সাক্ষাৎকার by ড. কামাল হোসেন
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : শাহেদ চৌধুরী সমকাল :কেমন আছেন? ড. কামাল :রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মতো কোনো রকম চলছি।
সমকাল :সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আপনি গুম হওয়ার আশঙ্কা করেন। কেন? ড. কামাল : আমি গুম হতেই পারি। যে দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার মতো মানুষ খুন হন এবং সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার বছরের পর বছর
সমকাল :সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আপনি গুম হওয়ার আশঙ্কা করেন। কেন? ড. কামাল : আমি গুম হতেই পারি। যে দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার মতো মানুষ খুন হন এবং সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার বছরের পর বছর
ঝুলে থাকে, সরকার বদল হয় কিন্তু খুনি শাস্তি পায় না, সেই দেশে আমি কেন গুম হওয়ার আশঙ্কা করব না?
সমকাল :আপনি একজন আইনবিশারদ। জাতীয় সংসদের স্পিকারের রুলিং নিয়ে আদালতের রায় প্রসঙ্গে কিছু বলবেন কি?
ড. কামাল :বিচার বিভাগ থেকে কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে স্পিকারকে আঘাত করা মানেই সংসদকে আঘাত করা। এ ক্ষেত্রে স্পিকারের প্রতিকার চাওয়ার অধিকার আছে। অথচ রুল না দিয়ে একতরফাভাবে স্পিকারের রুলিং নিয়ে করা রিট নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সরকার অবশ্য সঠিকভাবেই এর বিরুদ্ধে আপিল করেছে।
সমকাল :হঠাৎ করেই জাতীয় সংসদ ও আদালত মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়টিকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
ড. কামাল :এর কারণ রুগ্ণ রাজনীতি। সংসদ ও বিচার বিভাগের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। তাদের তো অনেক কিছু করার আছে। তারা কেন নিষ্ক্রিয় ও নীরব হয়ে আছে? এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত হওয়া উচিত। বিচার বিভাগ ও সংসদ মুখোমুখি হয়েছে। বিচারক নিয়োগে যোগ্যতা দেখা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা উচিত। একবার নয়, বারবার এটা ঘটছে। এ নিয়ে সংসদে আলোচনা দরকার।
সমকাল :সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশগুলোতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ জন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় কেন?
ড. কামাল : যেখানে রাজনীতি রুগ্ণ হয় না, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পদ এবং প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, সেখানে সরকারের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে কোনো অভিযোগ থাকে না। কিন্তু আমাদের দেশে কি সেটা হচ্ছে? এর উত্তর সবার জানা_ হচ্ছে না। তাই দেশের বিরাজমান অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এ কারণেই এসেছিল এবং এখনও অন্য কিছু ভাবার অবকাশ নেই।
সমকাল :আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রয়োজন আছে কিনা?
ড. কামাল : নির্বাচিত সরকার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে, এটাই ছিল সবার বদ্ধমূল বিশ্বাস। অথচ সেখানে রোগ ঢুকেছে। মনোনয়ন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য ও মিডিয়া ক্যুর মতো নতুন শব্দ আবিষ্কৃত হয়েছে। সব মিলিয়ে জনগণের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না বলেই অসন্তোষ বাড়ছে। এই অবস্থায় নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
সমকাল :তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিকল্প কী হতে পারে?
ড. কামাল :অনেক বিকল্প আছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে কেন? আদালতের রায়ে দুই টার্ম পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকতে পারে বলে বলা হয়েছে। এখন রায়ের পূর্ণ বিবরণ দেশবাসীর সামনে। এ থেকে যে নির্দেশনা মেলে তা অনুসরণ করলে সমঝোতা সম্ভব।
সমকাল :আপনি রাজনীতির মানুষ। পাঁচ দশক ধরে রাজনীতিতে সক্রিয়। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করুন?
