ছুটির দিনেও উঁকি দিচ্ছে নিউজিল্যান্ড by উৎপল শুভ্র

ক্যান্ডিতে এসে প্রথম দিনটা ক্রিকেট থেকে দূরে থাকল বাংলাদেশ দল। তবে খেলা থেকে নয়। রিসোর্টপম ক্যান্ডির মাহাভেলি রিচ হোটেলের গেম রুম সরগরম করে রাখলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কেউ বিলিয়ার্ড খেললেন, কেউ ক্যারম, কেউ বা দাবা। টেবিল টেনিসও বাদ গেল না। অনেকে ঘুরে ঘুরে সব খেলাই।


মাশরাফি-সাকিবের মধ্যে দাবায় জোর লড়াই হলো। শেষ পর্যন্ত যাতে ২-১ ম্যাচে জয়ী মাশরাফি। পেশাদার ক্রীড়াবিদদের রক্তে প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা ঝাঁজ থাকে। সাকিব হয়তো সে কারণেই গম্ভীর মুখে বললেন, ‘মন দিয়ে খেললে আমি উনাকে হারিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু দাবায় খুব মনঃসংযোগ করতে হয়, আমি বেশিক্ষণ তা পারি না।’
মুশফিকুর রহিমের মনে হয় ক্যারম খেলাটা খুব পছন্দের। কলম্বোর তাজ সমুদ্র হোটেলেও ক্যারম বোর্ডে খুব মনোযোগী দেখা গেছে তাঁকে। এখানেও অন্যরা এ খেলা থেকে ও খেলায় বিচরণ করলেও বাংলাদেশ অধিনায়ক ক্যারম বোর্ডেই পড়ে থাকলেন।
তামিম ইকবালের মতো কেউ কেউ আবার অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমালেন। বিকেলে একটা দল হোটেলের গা ঘেঁষে বয়ে চলা মাহাভেলি নদীতে নৌবিহারে ঘুরে এল। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য কাল ছিল যা ইচ্ছা করার দিন। ম্যাচ নেই, প্র্যাকটিস নেই। অলস দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যায় অনুচ্চারে যেন বেজে গেল ‘আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি’।
বিশ্বকাপের মহাযুদ্ধে নামার আগে এই ছুটিটা ক্রিকেটারদের পাওনাই ছিল। অনেক দিন ধরে টানা খেলা আর প্লেন-বাসের সঙ্গে মিতালি। টি-টোয়েন্টি ছোট্ট খেলা, কিন্তু রীতিমতো স্নায়ুক্ষয়ী। তার ওপর গত পরশু আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে মাঠ থেকেই ক্যান্ডির বাসে চড়েছেন মুশফিকরা। রাস্তায় প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। সমতল থেকে আস্তে আস্তে পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়েছে বাস। কিন্তু ক্রিকেটারদের দুই পাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার মতো অবস্থা ছিল না। ক্লান্তিতে বেশির ভাগই পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছেন।
ফুরফুরে ছুটির দিনেও অবশ্য মাঝেমধ্যে হানা দিয়েছে আগের দিন আয়ারল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের দুঃখ। মাশরাফি যে কারণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘ প্রস্তুতি পর্বটা কেমন হলো—এই প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘ফিফটি-ফিফটি। কারণ, আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে গেছি।’
আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ের কাছে হারলে বাংলাদেশের অহমে একটু বেশিই লাগে। মুশফিকুর রহিমেরও লেগেছে। অন্যদের চেয়ে হয়তো একটু বেশিই। তিনি অধিনায়ক, এটা একটা কারণ। আরেকটা কারণ, একেবারে সহজ ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারেননি। ম্যাচ শেষে কেভিন ও’ব্রায়ানের বড় বড় কথার জবাবে ঝাঁজালো কিছু না বলে দুঃখভরে বললেন, ‘এই ম্যাচটা জেতায় ওদের তো খুব বেশি কৃতিত্ব নেই। ওরা ম্যাচটা জেতেনি, আমরা ওদের ম্যাচটা দিয়ে এসেছি।’
হাজী মুহম্মদ মহসীনের মতো দানবীর হয়ে ম্যাচটা দিয়ে আসার ‘কৃতিত্ব’ মিডল অর্ডারের, যার অংশ অধিনায়ক নিজেও। মিডল অর্ডার গত বেশ কটি ম্যাচেই দুশ্চিন্তার নাম। তবে অন্তত আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে সমস্যাটা কোথায় হয়েছে, সেটি ধরতে পেরেছেন মুশফিকুর, ‘সাধারণত আমরা যখন নামি, তখন মেরে খেলতে হয়। কিন্তু এদিন পরিস্থিতিটা ছিল খুব সহজ, ওভারে পাঁচ-সাড়ে পাঁচ হলেই চলে। এ কারণে একটু ধরে খেলতে গিয়েছি, এতেই সমস্যাটা হয়েছে। তিন-চারটা বল ডট হলেই ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ চলে এসেছে। আমাদের পজিটিভ থাকা উচিত ছিল। তা হলে হয়তো ম্যাচটা তিন/ চার ওভার আগেই শেষ হয়ে যেত। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতিতে পড়লে আমরা তা-ই করব।’
এই বিশ্বকাপের আগে টানা ১৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে লাভ হয়েছে এটাই। ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচয় হয়েছে ক্রিকেটারদের। যে কারণে মুশফিকুর মনে করছেন, এমন প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ আগে কখনো কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে নামেনি। মাশরাফি অবশ্য সেই প্রস্তুতিতে একটা ফাঁক ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘দু-একটা প্রস্তুতি ম্যাচ বড় দলের সঙ্গে খেলতে পারলে ভালো হতো।’
গত জুলাই থেকে বাংলাদেশ যে ১৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে, তার নয়টিতেই জয়। কিন্তু নয়টি জয়ের চেয়ে ছয়টি পরাজয়ই বড় হয়ে উঠছে, কারণ এর পাঁচটিতে প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে, ত্রিনিদাদ, হল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মতো দল। একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়টাই এই সময়ে গর্ব করার মতো। অধিনায়ক কীভাবে দেখছেন এই প্রস্তুতি পর্বটাকে? ‘এই ১৫টা ম্যাচে যা যা চেয়েছিলাম, ব্যক্তিগতভাবে হয়তো অনেকে তা করতে পারিনি। তবে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বলব, ৮০-৮৫ ভাগ লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে।’
পরাজয়গুলোকে বড় করে দেখছেন না, কারণ মুশফিকের চোখে ‘টি-টোয়েন্টিতে বড় দল-ছোট দল বলে কিছু নেই’। তার পরও সব দল সমান নয়। মুশফিকই যেমন এগিয়ে রাখছেন পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তাঁর চোখে ফেবারিট এই দুটি দলই। কারণ, ‘দুই দলেই অনেক ম্যাচ উইনার আছে।’
‘ফেবারিট’দের একটি আবার বাংলাদেশের গ্রুপ প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশ দলের ভাবনার আকাশে অবশ্য এখনো পাকিস্তানের আবির্ভাব হয়নি। সেখানে এখন শুধুই নিউজিল্যান্ড। আগামী শুক্রবার প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষও কাগজে-কলমে হয়তো এগিয়ে। কিন্তু ‘টি-টোয়েন্টিতে ছোট দল-বড় দল কিছু নেই’ মন্ত্রে বিশ্বাস রেখে এই ম্যাচটাকেই সুপার এইটে ওঠার সিঁড়ি বলে ভাবছে বাংলাদেশ দল।

No comments

Powered by Blogger.