগ
করতে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য চূড়ান্ত খসড়া পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার সেটির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। যেকোনো কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার সরকারি এই ক্ষমতার অপব্যবহার হবে- ব্যবসায়ীদের এ আতঙ্কের বিষয় বিবেচনায় নিয়েই আইনটি সংশোধনের জন্য তৈরি খসড়াটির চূড়ান্ত অনুমোদন না দিয়ে নীতিগত অনুমোদন পর্যন্ত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রিসভা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে খসড়াটি আবারও চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। সূত্র জানায়, আইনের খসড়াটি নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে ঈদের আগেই বসবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, কম্পানি আইন সংশোধনে মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। তবে আবারও ভালো করে খুঁটিনাটি দেখে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ডেসটিনি ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কম্পানি আইন সংশোধন করে ক্ষেত্রবিশেষে প্রশাসক নিয়োগের বিধান করছে। প্রচলিত আইনে কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগের কোনো বিধান নেই। এ জন্য কম্পানি আইন সংশোধন করে প্রশাসক নিয়োগের বিধান করা হচ্ছে। এ আইনের যাতে কোনো অপব্যবহার না হয়, সেই রক্ষাকবচ রাখার জন্যও মন্ত্রিসভা বিশেষভাবে নির্দেশনা দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া আইনটি আবার মন্ত্রিসভায় আসবে। তারপর সংসদ না থাকলে অধ্যাদেশ জারি করা হবে।
মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা কম্পানি আইনের নতুন '২০২ক' ধারায় এক বা একাধিক প্রশাসক নিয়োগের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, 'যদি সরকারের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, (ক)(১) কোম্পানির ব্যবসা ইহার পাওনাদার, শেয়ারহোল্ডার বা অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রতারণার জন্য পরিচালিত হইতেছে অথবা ইহার প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রতারণা বা অবৈধ উদ্দেশ্যে অথবা কোন সদস্যকে হয়রানির উদ্দেশ্যে অথবা কোম্পানিটি প্রতারণা বা অবৈধ উদ্দেশ্যে গঠিত হইয়াছে; অথবা (২) কোম্পানিটি গঠন বা ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ প্রতারণা, অবৈধ কর্ম সম্পাদন অথবা অন্য কোন সদস্যের প্রতি অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত; অথবা (খ) জনস্বার্থে এবং শেয়ারহোল্ডার ও পাওনাদারদের স্বার্থ সুরক্ষার প্রয়োজন।'
২০২ক-এর ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, 'শর্ত থাকে যে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে কোম্পানির কার্যক্রম বিষয়ে কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে উপধারা (১)-এর অধীন কোন প্রশাসক নিয়োগ করা যাইবে না।'
একেক কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই প্রশাসকের কর্মপরিধি, মেয়াদ বা যোগ্যতা প্রয়োজনের নিরিখে নির্ধারণ করে গেজেট করবে সরকার।
খসড়া আইনের (৫) নম্বর উপধারায় প্রশাসকের দায়মুক্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, 'এই আইনের অধীনে প্রশাসক বা তাহার অধীনস্থ কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরল বিশ্বাসে সম্পাদিত হইয়াছে এইরূপ কোন কার্যের ফলে কেহ ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা উহার সম্ভাবনা থাকিলে, তাহা দেশের প্রচলিত কোন আইনে আমলযোগ্য হইবে না।'
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডেসটিনি গ্রুপের আর্থিক অনিয়ম, প্রতারণা ও মুদ্রাপাচারের অভিযোগ রয়েছে গ্রুপটির মূল তিন প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি ২০০০, ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে। এ তিনটি প্রতিষ্ঠান কম্পানি আইনে নিবন্ধিত হলেও এমএলএম নিয়ন্ত্রণ অ্যাক্ট হওয়ার পর প্রথম দুটি এ আইনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। আর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি পরিচালিত হয় সমবায় আইন দ্বারা। তাই এ দুটি আইনে প্রশাসক নিয়োগের ধারা যোগ করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তা না করে কম্পানি আইনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ধারা যোগ করা হলে রাজনৈতিকভাবে ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও কম্পানি ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাঁরা বলছেন, আইনের খসড়ায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার যেসব শর্তের কথাই উল্লেখ থাকুক না কেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকার তার স্বার্থ হাসিল করতে এ আইনের অপব্যবহার করতে পারবে।
এ দুটি আইনের মধ্যে এমএলএম নিয়ন্ত্রণ অ্যাক্ট নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর খসড়াটি ছাড়পত্রের জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আর সমবায় আইনেরও সংশোধনী আনছে সরকার। খসড়া সংশোধনীটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন, আইন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পাওয়ার পর এখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রয়েছে। সেখান থেকে খসড়াটি বিল আকারে সংসদে উত্থাপন হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু মনে করেন, ডেসটিনি গ্রুপে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার জন্য কম্পানি আইন সংশোধন করার কোনো দরকারই নেই। সরকার যে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) নিয়ন্ত্রণ অ্যাক্ট-২০১২ করছে, তাতে ও বিদ্যমান