পবিত্র কোরআনের আলো-জান্নাত কোনো জাতিগোষ্ঠীর নয় বরং সত্য অনুশীলনকারীর

১১০. ওয়াআক্কিমুস্‌ সালাতা ওয়া আতুয যাকাতা; ওয়ামা তুক্বাদ্দিমু লিআনফুসিকুম মিন খাইরিন তাজিদুহু 'ইনদাল্লাহি; ইন্নাল্লাহা বিমা তা'মালূনা বাসির। ১১১. ওয়া ক্বালু লাইঁয়াদ্খুলাল জান্নাতা ইল্লা মান কানা হুদান আও নাসারা; তিলকা আমানিয়ুহুম; ক্বুল হাতূ বুরহানাকুম ইন কুনতুম সাদিকি্বন।


১১২. বালা; মান আসলামা ওয়াজ্হাহু লিল্লাহি ওয়া হুয়া মুহসিনুন ফালাহু আজরুহু 'ইনদা রাব্বিহি; ওয়ালা খাওফুন 'আলাইহিম ওয়ালাহুম ইয়াহ্‌যানূন।
(সুরা বাকারা, আয়াত ১১০-১১২)

অনুবাদ
১১০. তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো এবং জাকাত আদায় করো, যেসব নেকি তোমরা তোমাদের জন্য সামনে নিয়ে আসবে; অর্থাৎ যেসব সৎ কাজ করবে এর সবই আল্লাহর কাছে পাবে, তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই এর সব কিছু দেখতে পান।
১১১. তারা বলে, ইহুদি ও খ্রিস্টান ছাড়া আর কেউই বেহেশতে যাবে না, এটা তাদের মিথ্যা কল্পনা; হে নবী আপনি বলুন, তোমরা যদি ঠিক বলে থাকো, তবে এর প্রমাণ নিয়ে এসো।
১১২. হ্যাঁ, যেকোনো ব্যক্তি আল্লাহর পথে (ন্যায় ও সত্যের প্রতি) নিজের সত্তাকে সমর্পণ করে দেবে এবং সে হবে একজন নেককার মানুষ। তার জন্য তার প্রভুর কাছে বিনিময় রয়েছে; তাদের কোনো ভয় নেই, আর তাদের কোনো দুশ্চিন্তাও নেই।

ব্যাখ্যা
১১০ নম্বর আয়াতে নামাজ কায়েম করা এবং জাকাত আদায় করার নির্দেশ একসঙ্গে এসেছে। কোরআন মজিদের আরো অনেক জায়গায় এই দুটি কাজের নির্দেশ একসঙ্গে এসেছে। এতে কাজ দুটোর সর্বাধিক গুরুত্ব আমরা অনুধাবন করতে পারি। গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি কাজের নির্দেশ দেওয়ার পর আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা ভালো কাজ যা কিছুই করব তা কখনোই বৃথা যাবে না, আল্লাহর কাছে তা মজুদ থাকবে। আমরা যা কিছু করি, সবই আল্লাহ দেখতে পান।
১১১ নম্বর আয়াতের শানেনুজুল এ রকম : ইহুদিরা বলত যে ইহুদি ছাড়া খ্রিস্টান বা মুসলমান বা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষ কেউই বেহেশতে যেতে পারবে না। অনুরূপভাবে খ্রিস্টানরা বলত যে খ্রিস্টান ছাড়া ইহুদিরা বা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বেহেশতে যেতে পারবে না। অথচ ইহুদিরা যে তাওরাত কিতাব পাঠ করে, তাতে ইঞ্জিল ও কোরআনসহ আল্লাহ কিতাব নবীদের সত্য বলে স্বীকার করা হয়েছে। অনুরূপভাবে খ্রিস্টানদের ইঞ্জিল কিতাবেও তাওরাত ও কোরআনের সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। অথচ তারা একে অপরের সম্পর্কে চূড়ান্ত খারাপ ধারণা পোষণ করে। তারা একে অপরের ধর্মকে ভিত্তিহীন বলত, আহলে কিতাবদের এ অবস্থা দেখে আরবের পৌত্তলিকরাও দাবি করতে থাকে যে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ধর্মের কোনো ভিত্তি নেই; বরং পৌত্তলিকরাই সঠিক পথে আছে।
এ আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এসব তাদের অলীক কল্পনা বা বানোয়াট সান্ত্বনা।
তাদের এ রকম দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। এর পরের আয়াত; অর্থাৎ ১১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, প্রকৃত সত্যটা কী। অর্থাৎ বেহেশতবাসী কারা। প্রকৃত সত্য হলো, যে ব্যক্তি ন্যায় ও সত্যের পথে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং ভালো কাজে লিপ্ত থাকবে সেই হচ্ছে বেহেশতবাসী। এখানে আল্লাহ তায়ালা ইসলামের উদারনৈতিক সত্য উন্মোচন করেছেন। সত্য কোনো জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, বর্ণ বা দেশ-কালে সীমাবদ্ধ নয়। যারা সত্যকে স্বীকার করবে, সত্যের পথে আত্মনিবেদন করবে, তাদের জন্যই আল্লাহর কাছে উপযুক্ত বিনিময় রয়েছে। তাদের কোনো ভয় ও দুশ্চিন্তা নেই।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.