মসিউর ছুটিতে যাওয়াকে গৌণ মনে করেন ॥ ছুটির চিঠি ওয়াশিংটনে?- ০ ‘ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের গুপ্তচর চক্র রয়েছে’- ০ বর্তমান সরকারের সময়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করা নিয়ে সংশয় -০ অন্যদিকে ‘এ বছরেই পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে’ বলেছেন ওবায়দুল কাদের by হামিদ-উজ-জামান মামুন
অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের ছুটির আবেদন এখন ওয়াশিংটনে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া এক মাসের ছুটির আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি চিঠি তৈরি করে বিশ্বব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেছেন অপর দুই উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও এইচটি ইমাম। বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছে বলে সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
কেন না শর্ত পূরণের পর পদ্মা সেতুর টাকা পাওয়া গেলেই কেবল এটি প্রকাশ করা হবে নচেত নয়, এমনটিই জানা গেছে। তাছাড়া মসিউর রহমানও স্পষ্ট করেননি তাঁর ছুটিতে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি। তিনি বলেছেন, পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে তাঁর ছুটিতে যাওয়াটা গৌণ। বিশ্বব্যাংকের প্রতি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ঢাকায় তাদের একটি গুপ্তচর চক্র রয়েছে। দেশের স্বার্থে গুপ্তচরদের খুঁজে বের করে নাম প্রকাশ করা উচিত। এছাড়া বর্তমান সরকারের সময় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সেতুর কাজ শুরু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর হেয়ার রোডে সরকারী বাসভবনের বাইরে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের অর্থে পদ্মা সেতুর কাজ এই সরকারের মেয়াদে শুরু নিয়ে প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি এ্যাডভাইজর মসিউর রহমানের সংশয় থাকলেও আশা ছাড়ছেন না যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, উপদেষ্টা মসিউর রহমানের মত ‘ব্যক্তিগত’। কে-কি বলল, সেটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য হতে পারে। আমি মন্ত্রী হিসেবে বলছি যে এর মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব। মঙ্গলবার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এছাড়া সোমবার ড. মসিউর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে কি কথা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, কথা হয়েছে কি কি উপায়ে করা যায়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দিয়ে করলে কি হবে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক করলে কতটা সময় লাগবে, কি কি আমাদের করতে হবে? এবং বিশ্বব্যাংক না ফিরলে চীন কিংবা কোরিয়ার প্রস্তাব, এমনকি নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের বিষয়েও মসিউরের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি। বিশ্বব্যাংককে ফেরাতে চেষ্টার কথা জানিয়ে কাদের বলেন, বিশ্বব্যাংকের কোন দরজাই আমরা বন্ধ করিনি। সব দরজাই খোলা আছে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকেও যোগ দেননি ড. মসিউর রহমান। অথচ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি। একনেকে অংশ নেয়া একাধিক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে তাঁর উপস্থিত না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তাছাড়া বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের একটি সূত্র জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে অবস্থানরত কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইনও ড. মসিউর রহমানের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছেন। সে রকমই জানিয়েছেন বাংলাদেশ অফিসের কর্মকর্তাদের। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাতে বিশ্বব্যাংকের কেন্দ্রীয় অফিসে প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টার সঙ্গে এ্যালেনের বৈঠক হওয়ার কথা।