সমবায় আইনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ধারা সংযোজন করতে পারে। তা না করে সরকার কম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে দেশের সব কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা নিলে তা নানাভাবেই নানা সরকার অপব্যবহার করার সুযোগ পাবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে এনবিআরের চেয়ারম্যান পদে বদলি হওয়া (বাণিজ্যসচিব) মো. গোলাম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোন রিসিভ করার অনুরোধ করে তাঁকে এসএমএস দেওয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রিসভার পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঈদের ছুটির আগেই বৈঠক করা হবে। আগামী ২৫ অক্টোবর এ বৈঠক হতে পারে। সেখানে খসড়া আইনটি সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের পর্যালোচনা গ্রহণ করার পরই খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। আজ মঙ্গলবার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আমন্ত্রণপত্র পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারপর ঈদের পরে ২৯ অক্টোবর খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবারও মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন জানান, কম্পানি আইন ১৯৯৪-এর '২০২ক' ধারা সংযোজন করে প্রশাসক নিয়োগের বিধান করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রচলিত অন্যান্য আইনে ডেসটিনি গ্রুপে প্রশাসক নিয়োগ করা যায় কি না, তা নিয়ে গত ১৬ অক্টোবর আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা বিদ্যমান আইনগুলো বিশ্লেষণ করেন। তাতে বলা হয়, বিদ্যমান কম্পানি আইনে প্রশাসক নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। আইনটির ১৯৩ ধারা অনুযায়ী সরকার কেবল একজন বা একাধিক পরিদর্শক নিয়োগ করার ক্ষমতা রাখে। ব্যাংক কম্পানি আইন, সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন আইন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনেও প্রশাসক নিয়োগের কোনো বিধান নেই। তবে ব্যাংক কম্পানি আইনে শুধু অবৈধ লেনদেনের ক্ষেত্রে 'যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ'-এর কথা উল্লেখ আছে। তা ছাড়া ডেসটিনি গ্রুপের অনিয়ম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রশাসক নিয়োগ বাদ দিয়ে 'লিকুইডিটর' নিয়োগের বিষয়েও ওই সভায় আলোচনা হয়। মূলত কম্পানি আইন ১৯৯৪-এর ২৫৫ ধারায় কোনো সংগঠনকে অবলুপ্তির ক্ষেত্রে শুধু আদালতের আদেশক্রমেই ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হলে তাঁদের সরকারি 'লিকুইডিটর' নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে, যা ডেসটিনির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া বিদ্যমান কম্পানি আইনের ২৫১ ধারায় 'রিসিভার' নিয়োগের বিধান রয়েছে। তবে কোনো কম্পানি অবলুপ্তির ক্ষেত্রে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রিসিভার নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। ডেসটিনির ক্ষেত্রে তা-ও প্রযোজ্য নয় মত দিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় কম্পানি আইনে সরাসরি প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ধারা সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, কম্পানি আইন সংশোধনে মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। তবে আবারও ভালো করে খুঁটিনাটি দেখে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ডেসটিনি ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কম্পানি আইন সংশোধন করে ক্ষেত্রবিশেষে প্রশাসক নিয়োগের বিধান করছে। প্রচলিত আইনে কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগের কোনো বিধান নেই। এ জন্য কম্পানি আইন সংশোধন করে প্রশাসক নিয়োগের বিধান করা হচ্ছে। এ আইনের যাতে কোনো অপব্যবহার না হয়, সেই রক্ষাকবচ রাখার জন্যও মন্ত্রিসভা বিশেষভাবে নির্দেশনা দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া আইনটি আবার মন্ত্রিসভায় আসবে। তারপর সংসদ না থাকলে অধ্যাদেশ জারি করা হবে।
মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা কম্পানি আইনের নতুন '২০২ক' ধারায় এক বা একাধিক প্রশাসক নিয়োগের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, 'যদি সরকারের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, (ক)(১) কোম্পানির ব্যবসা ইহার পাওনাদার, শেয়ারহোল্ডার বা অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রতারণার জন্য পরিচালিত হইতেছে অথবা ইহার প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রতারণা বা অবৈধ উদ্দেশ্যে অথবা কোন সদস্যকে হয়রানির উদ্দেশ্যে অথবা কোম্পানিটি প্রতারণা বা অবৈধ উদ্দেশ্যে গঠিত হইয়াছে; অথবা (২) কোম্পানিটি গঠন বা ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ প্রতারণা, অবৈধ কর্ম সম্পাদন অথবা অন্য কোন সদস্যের প্রতি অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত; অথবা (খ) জনস্বার্থে এবং শেয়ারহোল্ডার ও পাওনাদারদের স্বার্থ সুরক্ষার প্রয়োজন।'
২০২ক-এর ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, 'শর্ত থাকে যে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে কোম্পানির কার্যক্রম বিষয়ে কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে উপধারা (১)-এর অধীন কোন প্রশাসক নিয়োগ করা যাইবে না।'
একেক কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই প্রশাসকের কর্মপরিধি, মেয়াদ বা যোগ্যতা প্রয়োজনের নিরিখে নির্ধারণ করে গেজেট করবে সরকার।