ড. কামাল :কার্যকর গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে জনগণের ক্ষমতায়ন হবে বলে প্রত্যাশা ছিল। এটা সংবিধানেও আছে। যোগ্য ও সৎ ব্যক্তি নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসবেন। তারা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন। জাতি এটাই চেয়েছে। এ জন্য বারবার রক্ত দিয়েছে। অনেকে নির্যাতিত হয়েছে। তারা চেয়েছে রাবার স্ট্যাম্প সংসদ হবে না। চার মিনিটে আইন পাস হবে না। অথচ সেটা হয়েছে। জাতি এমনটা চায়নি। সংসদ কার্যকরভাবে কাজ করছে না। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো অকার্যকর হয়ে আছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে দলীয় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক কেলেঙ্কারি হচ্ছে। আইনের শাসন অনুপস্থিত। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডসহ বড় বড় ঘটনার বিচার হচ্ছে না। মানুষ গুম হচ্ছে। বিনাবিচারে হত্যার অভিযোগ অনেক। অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত হয় না, হলেও তদন্ত রিপোর্ট উপেক্ষিত থাকছে। বিনাবিচারে হত্যার তদন্ত রিপোর্ট উপেক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব ঘটনা ঘটছে, তা প্রত্যাশিত নয়। সেখানে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। কয়েক দিন আগে সরকারি দলের ক্যাডাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা খুশি করল। বুয়েটে প্রায় পাঁচ মাস অচলাবস্থা চলল। অন্যদিকে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ সুপার মন্ত্রী হয়ে আছেন। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের সাক্ষী গোপালে পরিণত করা হয়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি ও ব্যাংকিং খাতে স্বেচ্ছাচারিতা লক্ষণীয়। তবে এসব নিরাশার পাশাপাশি আশার কথাও বলতে হয়। সবাই নিজেদের প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে এক হচ্ছে এবং এতে ফল মিলতে পারে।
সমকাল :তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেননের মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
ড. কামাল : আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তাদের পক্ষে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। মানুষ তাদের কাছে এমন সিদ্ধান্তই আশা করেছিল। দেশবাসী তাদের সিদ্ধান্তকে ভালোভাবেই নিয়েছে।
সমকাল : ইতিমধ্যে ১৫ বার সংবিধান সংশোধন হয়েছে। এখন কোন কোন স্থানে সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন?
ড. কামাল : সংবিধান মেনে চললে সংশোধনের প্রয়োজন নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করা দরকার। এখন সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত।
সমকাল :রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি নিয়ে বলুন।
ড. কামাল : রুগ্ণ রাজনীতির কারণে ভবিষ্যতে রক্তপাত ও অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও আইনের শাসনের স্বার্থে জাতীয় ঐক্য দরকার। আশার কথা হলো, তরুণ সমাজ অনেক সচেতন হয়েছে। তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা জানাতে হবে। তারা এগিয়ে এলে অনেক সমস্যা কমে যাবে।
সমকাল : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকারের প্রধান সাফল্য ও ব্যর্থতা কী?
ড. কামাল :একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ীদের বিচার কাজ শুরু করাটা সরকারের বড় সাফল্য। আর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সরকারের ব্যর্থতা। মানুষ শান্তিতে জীবন কাটাতে চায়; কিন্তু পারছে না। বিরাট মেজরিটি নিয়ে আসা সরকার কী না করতে পারত। অথচ সরকার গঠনে যোগ্য ও মেধাবীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। দলে ও সরকারে ব্যক্তির আনুগত্যভোগী লোকজন প্রাধান্য পাচ্ছে। সংসদে অনেক যোগ্য লোক আছেন। তারা বোবা হয়ে গেছেন। সংসদকে অনেকটা অচল করা হয়েছে। এই অবস্থায় কেন যোগ্য লোকদের দায়িত্ব দেওয়া যাচ্ছে না, তা ভাবতে হবে।
সমকাল : সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে। অথচ দুর্নীতি দূর করাটাই ছিল আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার প্রতিপালনে তারা কেন ব্যর্থ হচ্ছে?
ড. কামাল : রুগ্ণ রাজনীতির কারণে দিনবদলের প্রতিশ্রুতি উপেক্ষিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকারীদের অনেকেই অযোগ্য ও ব্যর্থ। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। অথচ পদত্যাগপত্র মাসের পর মাস পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা ঘটেছে। আবার একজন মন্ত্রী নয় মাস ধরে পালানোর কথা বলেছেন। আবার আরেকজন নানা অভিযোগে পদত্যাগের পর তাকে দেশপ্রেমিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। জনগণ বিষয়টিকে ভালোভাবে গ্রহণ করে না।
সমকাল : কীভাবে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো সম্ভব বলে মনে করেন?
