সন্তান প্রসব-অপ্রয়োজনে অস্ত্রোপচার নয়
চিকিৎসা এখন যতখানি না 'সেবা' তার থেকে অনেক বেশি 'বাণিজ্য'_ এই পর্যবেক্ষণ কতটা সত্য, ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন। সন্তান জন্মদানের মতো স্বাভাবিকতম জৈবিক প্রক্রিয়াও কতিপয় চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোভের কারণে কীভাবে বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে উঠছে, মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তার খণ্ডচিত্র।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, মায়ের অপুষ্টি ও গর্ভকালীন নানা জটিলতার কারণে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রসবের ক্ষেত্রে সিজার প্রয়োজন হয়। অথচ আমাদের দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে জন্ম নেওয়া কমবেশি ৭০ শতাংশ শিশুই পৃথিবীর আলো দেখছে মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের পথ ধরে। বলা বাহুল্য, সেই পথে চিকিৎসকের উচ্চ পারিশ্রমিক থাকে, থাকে ওষুধ বিক্রি এবং হাসপাতালের বাড়তি আয়ের চেনা-অচেনা বাঁক। ফলে অনেক সময় সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের সন্তান জন্মের মধ্য দিয়ে ঘর আলো হয় বটে, সেই সঙ্গে ঋণ ও বন্ধকের অন্ধকার জমে চারপাশে। কিন্তু তার চেয়েও বড় ঝুঁকি হলো স্বাস্থ্যগত। প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের শিকার মা ও শিশু যে স্বাভাবিক প্রসূতি ও নবজাতকের তুলনায় নাজুক থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। এও সত্য, নজরদারি থাকলে গত ১০ বছরে সারাদেশে শিশু জন্মে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা পাঁচগুণ বাড়তে পারত না। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাভাবিক প্রসবে বেশি সময়ের কথা ভেবেও চিকিৎসক ও নার্সরা অনুৎসাহ প্রদর্শন করেন। তাদের বোঝাতে হবে, চিকিৎসাসেবা আর দশটা পেশার মতো ঘণ্টা-পারিশ্রমিকের দাস নয়। এর সঙ্গে মানবতা ও জীবনের প্রশ্নটি জড়িত। অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি চিকিৎসকদের মানসিকতা পরিবর্তনও জরুরি। প্রসবকালে সবসময়ই-বা কেন চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে? আমাদের দেশে শত শত বছর ধরে ধাত্রীরা প্রসবকালীন সহায়তা দিয়ে আসছেন। তাদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। তাহলে হাসপাতালের ওপর চাপও কমবে। একই সঙ্গে প্রসূতি ও তার পরিবারেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পাশাপাশি তারাও স্বাভাবিক প্রসব প্রক্রিয়ার তথাকথিত ঝুঁকি নিতে চান না। অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার বন্ধ করতে স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে বলব আমরা। জনস্বাস্থ্য ও সাধারণের স্বার্থবিরোধী এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে। সবাই আন্তরিক হলে তা কঠিন নয়।
No comments