খসড়া আইনের (৫) নম্বর উপধারায় প্রশাসকের দায়মুক্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, 'এই আইনের অধীনে প্রশাসক বা তাহার অধীনস্থ কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরল বিশ্বাসে সম্পাদিত হইয়াছে এইরূপ কোন কার্যের ফলে কেহ ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা উহার সম্ভাবনা থাকিলে, তাহা দেশের প্রচলিত কোন আইনে আমলযোগ্য হইবে না।'
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডেসটিনি গ্রুপের আর্থিক অনিয়ম, প্রতারণা ও মুদ্রাপাচারের অভিযোগ রয়েছে গ্রুপটির মূল তিন প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি ২০০০, ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে। এ তিনটি প্রতিষ্ঠান কম্পানি আইনে নিবন্ধিত হলেও এমএলএম নিয়ন্ত্রণ অ্যাক্ট হওয়ার পর প্রথম দুটি এ আইনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। আর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি পরিচালিত হয় সমবায় আইন দ্বারা। তাই এ দুটি আইনে প্রশাসক নিয়োগের ধারা যোগ করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তা না করে কম্পানি আইনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ধারা যোগ করা হলে রাজনৈতিকভাবে ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও কম্পানি ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাঁরা বলছেন, আইনের খসড়ায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার যেসব শর্তের কথাই উল্লেখ থাকুক না কেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকার তার স্বার্থ হাসিল করতে এ আইনের অপব্যবহার করতে পারবে।
এ দুটি আইনের মধ্যে এমএলএম নিয়ন্ত্রণ অ্যাক্ট নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর খসড়াটি ছাড়পত্রের জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আর সমবায় আইনেরও সংশোধনী আনছে সরকার। খসড়া সংশোধনীটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন, আইন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পাওয়ার পর এখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রয়েছে। সেখান থেকে খসড়াটি বিল আকারে সংসদে উত্থাপন হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু মনে করেন, ডেসটিনি গ্রুপে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার জন্য কম্পানি আইন সংশোধন করার কোনো দরকারই নেই। সরকার যে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) নিয়ন্ত্রণ অ্যাক্ট-২০১২ করছে, তাতে ও বিদ্যমান সমবায় আইনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ধারা সংযোজন করতে পারে। তা না করে সরকার কম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে দেশের সব কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা নিলে তা নানাভাবেই নানা সরকার অপব্যবহার করার সুযোগ পাবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে এনবিআরের চেয়ারম্যান পদে বদলি হওয়া (বাণিজ্যসচিব) মো. গোলাম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোন রিসিভ করার অনুরোধ করে তাঁকে এসএমএস দেওয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রিসভার পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঈদের ছুটির আগেই বৈঠক করা হবে। আগামী ২৫ অক্টোবর এ বৈঠক হতে পারে। সেখানে খসড়া আইনটি সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের পর্যালোচনা গ্রহণ করার পরই খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। আজ মঙ্গলবার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আমন্ত্রণপত্র পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারপর ঈদের পরে ২৯ অক্টোবর খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবারও মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন জানান, কম্পানি আইন ১৯৯৪-এর '২০২ক' ধারা সংযোজন করে প্রশাসক নিয়োগের বিধান করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রচলিত অন্যান্য আইনে ডেসটিনি গ্রুপে প্রশাসক নিয়োগ করা যায় কি না, তা নিয়ে গত ১৬ অক্টোবর আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা বিদ্যমান আইনগুলো বিশ্লেষণ করেন। তাতে বলা হয়, বিদ্যমান কম্পানি আইনে প্রশাসক নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। আইনটির ১৯৩ ধারা অনুযায়ী সরকার কেবল একজন বা একাধিক পরিদর্শক নিয়োগ করার ক্ষমতা রাখে। ব্যাংক কম্পানি আইন, সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন আইন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনেও প্রশাসক নিয়োগের কোনো বিধান নেই। তবে ব্যাংক কম্পানি আইনে শুধু অবৈধ লেনদেনের ক্ষেত্রে 'যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ'-এর কথা উল্লেখ আছে। তা ছাড়া ডেসটিনি গ্রুপের অনিয়ম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রশাসক নিয়োগ বাদ দিয়ে 'লিকুইডিটর' নিয়োগের বিষয়েও ওই সভায় আলোচনা হয়। মূলত কম্পানি আইন ১৯৯৪-এর ২৫৫ ধারায় কোনো সংগঠনকে অবলুপ্তির ক্ষেত্রে শুধু আদালতের আদেশক্রমেই ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হলে তাঁদের সরকারি 'লিকুইডিটর' নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে, যা ডেসটিনির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া বিদ্যমান কম্পানি আইনের ২৫১ ধারায় 'রিসিভার' নিয়োগের বিধান রয়েছে। তবে কোনো কম্পানি অবলুপ্তির ক্ষেত্রে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রিসিভার নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। ডেসটিনির ক্ষেত্রে তা-ও প্রযোজ্য নয় মত দিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় কম্পানি আইনে সরাসরি প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ধারা সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
No comments