ঘুরে আসি স্মৃতিসৌধ by রয়া মুনতাসীর
এসে গেল স্বাধীনতার মাস। চারদিকে কত আয়োজন চলবে মাসজুড়ে। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত স্থাপত্যগুলো কি ঘুরে দেখা হয়েছে? অনেকেই ভুরু কুঁচকে ভাবতে বসবেন। অন্য সময় না হোক, এ মাসে না-হয় দুই চোখ ভরে দেখে আসা যাক স্বাধীনতার অনন্যনিদর্শন স্মৃতিসৌধটি। সঙ্গে নিয়ে নিন পরিবারের শিশু সদস্যটিকে।
যাওয়া হয়নি স্মৃতিসৌধে
ঘুরে বেড়ানোর জায়গার কি অভাব আছে? দেশের মাঝেই তো হাজারো জায়গা। শুধু বাড়ি থেকে বের হওয়া বাকি। ছুটি উপভোগ করতে দেশের বাইরে অনেক জায়গায় বেরিয়ে আসা হয়। কিন্তু বাড়ি থেকে দুকদম এগিয়ে হয়তো দেখে আসা হয়নি স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত কোনো স্থাপত্য। ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে সাভারে অবস্থিত স্মৃতিসৌধের কথাই ধরা যাক না কেন। জানার এবং দেখার উদ্দেশ্যে অনেকেরই হয়তো যাওয়া হয় না। পিকনিকে যাওয়ার উপলক্ষেও কিন্তু সন্তানদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা যায় ঘুরে আসার জন্য। এরপর শুনিয়ে দিন স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল কাহিনি গল্পের ছলে।
এ ফিচারটি লেখার সময় কথা হয়েছিল তরুণ প্রজন্মের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, দেখা হয়েছে কি জাতীয় স্মৃতিসৌধ? হাতেগোনা কয়েকটি উত্তর এসেছে ইতিবাচক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনন্যা রহমান বলেন, ‘স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে শুনেছি। তবে খুব বেশি কিছু জানি না এ সম্পর্কে। হ্যাঁ, পাশ দিয়ে গিয়েছি কয়েকবার, তবে ভেতরে ঢোকা হয়নি।’ বন্ধুর এ বক্তব্যে সায় দিলেন হাসান কবির। ‘আমারও কখনো যাওয়া হয়নি, তবে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।’
স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত এই স্থানগুলো দেখার গুরুত্ব তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক হতাশার মাঝেও আমাদের আশার জায়গা ছিল মুক্তিযুদ্ধ। সব হতাশার মধ্য দিয়ে দেশটি যে এখনো এগোচ্ছে, তার একটি কারণ হলো তরুণ প্রজন্ম। বিশ্বায়নের যুগে তারাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের। তাদের যদি স্বাধীনতার কথা স্মরণ করানো যায়, তাহলে তারা আরও অগ্রসর হবে।’
আমার বন্ধু রাশেদ ছবিতে রাশেদ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চৌধুরী যাওয়াতা আফনান। কথা হয় তাঁর সঙ্গে, ‘ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে বলে সব সময় যাওয়া হয় না। তবে ছোটবেলায় গিয়েছিলাম। এর আগে ছবিতে সব সময় দেখে এসেছি। প্রথমবার সামনে দেখে মনটা ভালো লাগায় ভরে গিয়েছিল। এ ছাড়া চাচা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সে জন্য পরিবার থেকে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে কাজ করতে গিয়ে আরও কিছু নতুন তথ্য জেনেছি। স্বাধীনতা অর্জনের যে কষ্ট এবং ত্যাগ, তার কিছুটা হলেও অনুভব করেছি।’
সারওয়ার আলী জানান, যেকোনো দেশের ইতিহাস পাঠের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে সে দেশের ঐতিহাসিক স্থান। যেগুলো দেখার ফলে তা হূদয়ে স্থান পায়। বধ্যভূমি, যুদ্ধক্ষেত্রগুলো সংরক্ষণ করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার দিতে হবে। তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করাটা জরুরি, তাহলে মা-বাবাও ছেলেমেয়েকে দেখাতে নিয়ে যাবেন। এর বাইরে স্থাপনাগুলোর মধ্যে আছে স্মৃৃতিসৌধ। বছরের একটা বিশেষ দিনে মানুষ যায়। এর বাইরে খুব একটা যাওয়া হয় না। স্মৃতিসৌধের পাশে যদি কোনো স্মৃতিস্মারক থাকত, তাহলে জায়গাটি আরেকটু অর্থপূর্ণ হতো। হয়তো দেশের সব স্থান থেকে মানুষ জায়গাটি দেখতে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবে।
