যক্ষ্মা

এক সময় বলা হতো, ‘যার হয় যক্ষ্মা তার নেই রক্ষা।’ এক সময় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক লোক মারা যেত। তখন যক্ষ্মা ছিল মরণব্যাধি। পরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির মধ্য দিয়ে যক্ষ্মা রোগ নিরাময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।


যক্ষ্মারোগ এখন ভাল হয়; তবে এ জন্য দরকার সার্বক্ষণিক সচেতনতা ও যথাযথ চিকিৎসা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া হলে বাংলাদেশ থেকে যক্ষ্মা পরিপূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব। তবে এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ বাংলাদেশে এখন শহর ও গ্রামাঞ্চলে সাধারণত গরিবদের মধ্যে যক্ষ্মা রোগের প্রকোপ বেশি। যক্ষ্মা ও অন্যান্য ব্যাধি সম্পর্কে এদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। এক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী খাতের সঙ্গে কার্যকর সহযোগিতার মাধ্যমে দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূল করা সম্ভব। রবিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞ এ কথা বলেন।
রাজধানীসহ দেশের শহরাঞ্চলে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে, তা এখনও দেশে লাখ লাখ অসহায় রোগীর জন্য পর্যাপ্ত নয়। বিপুলসংখ্যক দরিদ্র রোগীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা কষ্টসাধ্য। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত। বাংলাদেশেও যক্ষ্মা একটি সমস্যা। এখানে গত এক বছরে প্রায় দেড় লাখ মানুষ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিবছর যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার প্রতিলাখে ৪৩ জন। তবে এখন যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। নিয়মিত পূর্ণ মেয়াদের চিকিৎসায় যক্ষ্মা সম্পূর্ণ ভাল হয়। রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষ বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করে। এদের মধ্যে অনেকেই ধূমপায়ী, কেউ কেউ নেশাগ্রস্ত; প্রধানত এসব মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে সাধারণত ফুসফুস আক্রান্ত হয় বেশি। তবে যক্ষ্মার জীবাণু দেহের অন্য অংশকেও আক্রান্ত করে। তিন সপ্তাহের বেশি কাশি যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ। বাংলাদেশে শহরের বস্তি কিংবা গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী অনেক মানুষ বুঝতে পারে না, তাদের কাশি সারছে না কেন? এটা যে যক্ষ্মা তা বুঝতে অনেক সময় লেগে যায়। জানা গেছে, যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি যদি বিনা চিকিৎসায় থাকে, তবে তার দ্বারা অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে।
এ জন্য দরকার যক্ষ্মা রোগের বিষয়ে সর্বক্ষণিক প্রচার। এক্ষেত্রে শহরের প্রতিটি মহল্লা এবং দেশের প্রতিটি গ্রামে স্বাস্থ্যক্লিনিক গড়ে তোলা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী সরকারী ও বেসরকারী সহযোগিতায় যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.