বড় তারকা হতে চান রেশমা by সুজা উদ্দিন
হালকা-পাতলা গড়ন। পোশাক ও কথাবার্তায় সাদামাটা স্বভাব। অতি সাধারণ ঘরের মেয়ে। কিন্তু কোর্টে অসাধারণ ত্রয়োদশী কন্যা রেশমা আক্তার। অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর অনুশীলন দিয়ে সে আপন করে নিয়েছে ব্যাডমিন্টনকে। জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে অনুর্ধ-১৪ বালিকা এককে চ্যাম্পিয়ন স্থান দখল করেছে।
পাবনায় সাধারণ কোর্টে অনুশীলন করে উডেনফ্লোরে তার প্রথম খেলা। মাত্র দেড় বছরের অনুশীলনে তার এ সফলতা। তার সঙ্গী সানজিদা ইয়াসমিন প্রিয়া বয়স বেশির অভিযোগে বাদ পড়ায় দ্বৈতে অংশ নিতে পারেনি সে। না হলে দ্বৈতেও চ্যাম্পিয়ন হতো আত্মপ্রত্যয় রেশমার। তারপরও অন্য ইভেন্টগুলোতে ভাল করে পাবনা দলগত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এটাই রেশমার সান্ত¡না। এবারসহ ব্যাডমিন্টনে টানা পাঁচবার দলগত চ্যাম্পিয়ন তার জেলা। জেলা শহরের কোল ঘেঁষে বাংলাবাজারের একটি ছোট ভাড়া বাসায় মায়ের সঙ্গে থাকে রেশমা। পড়ে শহীদ আহমদ বালিকা বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে। ৫ বোনের মধ্যে সবার ছোট। বাবার সান্নিধ্য পায়নি। এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যথা। দেড় বছর বয়সে তার বাবা মারা যান। এরপর থেকে মা শাহানা বেওয়া তাদের আগলে রেখে মানুষ করছেন। নিজেদের জায়গা-জমি নেই। আয়ের আর কোন উৎসও নেই। শাহানা বেওয়া কাস্টমস অফিসে রান্নার কাজ করে ২৫শ’ টাকা মাইনে পান। তাই দিয়ে সংগ্রামী জীবন চালাচ্ছেন, মেয়েদের সাধ্যমতো গড়ে তুলছেন। পড়ালেখা করাতে না পেরে ইতোমধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন সংসারে দুই মেয়ে ও তিনি। এক মেয়ে মাধবী লতা কলেজপড়ুয়া।
দারিদ্র্যের কশাঘাতে মানুষ হওয়া রেশমার উচ্চস্বপ্ন ছোট বয়স থেকেই। ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ক্রিকেটার হওয়া। কিন্তু পাবনায় মহিলা ক্রিকেট দল না থাকায় মেয়েদের ক্রিকেট তেমন চর্চা নেই। তাই তার ব্যাডমিন্টনে আসা। মাত্র দেড় বছর ধরে স্টেডিয়াম জিমন্যাসিয়ামে অনুশীলন করে। এখানে বারোমাসই ব্যাডমিন্টনের অনুশীলন হয়। তার ব্যাডমিন্টনে আসার পেছনেও রয়েছে মজার কাহিনী, ‘আমি পাড়াগাঁয়ে থাকতাম। স্টেডিয়াম চিনতাম না। তবে আমার মধ্যে খেলাধুলার ভাবনা থাকত সবসময়। পাশের বাড়ির কলেজপড়ুয়া আপু (ইতি খাতুন) আমার অতি আগ্রহ দেখে স্টেডিয়ামের জিমন্যাসিয়াম চিনিয়ে দেন। জিমন্যাসিয়ামের কর্মকর্তারাও আমার আগ্রহ দেখে অনুশীলনের সুযোগ দেন। এখন সবাই আমাকে অনেক সহযোগিতা করে।’ জানায় সম্ভাবনাময় এ শাটলার। পাবনায় উডেনফ্লোর নেই। ঢাকায় এবারই প্রথম উডেন ফ্লোরে খেলার সুযোগ মিলেছে তার। তার জীবনের একটা রোমাঞ্চও তৈরি হয়েছে তাতে। তার সফলতার পেছনে সে কোচের অবদানকে অকপটে স্বীকার করে। ‘কোচ নুরুল হাসান খুব ভাল কোচিং করান, উৎসাহ দেন। কোচিং ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন তিনি। নিজের একটি ব্যাগ আমাকে দিয়েছেন।’ কোচের প্রশংসায় রেশমা আক্তার। পাবনার আরেক শাটলার শাপলা আক্তার তার পছন্দের খেলোয়াড়। ‘শাপলা আপু বলেছেন, ভাল শাটলার হতে হলে এখন থেকেই তৈরি হতে হবে। নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। আমি শাপলা আপুর কথা মেনে চলতে চেষ্টা কর। তিনি মাঝে মধ্যে পাবনায় গেলে আমাকে দেখিয়ে দেন। ঢাকায় এলেও খোঁজখবর নেন।’ জানায় সে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ খন্দকার ইদ্রিস আলী কোন টুর্নামেন্টে মেয়েরা অংশ নিলে ছায়ার মতো থাকেন তাদের সঙ্গে। ইস্পাহানি জাতীয় জুনিয়র-সাব-জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের সঙ্গে এসে পল্টন উডেন ফ্লোর জিমন্যাসিয়ামে জানান, ব্যাডমিন্টনের অধিকাংশ মেয়েই গরিব ঘরের। রেশমার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সে যে এ পর্যায়ে আসতে পেরেছে অনেক বড় ব্যাপার। অন্যদের দায়িত্ব এখন বেড়ে গেছে। তিনি মনে করেন, পাবনায় অনেক বিত্তবান ও শিল্পপতি আছেন। তাঁরা যদি খেলাধুলার উন্নয়নে এগিয়ে আসে তাহলে এ জেলায় ক্রীড়ার মান আরও বাড়বে। রেশমাসহ এমন গরিব মেধাবী ও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের বৃত্তি ও পৃষ্ঠপোষকতা দিলে তারা দ্বিগুণ উৎসাহে নিজেদের বিকশিত করবে। তাদের চাকরির নিশ্চয়তা থাকলে আরও নির্বিঘেœ খেলতে পারবে। তিনি আরও বলেন, ফেডারেশন যদি এদের মতো উদীয়মান শাটলারদের ঢাকায় নিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে জাতীয় দলের জন্য তৈরি করে এরাই বড় মানের খেলোয়াড় হবে। কোচ নুরুল হাসান জানান, রেশমা খুবই পরিশ্রমী। ওর মধ্যে একটা জেদ আছে। নিজের চেষ্টাতেই সে এ পর্যন্ত এসেছে। তাকে ঠিকমতো নার্সিং করতে পারলে একদিন অনেক বড় মানের খেলোয়াড় হবে। রেশমাও চায় আরও উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে বড় মানের শাটলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে।
রেশমার খেলাধুলায় আসার পেছনে তার মায়ের অবদানই বেশি। এ জন্য মায়ের প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা। ‘খেলাধুলাতে মায়েরও আগ্রহ রয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি মা খেলাধুলাতেও উৎসাহিত করেন। তিনি ঠিকমতো সংসার টানতে পারেন না। তিন বোন সপ্তম-অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে পরের বাড়িতে চলে গেছেন। অভাবের সংসার তো, তাই মা লেখাপড়া করাতে পারেননি তাদের। মা চান আমি লেখাপড়া ও খেলাধুলা দুটোই করি। আমি অনেক বড় হয়ে মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠ রেশমার। ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম (স্বপন চৌধুরী) তাকে মাঝে মধ্যে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থা টুর্নামেন্টের আগে অনুশীলন চলাকালে নাস্তা ও যাতায়াত খরচ, র্যাকেট, জুতোসহ সরঞ্জামাদি দেয়। এতে কোনরকমে সে খেলাধুলা করতে পারে। তবে মায়ের কষ্টের কথা মনে পড়তেই তার চোখ থেকে ছলছল করে পানি গড়িয়ে পড়ে। সে আর দেখতে চায় না মায়ের কষ্ট। তবে তার জানা নেই ব্যাডমিন্টন ক্যারিয়ারে তার ভবিষ্যত কী হবে। তারপরও তার স্বপ্ন জাতীয় দলের হয়ে সেরা খেলা উপহার দিয়ে দেশের সম্মান বয়ে আনা।
দারিদ্র্যের কশাঘাতে মানুষ হওয়া রেশমার উচ্চস্বপ্ন ছোট বয়স থেকেই। ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ক্রিকেটার হওয়া। কিন্তু পাবনায় মহিলা ক্রিকেট দল না থাকায় মেয়েদের ক্রিকেট তেমন চর্চা নেই। তাই তার ব্যাডমিন্টনে আসা। মাত্র দেড় বছর ধরে স্টেডিয়াম জিমন্যাসিয়ামে অনুশীলন করে। এখানে বারোমাসই ব্যাডমিন্টনের অনুশীলন হয়। তার ব্যাডমিন্টনে আসার পেছনেও রয়েছে মজার কাহিনী, ‘আমি পাড়াগাঁয়ে থাকতাম। স্টেডিয়াম চিনতাম না। তবে আমার মধ্যে খেলাধুলার ভাবনা থাকত সবসময়। পাশের বাড়ির কলেজপড়ুয়া আপু (ইতি খাতুন) আমার অতি আগ্রহ দেখে স্টেডিয়ামের জিমন্যাসিয়াম চিনিয়ে দেন। জিমন্যাসিয়ামের কর্মকর্তারাও আমার আগ্রহ দেখে অনুশীলনের সুযোগ দেন। এখন সবাই আমাকে অনেক সহযোগিতা করে।’ জানায় সম্ভাবনাময় এ শাটলার। পাবনায় উডেনফ্লোর নেই। ঢাকায় এবারই প্রথম উডেন ফ্লোরে খেলার সুযোগ মিলেছে তার। তার জীবনের একটা রোমাঞ্চও তৈরি হয়েছে তাতে। তার সফলতার পেছনে সে কোচের অবদানকে অকপটে স্বীকার করে। ‘কোচ নুরুল হাসান খুব ভাল কোচিং করান, উৎসাহ দেন। কোচিং ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন তিনি। নিজের একটি ব্যাগ আমাকে দিয়েছেন।’ কোচের প্রশংসায় রেশমা আক্তার। পাবনার আরেক শাটলার শাপলা আক্তার তার পছন্দের খেলোয়াড়। ‘শাপলা আপু বলেছেন, ভাল শাটলার হতে হলে এখন থেকেই তৈরি হতে হবে। নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। আমি শাপলা আপুর কথা মেনে চলতে চেষ্টা কর। তিনি মাঝে মধ্যে পাবনায় গেলে আমাকে দেখিয়ে দেন। ঢাকায় এলেও খোঁজখবর নেন।’ জানায় সে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ খন্দকার ইদ্রিস আলী কোন টুর্নামেন্টে মেয়েরা অংশ নিলে ছায়ার মতো থাকেন তাদের সঙ্গে। ইস্পাহানি জাতীয় জুনিয়র-সাব-জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের সঙ্গে এসে পল্টন উডেন ফ্লোর জিমন্যাসিয়ামে জানান, ব্যাডমিন্টনের অধিকাংশ মেয়েই গরিব ঘরের। রেশমার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সে যে এ পর্যায়ে আসতে পেরেছে অনেক বড় ব্যাপার। অন্যদের দায়িত্ব এখন বেড়ে গেছে। তিনি মনে করেন, পাবনায় অনেক বিত্তবান ও শিল্পপতি আছেন। তাঁরা যদি খেলাধুলার উন্নয়নে এগিয়ে আসে তাহলে এ জেলায় ক্রীড়ার মান আরও বাড়বে। রেশমাসহ এমন গরিব মেধাবী ও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের বৃত্তি ও পৃষ্ঠপোষকতা দিলে তারা দ্বিগুণ উৎসাহে নিজেদের বিকশিত করবে। তাদের চাকরির নিশ্চয়তা থাকলে আরও নির্বিঘেœ খেলতে পারবে। তিনি আরও বলেন, ফেডারেশন যদি এদের মতো উদীয়মান শাটলারদের ঢাকায় নিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে জাতীয় দলের জন্য তৈরি করে এরাই বড় মানের খেলোয়াড় হবে। কোচ নুরুল হাসান জানান, রেশমা খুবই পরিশ্রমী। ওর মধ্যে একটা জেদ আছে। নিজের চেষ্টাতেই সে এ পর্যন্ত এসেছে। তাকে ঠিকমতো নার্সিং করতে পারলে একদিন অনেক বড় মানের খেলোয়াড় হবে। রেশমাও চায় আরও উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে বড় মানের শাটলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে।
রেশমার খেলাধুলায় আসার পেছনে তার মায়ের অবদানই বেশি। এ জন্য মায়ের প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা। ‘খেলাধুলাতে মায়েরও আগ্রহ রয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি মা খেলাধুলাতেও উৎসাহিত করেন। তিনি ঠিকমতো সংসার টানতে পারেন না। তিন বোন সপ্তম-অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে পরের বাড়িতে চলে গেছেন। অভাবের সংসার তো, তাই মা লেখাপড়া করাতে পারেননি তাদের। মা চান আমি লেখাপড়া ও খেলাধুলা দুটোই করি। আমি অনেক বড় হয়ে মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠ রেশমার। ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম (স্বপন চৌধুরী) তাকে মাঝে মধ্যে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থা টুর্নামেন্টের আগে অনুশীলন চলাকালে নাস্তা ও যাতায়াত খরচ, র্যাকেট, জুতোসহ সরঞ্জামাদি দেয়। এতে কোনরকমে সে খেলাধুলা করতে পারে। তবে মায়ের কষ্টের কথা মনে পড়তেই তার চোখ থেকে ছলছল করে পানি গড়িয়ে পড়ে। সে আর দেখতে চায় না মায়ের কষ্ট। তবে তার জানা নেই ব্যাডমিন্টন ক্যারিয়ারে তার ভবিষ্যত কী হবে। তারপরও তার স্বপ্ন জাতীয় দলের হয়ে সেরা খেলা উপহার দিয়ে দেশের সম্মান বয়ে আনা।
No comments