ড. কামাল :দুই নম্বরি উপদেষ্টাসহ পাঁচজন ব্যর্থ মন্ত্রীকে সরালেই পরিস্থিতির অনেকটা উত্তরণ ঘটবে। সে সঙ্গে ফাঁকিবাজ ও ধান্ধাবাজদের রাজনীতিতে ঢোকার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে যুক্তদের বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তরা টাকা ফেরত পাবে না, কিন্তু শান্তি পাবে।
সমকাল :হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে কিছু বলবেন?
ড. কামাল : এর পেছনে সরকারের লোকজন জড়িত রয়েছে। সে সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও ব্যর্থ হয়েছে। তারা ইচ্ছা করেই ব্যর্থ হয়েছেন কিনা এর তদন্ত করা উচিত। আর এভাবে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর কি গরিব মানুষের মুখে হাসি ফুটানো যায়?
সমকাল : পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিশ্বব্যাংকের অনাগ্রহ নিয়ে কিছু বলুন। এ নিয়ে সরকারের ভূমিকাকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
ড. কামাল :এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকার সময়মতো কোনো কাজ করতে পারছে না। তারা যা বলছে সেটা জনসাধারণ বিশ্বাস করতে চাইছে না।
সমকাল :গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি দেশ-বিদেশে সমালোচিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য বলবেন?
ড. কামাল : ভিত্তিহীনভাবে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের গৌরব। তাকে আঘাত করাটা কারোরই উচিত নয়। তিনি দেশের জন্য কাজ করছেন। বিশ্বের জন্যও অনেক কিছু করছেন। তাকে আদর্শ হিসেবে অনেকেই সামনে রাখেন।
সমকাল :আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল এবং তিন দশকের বেশি সময় ধরেই এটা চলছে। এর বিপরীতে বিকল্পধারা তৈরির উদ্যোগ আছে কিনা? এটা সম্ভব বলে মনে করেন কি?
ড. কামাল :জনগণ হলো মূল শক্তি। তাই মূলধারার রাজনীতি চাই। সংকীর্ণ-রুগ্ণ রাজনীতি ছেড়ে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির স্বার্থে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চাই।
সমকাল : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমন্ত্রণ জানালে কি আওয়ামী লীগে ফিরে যাবেন?
ড. কামাল : আমি আওয়ামী লীগ থেকে সরিনি। যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি। নীতি বিসর্জন দেইনি। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরামর্শ, 'চাটুকারদের কবল থেকে নিজেকে বাঁচান। আমি আপনার মঙ্গল চাই। আপনি সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই পাবেন।'
সমকাল :যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু বলবেন কি?
ড. কামাল :দ্রুত সফলভাবে যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা উচিত।
সমকাল : সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
ড. কামাল :সরকার নিজেরাই আত্মঘাতী কাজ করছে। একের পর এক ভুল করছে। সুতরাং তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে বিরোধী দলের কোনো দরকার নেই। বিএনপির অনেক কুকর্ম আছে। ক্ষমতায় থাকার সময়ে তারা বড় বড় ভুল করেছে। এ জন্যই তারা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ব্যর্থ রাজনীতি বিএনপিকে পুনরুজ্জীবিত করছে। আর নিজেরা বাঁচার জন্য আন্দোলনের নামে মাঠ দখলের চেষ্টা করছে বিএনপি। তবে হাওয়া ভবনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।
সমকাল :বিরোধী দল কি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারছে? একটানা সংসদ বর্জনের পেছনে তারা যে যুক্তির কথা বলছে, তা কতখানি গ্রহণযোগ্য?
ড. কামাল :বিএনপি অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে না। তাদের সংসদ বর্জন গ্রহণযোগ্য নয়।
সমকাল :জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা রয়েছে। বিএনপি বলছে, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
ড. কামাল : এসব মামলা কোনোভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।
সমকাল : বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় শত শত মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। এ ব্যাপারে মন্তব্য করুন।
ড. কামাল : রাজনৈতিক বিবেচনায় পাইকারিভাবে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সংবিধান পরিপন্থী। কোনোভাবেই নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।
সমকাল :আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু'দলই আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের আশঙ্কা করছে। আপনার ধারণা কী?