সূত্র জানায়, ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া মসিউর রহমানের ছুটিতে যাওয়ার আবেদনপত্র এবং এর মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংকের চার শর্ত পূরণ করে ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য একটি চিঠি তৈরি করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়াং কিমের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে লেখা ওই চিঠি হাতে করে ওয়াশিংটনে নিয়ে গেছেন উপদেষ্টারা। তাঁরা প্রথম পর্যায়ে ড. মসিউর রহমানকে স্বপদে রেখেই বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে সম্মতি আদায়ের প্রচেষ্টা চালাবেন। আর যদি তাতে ব্যর্থ হন তাহলে চূড়ান্ত পর্যায়ে তাঁর ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি অভিহিত করে অনুরোধপত্রটি জমা দিয়ে দেনদরবার করবেন। তাতেও যদি কোন গ্রীন সিগন্যাল না আসে তাহলে মসিউর রহমানকে আর ছুটিতে পাঠানো হবে না। তাঁর আবেদনপত্র গৃহীত না হয়ে বরং ওই বিষয়টি গোপন রাখা হতে পারে।
সরকারের প্রেস্টিজ রক্ষায় এ বিষয়টি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইনকে অবহিত করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি গত শনিবার রাতেই ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রয়েছেন।
অন্যদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে ছুটিতে যাচ্ছে মসিউর, গণমাধ্যামে এ রকম খবর প্রকাশের পর মঙ্গলবার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু বলি নাই যে, আমি দরখাস্ত করেছি এবং দরখাস্ত দেয়ার পরে যাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন বা গ্রহণ করবেন এমন কেউ কিছু বলেনি, সেজন্য আমি এ বিষয়ে আলোচনায় যেতে চাই না। গণমাধ্যম কর্মীরা বার বার স্পষ্ট করে তাঁর কাছ থেকে এ বিষয়টি জানতে চাইলেও তিনি হ্যাঁ অথবা না উত্তর না দিয়ে কৌশলে ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে, তারা যে তথ্য জানে তা লিখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুতে যারা পয়সা দেবে তারা কোন এক সময় আমাদের দেশের কিছু লোককে গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ দেয়। তারা গোপনে তাদের তথ্য সরবরাহ করে, যার কোন ভিত্তি নেই ও সেসব তথ্য যথার্থ নয় এবং তাদের পরামর্শ দিয়েছে কি করতে হবে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি বিশ্বব্যাংক গুপ্তচরদের বলেছেÑ তোমরা তো কোন প্রমাণ দিতে পারছ না, কেমন করে বলছে দুর্নীতি হয়েছে। তখন তারা বলেছে দুর্নীতির কেউ তথ্য-প্রমাণ রেখে যায় না, তোমরা কিছুই করতে পারছ না, যদি পার দরপত্র বন্ধ করে দাও। বিশ্বব্যাংক তাদের পরামর্শে দরপত্র বন্ধ রেখেছে। গুপ্তচরদের অনেকেই ওয়াশিংটনেও গেছেন। বিশ্বব্যাংক যে স্পাই নেটওয়ার্ক করেছে সেটা গর্হিত। এই যে গোপন তথ্য এবং পরামর্শদাতাÑ তাদের নামও সরকারের কাছে প্রকাশ করতে পারবে না বিশ্বব্যাংক। কারণ একটা হলো, যারা তাদের সহযোগিতা করেছে তাদের রক্ষা করতে হবে। আর নামগুলো প্রকাশ করলে পরবর্তীতে তারা গোপন সহযোগিতা আর পাবে না। তাই তারা নিজের দোষ ঢেকে রাখার জন্য সরকারকে এত চাপ দিচ্ছে।
এই গুপ্তচরদের কিছু ই-মেইলও তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা। বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এ বিষয়ে অবহিত। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে মসিউর বলেন, মেইলগুলো এসেছে বেনামে।
এক প্রশ্নের জবাবে মসিউর বলেন, যখন ওরা (বিশ্বব্যাংক) বলে সরকার এটা করলে, ওটা করলে বা মসিউরকে সরালে তারা কাজ শুরু করবে, আমি কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি, তাদের কাছে যত চুক্তি পাঠানো হয়েছে তার একটি বাদে কোনটিতেই তারা সম্মতি দেয়নি। অর্থায়ন জটিলতা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাছাড়া আমি যতটুকু জেনেছি তাতে বিশ্বব্যাংকের টাকায় এ সরকারের মেয়াদে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে না। বিশ্বব্যাংক ‘না’ বলে দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন, প্রয়োজনে নিজেদের অর্থেই পদ্মা সেতু হবে। এ জন্য অনুদান হিসাবে অর্থ সংগ্রহেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মসিউর বলেন, নিজেদের অর্থে বড় আকারে (গ্র্যান্ড স্কেলে) পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব না হলেও ‘ব্যবহার উপযোগী’ একটি সেতু বাংলাদেশ বানাতে সক্ষম।
গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অংশ না নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আমাকে নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনাপূর্ণ কথাবার্তা হয়েছে। এ উত্তেজনা যাতে প্রশমিত হয় এবং নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি না হয় সেজন্য ওই বৈঠকে যাইনি। এ সময় তিনি বলেন, ছুটিতে না গেলেও আমাকে নির্বাসনে পাঠানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কারণ, এক সময় রাশিয়ায় যারা অবাঞ্ছিত ছিল, তাদের গুলাগে (সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার নির্যাতন শিবির) নিয়ে যাওয়া হতো। আমার জীবনটা গুলাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি এখন গুলাগে বসবাস করছি। এ পরিস্থিতিতে মানুষ মারাও যেতে পারে, হার্ট এ্যাটাক হতে পারে। আমি বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি। আপনাদের সহানুভূতিমূলক সহযোগিতা কামনা করছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তাদের নিয়মকানুন পড়ে দেখেছি। ঋণচুক্তি কার্যকরের আগে চুক্তি বাতিলের কথা কোথাও সুস্পষ্টভাবে খুঁজে পাইনি। আমি আগেও বলেছি পদ্মা সেতুর জন্য রক্ত দেয়ার দরকার হলে আমি তাই দিতে প্রস্তুত আছি। আমি উপদেষ্টা পদে থাকলে যদি দেশের সুনাম ক্ষুণœ হয় তাহলে আমি চলে যাব। তবে প্রকৃত সত্যটা প্রকাশ হলে বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের দুর্নামটা ঘুচবে।
সূত্র জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর সরকারকে চারটি শর্ত দেয় বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠানোর কথাও ছিল। শর্তগুলো পালন হয়নি এমন অভিযোগে গত ২৮ জুন চুক্তি বাতিল করে সংস্থাটি।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকেও যোগ দেননি ড. মসিউর রহমান। অথচ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি। একনেকে অংশ নেয়া একাধিক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে তাঁর উপস্থিত না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তাছাড়া বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের একটি সূত্র জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে অবস্থানরত কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইনও ড. মসিউর রহমানের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছেন। সে রকমই জানিয়েছেন বাংলাদেশ অফিসের কর্মকর্তাদের। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাতে বিশ্বব্যাংকের কেন্দ্রীয় অফিসে প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টার সঙ্গে এ্যালেনের বৈঠক হওয়ার কথা।
সূত্র জানায়, ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া মসিউর রহমানের ছুটিতে যাওয়ার আবেদনপত্র এবং এর মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংকের চার শর্ত পূরণ করে ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য একটি চিঠি তৈরি করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়াং কিমের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে লেখা ওই চিঠি হাতে করে ওয়াশিংটনে নিয়ে গেছেন উপদেষ্টারা। তাঁরা প্রথম পর্যায়ে ড. মসিউর রহমানকে স্বপদে রেখেই বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে সম্মতি আদায়ের প্রচেষ্টা চালাবেন। আর যদি তাতে ব্যর্থ হন তাহলে চূড়ান্ত পর্যায়ে তাঁর ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি অভিহিত করে অনুরোধপত্রটি জমা দিয়ে দেনদরবার করবেন। তাতেও যদি কোন গ্রীন সিগন্যাল না আসে তাহলে মসিউর রহমানকে আর ছুটিতে পাঠানো হবে না। তাঁর আবেদনপত্র গৃহীত না হয়ে বরং ওই বিষয়টি গোপন রাখা হতে পারে।
সরকারের প্রেস্টিজ রক্ষায় এ বিষয়টি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইনকে অবহিত করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি গত শনিবার রাতেই ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রয়েছেন।
