স্মরণ-ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে সা'দত আলী আখন্দ-আজ by শামীম মমতাজ
তখন বিজয়ের আরো সাত মাস বাকি, মাত্র ২১০টি দিন পার করতে পারলেন না আজীবন কলমযোদ্ধা, লড়াকু লেখক, সেকালের তরুণ মুসলিম সা'দত আলী আখন্দ। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ জয়ের আগেই একাত্তরের ১২ মে রক্তাক্ত বাংলাকে ছেড়ে তিনি চলে গেলেন চিরশান্তির জগতে।
না, নিজে চোখে দেখে যেতে পারলেন না তাঁর সারা জীবনের স্বপ্ন বাঙালির স্বাধীনতা ও সাধের লাল-সবুজ পতাকার সোনার বাংলা। না, নিজে কানে শুনে যেতে পারলেন না তাঁর সন্তান এম আর আখতার মুকুলের কণ্ঠের মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের প্রতিদিনের শব্দযুদ্ধ 'চরমপত্র'। এর পরে আরো জানার ছিল তাঁর উত্তরসূরি সুযোগ্য দুই সন্তান চরমপত্রখ্যাত এম আর আখতার মুকুল ও গবেষক ড. মুস্তাফা নূরউল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার 'স্বাধীনতা পুরস্কার'_তাই কিছুটা আক্ষেপ, আপসোস রয়ে যায় মনে। তবে একাত্তরে ৭ মার্চ রেডিওতে শুনেছিলেন তিনি সেই বজ্রকণ্ঠের আহ্বান। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ৭০ বছর বয়সী সংগ্রামী পুরুষ ঘর ছেড়ে পা বাড়ালেন অজানার পথে, ফেলে গেলেন তাঁর শেষ আশ্রয় জীবনের ৪৫ বছর ধরে জমানো 'আখন্দ পরিবার লাইব্রেরি', যেখানে সঞ্চিত ছিল সংগৃহীত অনেক দুষ্প্রাপ্য বই, ব্যক্তিগত চিঠিপত্র, ডায়রি ও রচনাকর্ম। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সব কিছু লুট করে বাকিগুলো পুড়িয়ে দেয়। কারণ, ওদের জানা ছিল সা'দত আলী আখন্দ নামের মানুষটি কোনো বিশ্বাস-মানস-ভাবনার ধারক, প্রচারক, স্টাবি্লশমেন্টবিরোধী, মুক্তচিন্তার প্রগতিবাদী ছিলেন।
'বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো'_এই প্রত্যয়ে তিনি বুঝে গিয়েছিলেন এখনই প্রকৃত সময় সাত কোটি বাঙালির সামনে এক দুঃসাহসী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার। ১২ মে এক অজানা-অচেনা, নাম না-জানা অজপাড়াগাঁয়ে পলাতক জীবনের মাঝে তিনি চলে গেলেন। এর পরের ঘটনা আরো বেদনাভরা মর্মান্তিক। সে সময়ে ভয়ংকর যুদ্ধের দাবানলে রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের মধ্যে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে বগুড়ার নামাজগড়ে নিজের তৈরি আখন্দ পরিবার কবরস্থানে পৌঁছানো ছিল এক অসম্ভব অবিশ্বাস্য কাহিনী। আজ আবারও ফিরে এসেছে ১২ মে_আজ সা'দত আলী আখন্দের চলে যাওয়ার ৪০ বছরের সঙ্গে বাংলাদেশও ৪০ বছরে পা দিয়েছে। আর তাই বারবারই মন ছুটে চলেছে সেই মুক্তিযুদ্ধের আগুনঝরা মে মাসের উত্তাল দিনগুলোর মাঝে। ৭০ বছর বয়সী চিরযুবা সা'দত আলী আখন্দের জীবনযুদ্ধে শেষ লড়াই ছিল বাঙালির জন্য একটি ঠিকানা, একটি দেশ, যার নাম বাংলাদেশ। ইতিহাসের ছাত্র, ইতিহাসের গবেষক সা'দত আলী আখন্দের সারা জীবনটাকে ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে নিয়ে চলি গত শতাব্দীর গোড়ায়, কেমন। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার আমল তখন সময়কাল উনিশ শ ছাবি্বশ-সাতাশ। চারদিকে ধর্মান্ধতার আঁধারে ভরাসমাজ, পেশায় তখন তিনি সরকারি কর্মকর্তা, তাও পুলিশ বিভাগে। তার মানে চোর, গুণ্ডা আর বদমাশ দিয়ে কায়কারবার। মানুষটা যেহেতু মনে মনে একটি খাঁটি আদর্শ বাঙালি পরিচ্ছন্ন মুক্তবুদ্ধির চিন্তার মননশীল লেখক। তাই তাঁর কলমে পাতায় পাতায় এমন সব রচনা প্রকাশ করে চলেছেন তিনি, যার মধ্যে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই তার পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, মুক্তবুদ্ধির চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। বাঙালি মুসলিম সমাজের অজ্ঞতা, কুসংস্কার সম্পর্কে তাঁর সংস্কারমূলক গভীর চিন্তা-ভাবনা সাহিত্যকর্মে ধরা পড়ে। মূলত তিনি ঘুণেধরা সমাজের গোঁড়ামি ও অনগ্রসরতা থেকে মুক্ত করতে কলম ধরেছিলেন। শত বছর সময় ধরে বাঙালিত্বের চেতনার উদ্বোধন-বিকাশের প্রয়াস করে গিয়েছেন সা'দত আলী আখন্দসহ আমাদের প্রাণ পূর্ব-পুরুষরা।
শামীম মমতাজ
'বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো'_এই প্রত্যয়ে তিনি বুঝে গিয়েছিলেন এখনই প্রকৃত সময় সাত কোটি বাঙালির সামনে এক দুঃসাহসী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার। ১২ মে এক অজানা-অচেনা, নাম না-জানা অজপাড়াগাঁয়ে পলাতক জীবনের মাঝে তিনি চলে গেলেন। এর পরের ঘটনা আরো বেদনাভরা মর্মান্তিক। সে সময়ে ভয়ংকর যুদ্ধের দাবানলে রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের মধ্যে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে বগুড়ার নামাজগড়ে নিজের তৈরি আখন্দ পরিবার কবরস্থানে পৌঁছানো ছিল এক অসম্ভব অবিশ্বাস্য কাহিনী। আজ আবারও ফিরে এসেছে ১২ মে_আজ সা'দত আলী আখন্দের চলে যাওয়ার ৪০ বছরের সঙ্গে বাংলাদেশও ৪০ বছরে পা দিয়েছে। আর তাই বারবারই মন ছুটে চলেছে সেই মুক্তিযুদ্ধের আগুনঝরা মে মাসের উত্তাল দিনগুলোর মাঝে। ৭০ বছর বয়সী চিরযুবা সা'দত আলী আখন্দের জীবনযুদ্ধে শেষ লড়াই ছিল বাঙালির জন্য একটি ঠিকানা, একটি দেশ, যার নাম বাংলাদেশ। ইতিহাসের ছাত্র, ইতিহাসের গবেষক সা'দত আলী আখন্দের সারা জীবনটাকে ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে নিয়ে চলি গত শতাব্দীর গোড়ায়, কেমন। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার আমল তখন সময়কাল উনিশ শ ছাবি্বশ-সাতাশ। চারদিকে ধর্মান্ধতার আঁধারে ভরাসমাজ, পেশায় তখন তিনি সরকারি কর্মকর্তা, তাও পুলিশ বিভাগে। তার মানে চোর, গুণ্ডা আর বদমাশ দিয়ে কায়কারবার। মানুষটা যেহেতু মনে মনে একটি খাঁটি আদর্শ বাঙালি পরিচ্ছন্ন মুক্তবুদ্ধির চিন্তার মননশীল লেখক। তাই তাঁর কলমে পাতায় পাতায় এমন সব রচনা প্রকাশ করে চলেছেন তিনি, যার মধ্যে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই তার পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, মুক্তবুদ্ধির চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। বাঙালি মুসলিম সমাজের অজ্ঞতা, কুসংস্কার সম্পর্কে তাঁর সংস্কারমূলক গভীর চিন্তা-ভাবনা সাহিত্যকর্মে ধরা পড়ে। মূলত তিনি ঘুণেধরা সমাজের গোঁড়ামি ও অনগ্রসরতা থেকে মুক্ত করতে কলম ধরেছিলেন। শত বছর সময় ধরে বাঙালিত্বের চেতনার উদ্বোধন-বিকাশের প্রয়াস করে গিয়েছেন সা'দত আলী আখন্দসহ আমাদের প্রাণ পূর্ব-পুরুষরা।
শামীম মমতাজ
No comments