ড. কামাল :কেন এই আশঙ্কা তাদের? সরকার ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে কেন আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের আশঙ্কা করা হবে? আর সরকার ব্যর্থ হলে ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতেই পারে।
সমকাল : সাক্ষাৎকার প্রদানের জন্য ধন্যবাদ।
ড. কামাল : সমকাল পাঠকদের আমার শুভেচ্ছা।
সমকাল :আপনি একজন আইনবিশারদ। জাতীয় সংসদের স্পিকারের রুলিং নিয়ে আদালতের রায় প্রসঙ্গে কিছু বলবেন কি?
ড. কামাল :বিচার বিভাগ থেকে কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে স্পিকারকে আঘাত করা মানেই সংসদকে আঘাত করা। এ ক্ষেত্রে স্পিকারের প্রতিকার চাওয়ার অধিকার আছে। অথচ রুল না দিয়ে একতরফাভাবে স্পিকারের রুলিং নিয়ে করা রিট নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সরকার অবশ্য সঠিকভাবেই এর বিরুদ্ধে আপিল করেছে।
সমকাল :হঠাৎ করেই জাতীয় সংসদ ও আদালত মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়টিকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
ড. কামাল :এর কারণ রুগ্ণ রাজনীতি। সংসদ ও বিচার বিভাগের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। তাদের তো অনেক কিছু করার আছে। তারা কেন নিষ্ক্রিয় ও নীরব হয়ে আছে? এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত হওয়া উচিত। বিচার বিভাগ ও সংসদ মুখোমুখি হয়েছে। বিচারক নিয়োগে যোগ্যতা দেখা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা উচিত। একবার নয়, বারবার এটা ঘটছে। এ নিয়ে সংসদে আলোচনা দরকার।
সমকাল :সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশগুলোতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ জন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় কেন?
ড. কামাল : যেখানে রাজনীতি রুগ্ণ হয় না, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পদ এবং প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, সেখানে সরকারের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে কোনো অভিযোগ থাকে না। কিন্তু আমাদের দেশে কি সেটা হচ্ছে? এর উত্তর সবার জানা_ হচ্ছে না। তাই দেশের বিরাজমান অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এ কারণেই এসেছিল এবং এখনও অন্য কিছু ভাবার অবকাশ নেই।
সমকাল :আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রয়োজন আছে কিনা?
ড. কামাল : নির্বাচিত সরকার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে, এটাই ছিল সবার বদ্ধমূল বিশ্বাস। অথচ সেখানে রোগ ঢুকেছে। মনোনয়ন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য ও মিডিয়া ক্যুর মতো নতুন শব্দ আবিষ্কৃত হয়েছে। সব মিলিয়ে জনগণের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না বলেই অসন্তোষ বাড়ছে। এই অবস্থায় নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
সমকাল :তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিকল্প কী হতে পারে?
ড. কামাল :অনেক বিকল্প আছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে কেন? আদালতের রায়ে দুই টার্ম পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকতে পারে বলে বলা হয়েছে। এখন রায়ের পূর্ণ বিবরণ দেশবাসীর সামনে। এ থেকে যে নির্দেশনা মেলে তা অনুসরণ করলে সমঝোতা সম্ভব।
সমকাল :আপনি রাজনীতির মানুষ। পাঁচ দশক ধরে রাজনীতিতে সক্রিয়। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করুন?