অন্যদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে ছুটিতে যাচ্ছে মসিউর, গণমাধ্যামে এ রকম খবর প্রকাশের পর মঙ্গলবার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু বলি নাই যে, আমি দরখাস্ত করেছি এবং দরখাস্ত দেয়ার পরে যাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন বা গ্রহণ করবেন এমন কেউ কিছু বলেনি, সেজন্য আমি এ বিষয়ে আলোচনায় যেতে চাই না। গণমাধ্যম কর্মীরা বার বার স্পষ্ট করে তাঁর কাছ থেকে এ বিষয়টি জানতে চাইলেও তিনি হ্যাঁ অথবা না উত্তর না দিয়ে কৌশলে ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে, তারা যে তথ্য জানে তা লিখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুতে যারা পয়সা দেবে তারা কোন এক সময় আমাদের দেশের কিছু লোককে গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ দেয়। তারা গোপনে তাদের তথ্য সরবরাহ করে, যার কোন ভিত্তি নেই ও সেসব তথ্য যথার্থ নয় এবং তাদের পরামর্শ দিয়েছে কি করতে হবে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি বিশ্বব্যাংক গুপ্তচরদের বলেছেÑ তোমরা তো কোন প্রমাণ দিতে পারছ না, কেমন করে বলছে দুর্নীতি হয়েছে। তখন তারা বলেছে দুর্নীতির কেউ তথ্য-প্রমাণ রেখে যায় না, তোমরা কিছুই করতে পারছ না, যদি পার দরপত্র বন্ধ করে দাও। বিশ্বব্যাংক তাদের পরামর্শে দরপত্র বন্ধ রেখেছে। গুপ্তচরদের অনেকেই ওয়াশিংটনেও গেছেন। বিশ্বব্যাংক যে স্পাই নেটওয়ার্ক করেছে সেটা গর্হিত। এই যে গোপন তথ্য এবং পরামর্শদাতাÑ তাদের নামও সরকারের কাছে প্রকাশ করতে পারবে না বিশ্বব্যাংক। কারণ একটা হলো, যারা তাদের সহযোগিতা করেছে তাদের রক্ষা করতে হবে। আর নামগুলো প্রকাশ করলে পরবর্তীতে তারা গোপন সহযোগিতা আর পাবে না। তাই তারা নিজের দোষ ঢেকে রাখার জন্য সরকারকে এত চাপ দিচ্ছে।
এই গুপ্তচরদের কিছু ই-মেইলও তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা। বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এ বিষয়ে অবহিত। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে মসিউর বলেন, মেইলগুলো এসেছে বেনামে।
এক প্রশ্নের জবাবে মসিউর বলেন, যখন ওরা (বিশ্বব্যাংক) বলে সরকার এটা করলে, ওটা করলে বা মসিউরকে সরালে তারা কাজ শুরু করবে, আমি কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি, তাদের কাছে যত চুক্তি পাঠানো হয়েছে তার একটি বাদে কোনটিতেই তারা সম্মতি দেয়নি। অর্থায়ন জটিলতা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাছাড়া আমি যতটুকু জেনেছি তাতে বিশ্বব্যাংকের টাকায় এ সরকারের মেয়াদে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে না। বিশ্বব্যাংক ‘না’ বলে দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন, প্রয়োজনে নিজেদের অর্থেই পদ্মা সেতু হবে। এ জন্য অনুদান হিসাবে অর্থ সংগ্রহেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মসিউর বলেন, নিজেদের অর্থে বড় আকারে (গ্র্যান্ড স্কেলে) পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব না হলেও ‘ব্যবহার উপযোগী’ একটি সেতু বাংলাদেশ বানাতে সক্ষম।
গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অংশ না নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আমাকে নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনাপূর্ণ কথাবার্তা হয়েছে। এ উত্তেজনা যাতে প্রশমিত হয় এবং নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি না হয় সেজন্য ওই বৈঠকে যাইনি। এ সময় তিনি বলেন, ছুটিতে না গেলেও আমাকে নির্বাসনে পাঠানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কারণ, এক সময় রাশিয়ায় যারা অবাঞ্ছিত ছিল, তাদের গুলাগে (সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার নির্যাতন শিবির) নিয়ে যাওয়া হতো। আমার জীবনটা গুলাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি এখন গুলাগে বসবাস করছি। এ পরিস্থিতিতে মানুষ মারাও যেতে পারে, হার্ট এ্যাটাক হতে পারে। আমি বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি। আপনাদের সহানুভূতিমূলক সহযোগিতা কামনা করছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তাদের নিয়মকানুন পড়ে দেখেছি। ঋণচুক্তি কার্যকরের আগে চুক্তি বাতিলের কথা কোথাও সুস্পষ্টভাবে খুঁজে পাইনি। আমি আগেও বলেছি পদ্মা সেতুর জন্য রক্ত দেয়ার দরকার হলে আমি তাই দিতে প্রস্তুত আছি। আমি উপদেষ্টা পদে থাকলে যদি দেশের সুনাম ক্ষুণœ হয় তাহলে আমি চলে যাব। তবে প্রকৃত সত্যটা প্রকাশ হলে বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের দুর্নামটা ঘুচবে।
সূত্র জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর সরকারকে চারটি শর্ত দেয় বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠানোর কথাও ছিল। শর্তগুলো পালন হয়নি এমন অভিযোগে গত ২৮ জুন চুক্তি বাতিল করে সংস্থাটি।
No comments