গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধন বিল পাস- এমডি নিয়োগবিধি পরিবর্তন

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের বিধি পরিবর্তন করে বহুল আলোচিত গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধনের বিল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ আরও স্বচ্ছ করতে এবং নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে এই আইনে এই সংশোধন আনা হয়েছে।


এখন গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে। জাতীয় সংসদের মঙ্গলবারের অধিবেশনে এই বিলটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের অনুপস্থিতিতে তাঁর পক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) একে খন্দকার বীরউত্তম ‘গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধনী) বিল-২০১২’ উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলটির বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম তাঁর জনমত যাচাই প্রস্তাব ও সংশোধনী কণ্ঠভোটে নাকচ হলে প্রতিবাদে তিনি সংসদ থেকে এক মিনিটের জন্য প্রতীকী ওয়াকআউট করেন। এর আগে বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে বিলের ওপরে দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। বিলটি পাসের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
তবে বিলটির বিরোধিতা করে একমাত্র স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ফজলুল আজিম বলেন, এ বিলটির ঘোর বিরোধিতা করি। গ্রামীণ ব্যাংক বিশ্বভাবে পরিচিত, এই প্রতিষ্ঠান নোবেল বিজয়ী হয়েছে। বিশ্বনন্দিত নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই ব্যাংকটি ৮৬ হাজার নারী রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে। ড. ইউনূসের ওপর সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ওপর এমন ক্ষোভ কেন? ড. ইউনূসকে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। সরকার এই আইনের মাধ্যমে ব্যাংকটি গ্রাস ও ধ্বংস করতে চাচ্ছে।
জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকার বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দ্রুত নিরসনের জন্যই এই বিলটি আনা হয়েছে। বিলটি পাস হলে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ আরও স্বচ্ছ হবে। তিনি সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের জনমত যাচাই-বাছাই প্রস্তাব গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বিলটি রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর গ্রামীণ ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগে কোন অসুবিধা থাকবে না। এমডি নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে বিলটি আনা হয়েছে সরকার তরফে এমন দাবি করা হলেও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অভিযোগ করেছেন, সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে করায়ত্ত্ব করতেই বিলটি এনেছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ-সংবলিত বিবৃতিতে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত বিধানের কারণে উক্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার ফলে পদটি দীর্ঘদিন শূন্য থাকে। জটিলতা নিরসনে সংসদ অধিবেশন না থাকায় গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১২ জারির কথাও বলেন অর্থমন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) বিল-২০১২ জাতীয় সংসদে পাস করা হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ আরও স্বচ্ছ হবে এবং নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হবে বলে আশা করা যায়।
এই আইনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে পাঁচ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিটি গঠনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বোর্ডের চেয়ারম্যানকে। নির্বাচন কমিটি আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে তিনজনের একটি প্যানেল মনোনীত করে তা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে জমা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে এর মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগ দেবে পরিচালনা পর্ষদ।
গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও বাধাগুলো খুঁজে বের করা, এই প্রতিষ্ঠানে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, গ্রামীণ ব্যাংকের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আইনী কাঠামো এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকা- পর্যালোচনা করা, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সদস্য নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যালোচনা এবং কিভাবে এই ব্যাংকে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অধীনে নেয়া যায়- সে বিষয়ে সুপরিশ করার দায়িত্ব দেয়া হয় এই কমিশনকে।

No comments

Powered by Blogger.