পাহাড়ী জনগণ জমির ওপর অধিকার ফিরে পাবে ॥ প্রধানমন্ত্রী- গণভবনে উপজাতি নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী জনগণ তাদের জমির ওপর অধিকার ফিরে পাবে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে উপজাতি নেতাদের সবধরনের সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জমির মালিকানা থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে আপনারাই হবেন পার্বত্য


চট্টগ্রামের জমির মালিক। আপনাদের এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা সবধরনের সহায়তা দেব। খবর বাসসর। মঙ্গলবার গণভবনে উপজাতি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কাছে তাদের জমি ফিরিয়ে দেয়ার অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে একজন নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন পুনর্গঠন করা হবে।
শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা পাহাড়ের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করেছি এবং আমরাই এই বৈচিত্র্যময় ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এলাকার উন্নয়নে এই চুক্তি বাস্তবায়ন করব।
পার্বত্য পরিস্থিতি ও এর উন্নয়নে মতবিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তিন সার্কেলের প্রধান, হেডম্যান ও কারবারিদের নিয়ে উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ গণভবনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ সার্কেল প্রতিষ্ঠার ১২৮ বছরের মধ্যে কোন সরকারপ্রধানের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের এটাই প্রথম বড় ধরনের মতবিনিময়ের সভা। অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রায় ৪শ’ হেডম্যান ও কারবারি এবং ৩ পার্বত্য জেলার চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জমির ওপর পার্বত্য জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও চুক্তি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে কেউ যেন জনগণকে বিভ্রান্ত ও সরকারের চলমান প্রয়াস নস্যাত করতে না পারে সে ব্যাপারে পার্বত্য নেতৃবৃন্দকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর এমপি, জ্যোতিন্দ্রলাল ত্রিপুরা চাকমা এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ সার্কেলপ্রধান ব্যারিস্টার রাজা দেবাশিষ রায়, কেএস প্রু চৌধুরী ও সা চিং প্রু চৌধুরী অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
উপজাতীয় নেতারা তাদের বিভিন্ন দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা সভা পরিচালনা করেন। উপজাতীয় নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিগত ও সরকারীভাবে হস্তক্ষেপ করার জন্য শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের বিগত মেয়াদে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পটভূমি বর্ণনা করে বলেন, আমরা ছাড়া অতীতে সব সরকার সামরিকভাবে এ সংঘাত অবসানের চেষ্টা করেছিল।
তিনি বলেন, একমাত্র আমরাই এটিকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করি। তাই আমরা সরকারী ও বেসরকারীভাবে উপজাতীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পদক্ষেপ নেই এবং আমরা দু’দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাত অবসানে সক্ষম হই। তিনি তাঁর প্রতি আস্থা প্রদর্শন ও এবং পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে অস্ত্র সমর্পণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির বিরুদ্ধে চক্রান্ত সম্পর্কে সচেতন থাকতে উপজাতীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন কোন মহল পরিস্থিতি অবনতি ঘটাতে এখন ষড়যন্ত্র করছে। তবে আমরা এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় তিনি বিরোধী দলের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি ভবিষ্যতে যাতে কেউ তাদের ভূমি অধিকার ছিনিয়ে নিতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে উপজাতীয় জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু পার্বত্য চট্টগ্রামে সার্কেলপ্রধানদের জন্য সম্মানী চালু করেন। আওয়ামী লীগ সরকার সার্কেলপ্রধান, হেডম্যান ও কারবারিদের সম্মানের পরিমাণ দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ক্ষুদ্র জাতিগত উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোটখাটো বিষয়গুলো শিগগিরই পূরণ করা হবে। বাকিগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে বিবেচনা করা হবে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উর্ধতন কর্মকর্তা ও অন্যান্য জনগণের সুবিধার্থে রাজধানীতে ডরমিটরি নির্মাণ করা হবে। তিনি পার্বত্য জেলাগুলোতে সার্কেল প্রধানদের জন্য তিনটি অফিস ভবন নির্মাণে তাঁর পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেন।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর চিরাচরিত রীতি-নীতি অনুসরণের পাশাপাশি উপজাতীয় জনগণের ভূমির মালিকানা নিবন্ধের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন কর্মকা- চালানোর মাধ্যমে উপজাতীয় জনগণ তাদের ঐতিহ্য ও রীতি-নীতি সমুন্নত রাখবেন।

No comments

Powered by Blogger.