ঐতিহাসিক রায়
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে নির্বাচনকালীন অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। রায়ের সামারিতে পরবর্তী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে করা যেতে পারে বলা হলেও পূর্ণাঙ্গ রায়ে তার উল্লেখ নেই। রায় প্রদানকালীন প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিরা রায়ে চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষর করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির আইনী জটিলতার অবসান হলো।
১৯৯৬ সালে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী আনা হয়। এরপর এ ব্যবস্থার অধীনে তিনটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৬ সালে ক্ষমতায় এসে দীর্ঘ দুই বছর ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করে এবং স্বাভাবিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূলোৎপাটনে তারা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। এর পূর্বেকার দু’টি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের রুটিনদায়িত্ব পালন ও নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করলেও সর্বশেষ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সে রুটিনদায়িত্বের পরিবর্তে অন্যবিধ এজেন্ডা বাস্তবায়নে বেশি তৎপর হয়। শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ অন্য নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেফতারের মাধ্যমে রাজনীতি থেকে যেভাবে রাজনীতিকদের মাইনাস করার তোড়জোড় চলে, মূলত তখন থেকেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সমালোচিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের জন্য। কিন্তু সে দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে সেই সরকার যদি রাজনীতিক বিতাড়নের কাজ শুরু করে তাহলে সে ব্যবস্থায় কোন সচেতন মানুষেরই আস্থা থাকার কথা নয়। রাজনীতিবিদেরা সরকারে এসে দেশের শাসন পরিচালনা করেন। তাঁরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেন বলে জনগণের কাছে তাঁদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জনগণের কাছে তত্ত্বাবধায়ক নামক অনির্বাচিত ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত সরকারের ম্যান্ডেটরি দায়বদ্ধতা থাকে না বলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে।
অন্য আরও একটি বিষয় বিবেচনায় আনা যেতে পারে। অনির্বাচিত তত্তা¡বধায়ক ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন পাঁচটি বছরব্যাপী বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও আবহের সঙ্গে খুবই বেমানান ও অসঙ্গতিপূর্ণ। এই ব্যবস্থা রাজনীতির জন্য যেমন, তেমনি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্যও অবমাননাকর বলেই প্রতীয়মান। তাই আত্মমর্যাদা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের স্বার্থে পৃথিবীর কোন দেশেই এ ব্যবস্থা কেউ গ্রহণ করেনি। একটি স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ ও সর্বস্তরের জনগণ গণতান্ত্রিক পন্থায় শান্তিপূর্ণভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে না, তার জন্য স্বল্পমেয়াদী একটি অনির্বাচিত সরকার সেই দায়িত্ব পালন করবে; এটা কি সম্মান ও গৌরবের কথা? এমন অদ্ভুত ব্যবস্থা বাংলাদেশের সংবিধানে নেই সেখানে আছে ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ সরকারের কথা। এ কারণে তত্ত্বাবধায়ক সংক্রান্ত সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ে এ ব্যবস্থাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করে একে বাতিল করা হয়েছে।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ত্রয়োদশ সংশোধনীভুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ নিয়ে আর কোন বিতর্ক বা এ নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অবকাশ নেই। এখন যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সাংবিধানিক পন্থায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার ও বিরোধী দলের সমান দায়িত্ব রয়েছে। অহেতুক বাদ-প্রতিবাদ আর বিতর্ক সৃষ্টি করে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, জাতীয় নির্বাচনও হুমকির মুখে পড়বে। তাতে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিবিদরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন; আর লাভবান হবে ১/১১-এর সময়ের মতো ভিন্ন এক অগণতান্ত্রিক শক্তি। তত্ত্বাবধায়ক সংক্রান্ত সাম্প্রতিক রায়ে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনকালীন যেসব ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশা করা যায়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের জন্য। কিন্তু সে দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে সেই সরকার যদি রাজনীতিক বিতাড়নের কাজ শুরু করে তাহলে সে ব্যবস্থায় কোন সচেতন মানুষেরই আস্থা থাকার কথা নয়। রাজনীতিবিদেরা সরকারে এসে দেশের শাসন পরিচালনা করেন। তাঁরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেন বলে জনগণের কাছে তাঁদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জনগণের কাছে তত্ত্বাবধায়ক নামক অনির্বাচিত ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত সরকারের ম্যান্ডেটরি দায়বদ্ধতা থাকে না বলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে।
অন্য আরও একটি বিষয় বিবেচনায় আনা যেতে পারে। অনির্বাচিত তত্তা¡বধায়ক ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন পাঁচটি বছরব্যাপী বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও আবহের সঙ্গে খুবই বেমানান ও অসঙ্গতিপূর্ণ। এই ব্যবস্থা রাজনীতির জন্য যেমন, তেমনি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্যও অবমাননাকর বলেই প্রতীয়মান। তাই আত্মমর্যাদা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের স্বার্থে পৃথিবীর কোন দেশেই এ ব্যবস্থা কেউ গ্রহণ করেনি। একটি স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ ও সর্বস্তরের জনগণ গণতান্ত্রিক পন্থায় শান্তিপূর্ণভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে না, তার জন্য স্বল্পমেয়াদী একটি অনির্বাচিত সরকার সেই দায়িত্ব পালন করবে; এটা কি সম্মান ও গৌরবের কথা? এমন অদ্ভুত ব্যবস্থা বাংলাদেশের সংবিধানে নেই সেখানে আছে ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ সরকারের কথা। এ কারণে তত্ত্বাবধায়ক সংক্রান্ত সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ে এ ব্যবস্থাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করে একে বাতিল করা হয়েছে।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ত্রয়োদশ সংশোধনীভুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ নিয়ে আর কোন বিতর্ক বা এ নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অবকাশ নেই। এখন যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সাংবিধানিক পন্থায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার ও বিরোধী দলের সমান দায়িত্ব রয়েছে। অহেতুক বাদ-প্রতিবাদ আর বিতর্ক সৃষ্টি করে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, জাতীয় নির্বাচনও হুমকির মুখে পড়বে। তাতে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিবিদরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন; আর লাভবান হবে ১/১১-এর সময়ের মতো ভিন্ন এক অগণতান্ত্রিক শক্তি। তত্ত্বাবধায়ক সংক্রান্ত সাম্প্রতিক রায়ে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনকালীন যেসব ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশা করা যায়।
No comments