ড. কামাল :কার্যকর গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে জনগণের ক্ষমতায়ন হবে বলে প্রত্যাশা ছিল। এটা সংবিধানেও আছে। যোগ্য ও সৎ ব্যক্তি নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসবেন। তারা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন। জাতি এটাই চেয়েছে। এ জন্য বারবার রক্ত দিয়েছে। অনেকে নির্যাতিত হয়েছে। তারা চেয়েছে রাবার স্ট্যাম্প সংসদ হবে না। চার মিনিটে আইন পাস হবে না। অথচ সেটা হয়েছে। জাতি এমনটা চায়নি। সংসদ কার্যকরভাবে কাজ করছে না। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো অকার্যকর হয়ে আছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে দলীয় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক কেলেঙ্কারি হচ্ছে। আইনের শাসন অনুপস্থিত। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডসহ বড় বড় ঘটনার বিচার হচ্ছে না। মানুষ গুম হচ্ছে। বিনাবিচারে হত্যার অভিযোগ অনেক। অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত হয় না, হলেও তদন্ত রিপোর্ট উপেক্ষিত থাকছে। বিনাবিচারে হত্যার তদন্ত রিপোর্ট উপেক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব ঘটনা ঘটছে, তা প্রত্যাশিত নয়। সেখানে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। কয়েক দিন আগে সরকারি দলের ক্যাডাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা খুশি করল। বুয়েটে প্রায় পাঁচ মাস অচলাবস্থা চলল। অন্যদিকে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ সুপার মন্ত্রী হয়ে আছেন। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের সাক্ষী গোপালে পরিণত করা হয়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি ও ব্যাংকিং খাতে স্বেচ্ছাচারিতা লক্ষণীয়। তবে এসব নিরাশার পাশাপাশি আশার কথাও বলতে হয়। সবাই নিজেদের প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে এক হচ্ছে এবং এতে ফল মিলতে পারে।
সমকাল :তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেননের মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
ড. কামাল : আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তাদের পক্ষে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। মানুষ তাদের কাছে এমন সিদ্ধান্তই আশা করেছিল। দেশবাসী তাদের সিদ্ধান্তকে ভালোভাবেই নিয়েছে।
সমকাল : ইতিমধ্যে ১৫ বার সংবিধান সংশোধন হয়েছে। এখন কোন কোন স্থানে সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন?
ড. কামাল : সংবিধান মেনে চললে সংশোধনের প্রয়োজন নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করা দরকার। এখন সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত।
সমকাল :রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি নিয়ে বলুন।
ড. কামাল : রুগ্ণ রাজনীতির কারণে ভবিষ্যতে রক্তপাত ও অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও আইনের শাসনের স্বার্থে জাতীয় ঐক্য দরকার। আশার কথা হলো, তরুণ সমাজ অনেক সচেতন হয়েছে। তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা জানাতে হবে। তারা এগিয়ে এলে অনেক সমস্যা কমে যাবে।
সমকাল : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকারের প্রধান সাফল্য ও ব্যর্থতা কী?
ড. কামাল :একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ীদের বিচার কাজ শুরু করাটা সরকারের বড় সাফল্য। আর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সরকারের ব্যর্থতা। মানুষ শান্তিতে জীবন কাটাতে চায়; কিন্তু পারছে না। বিরাট মেজরিটি নিয়ে আসা সরকার কী না করতে পারত। অথচ সরকার গঠনে যোগ্য ও মেধাবীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। দলে ও সরকারে ব্যক্তির আনুগত্যভোগী লোকজন প্রাধান্য পাচ্ছে। সংসদে অনেক যোগ্য লোক আছেন। তারা বোবা হয়ে গেছেন। সংসদকে অনেকটা অচল করা হয়েছে। এই অবস্থায় কেন যোগ্য লোকদের দায়িত্ব দেওয়া যাচ্ছে না, তা ভাবতে হবে।
সমকাল : সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে। অথচ দুর্নীতি দূর করাটাই ছিল আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার প্রতিপালনে তারা কেন ব্যর্থ হচ্ছে?
ড. কামাল : রুগ্ণ রাজনীতির কারণে দিনবদলের প্রতিশ্রুতি উপেক্ষিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকারীদের অনেকেই অযোগ্য ও ব্যর্থ। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। অথচ পদত্যাগপত্র মাসের পর মাস পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা ঘটেছে। আবার একজন মন্ত্রী নয় মাস ধরে পালানোর কথা বলেছেন। আবার আরেকজন নানা অভিযোগে পদত্যাগের পর তাকে দেশপ্রেমিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। জনগণ বিষয়টিকে ভালোভাবে গ্রহণ করে না।
সমকাল : কীভাবে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো সম্ভব বলে মনে করেন?
ড. কামাল :দুই নম্বরি উপদেষ্টাসহ পাঁচজন ব্যর্থ মন্ত্রীকে সরালেই পরিস্থিতির অনেকটা উত্তরণ ঘটবে। সে সঙ্গে ফাঁকিবাজ ও ধান্ধাবাজদের রাজনীতিতে ঢোকার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে যুক্তদের বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তরা টাকা ফেরত পাবে না, কিন্তু শান্তি পাবে।
সমকাল :হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে কিছু বলবেন?
ড. কামাল : এর পেছনে সরকারের লোকজন জড়িত রয়েছে। সে সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও ব্যর্থ হয়েছে। তারা ইচ্ছা করেই ব্যর্থ হয়েছেন কিনা এর তদন্ত করা উচিত। আর এভাবে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর কি গরিব মানুষের মুখে হাসি ফুটানো যায়?
সমকাল : পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিশ্বব্যাংকের অনাগ্রহ নিয়ে কিছু বলুন। এ নিয়ে সরকারের ভূমিকাকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
ড. কামাল :এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকার সময়মতো কোনো কাজ করতে পারছে না। তারা যা বলছে সেটা জনসাধারণ বিশ্বাস করতে চাইছে না।
সমকাল :গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি দেশ-বিদেশে সমালোচিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য বলবেন?
ড. কামাল : ভিত্তিহীনভাবে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের গৌরব। তাকে আঘাত করাটা কারোরই উচিত নয়। তিনি দেশের জন্য কাজ করছেন। বিশ্বের জন্যও অনেক কিছু করছেন। তাকে আদর্শ হিসেবে অনেকেই সামনে রাখেন।
সমকাল :আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল এবং তিন দশকের বেশি সময় ধরেই এটা চলছে। এর বিপরীতে বিকল্পধারা তৈরির উদ্যোগ আছে কিনা? এটা সম্ভব বলে মনে করেন কি?
ড. কামাল :জনগণ হলো মূল শক্তি। তাই মূলধারার রাজনীতি চাই। সংকীর্ণ-রুগ্ণ রাজনীতি ছেড়ে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির স্বার্থে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চাই।
সমকাল : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমন্ত্রণ জানালে কি আওয়ামী লীগে ফিরে যাবেন?
ড. কামাল : আমি আওয়ামী লীগ থেকে সরিনি। যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি। নীতি বিসর্জন দেইনি। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরামর্শ, 'চাটুকারদের কবল থেকে নিজেকে বাঁচান। আমি আপনার মঙ্গল চাই। আপনি সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই পাবেন।'
সমকাল :যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু বলবেন কি?
ড. কামাল :দ্রুত সফলভাবে যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা উচিত।
সমকাল : সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
ড. কামাল :সরকার নিজেরাই আত্মঘাতী কাজ করছে। একের পর এক ভুল করছে। সুতরাং তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে বিরোধী দলের কোনো দরকার নেই। বিএনপির অনেক কুকর্ম আছে। ক্ষমতায় থাকার সময়ে তারা বড় বড় ভুল করেছে। এ জন্যই তারা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ব্যর্থ রাজনীতি বিএনপিকে পুনরুজ্জীবিত করছে। আর নিজেরা বাঁচার জন্য আন্দোলনের নামে মাঠ দখলের চেষ্টা করছে বিএনপি। তবে হাওয়া ভবনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।
সমকাল :বিরোধী দল কি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারছে? একটানা সংসদ বর্জনের পেছনে তারা যে যুক্তির কথা বলছে, তা কতখানি গ্রহণযোগ্য?
ড. কামাল :বিএনপি অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে না। তাদের সংসদ বর্জন গ্রহণযোগ্য নয়।
সমকাল :জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা রয়েছে। বিএনপি বলছে, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
ড. কামাল : এসব মামলা কোনোভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।
সমকাল : বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় শত শত মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। এ ব্যাপারে মন্তব্য করুন।
ড. কামাল : রাজনৈতিক বিবেচনায় পাইকারিভাবে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সংবিধান পরিপন্থী। কোনোভাবেই নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।
সমকাল :আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু'দলই আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের আশঙ্কা করছে। আপনার ধারণা কী?
ড. কামাল :কেন এই আশঙ্কা তাদের? সরকার ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে কেন আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের আশঙ্কা করা হবে? আর সরকার ব্যর্থ হলে ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতেই পারে।
সমকাল : সাক্ষাৎকার প্রদানের জন্য ধন্যবাদ।
ড. কামাল : সমকাল পাঠকদের আমার শুভেচ্ছা।
No comments