আগ্রহ তৈরি হবে পরিবার এবং বিদ্যালয় থেকে
অধ্যাপক এবং স্থপতি সামসুল ওয়ারেস মনে করেন, ‘নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের চাহিদা এক রকম। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ ন্যূনতম বেঁচে থাকার চাহিদাগুলোই পূরণ করতে পারছে না। সেখানে স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত এসব স্থাপত্য দেখতে যাওয়ার বাসনা তাদের মধ্যে না-ও আসতে পারে।’ এ ছাড়া পরিবার এবং বিদ্যালয় থেকে মূল্যবোধ সৃষ্টির বিষয়ে জোর দেন সামসুল ওয়ারেস। মা-বাবা সন্তানদের উজ্জীবিত করতে পারেন, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারেন, তৈরি করতে পারেন ভালো মূল্যবোধ। বিদ্যালয়গুলো থেকেও এ বিষয়টি দেখা উচিত। পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিও ভাষা সম্পর্কে সম্মান এবং গর্ববোধ করার বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। বিশেষ দিন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের এসব স্থানে নিয়ে তাদের পরিপূর্ণ ধারণা দেওয়া উচিত।
স্থপতির চোখে
সামসুল ওয়ারেস বলেন, স্মৃতিসৌধ একটি ভাববোধের জায়গা। এর মাধ্যমে যুদ্ধে যাঁরা মারা গেছেন, তাদের স্মৃতি রক্ষা করা হচ্ছে; প্রকাশ করা হচ্ছে শ্রদ্ধা। সাতটি ঢালু সরলরেখার দেয়ালের মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি দেয়ালই উঠে গেছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। প্রতিটি দেয়ালের মধ্যে জায়গা আছে। স্থাপত্যটি সামনে থেকে দেখলে এক রকম, পাশ থেকে দেখলে অন্য রকম লাগে, যা বিস্ময় সৃষ্টি করে। স্মৃতিসৌধটি তৈরি এবং উপস্থাপন করা হয়েছে এমনভাবে যে দেখলেই শহীদদের প্রতি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি হয়। এ যেন স্বর্গের দিকে নির্দেশনা।
ঘুরে বেড়ানোর জায়গার কি অভাব আছে? দেশের মাঝেই তো হাজারো জায়গা। শুধু বাড়ি থেকে বের হওয়া বাকি। ছুটি উপভোগ করতে দেশের বাইরে অনেক জায়গায় বেরিয়ে আসা হয়। কিন্তু বাড়ি থেকে দুকদম এগিয়ে হয়তো দেখে আসা হয়নি স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত কোনো স্থাপত্য। ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে সাভারে অবস্থিত স্মৃতিসৌধের কথাই ধরা যাক না কেন। জানার এবং দেখার উদ্দেশ্যে অনেকেরই হয়তো যাওয়া হয় না। পিকনিকে যাওয়ার উপলক্ষেও কিন্তু সন্তানদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা যায় ঘুরে আসার জন্য। এরপর শুনিয়ে দিন স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল কাহিনি গল্পের ছলে।
এ ফিচারটি লেখার সময় কথা হয়েছিল তরুণ প্রজন্মের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, দেখা হয়েছে কি জাতীয় স্মৃতিসৌধ? হাতেগোনা কয়েকটি উত্তর এসেছে ইতিবাচক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনন্যা রহমান বলেন, ‘স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে শুনেছি। তবে খুব বেশি কিছু জানি না এ সম্পর্কে। হ্যাঁ, পাশ দিয়ে গিয়েছি কয়েকবার, তবে ভেতরে ঢোকা হয়নি।’ বন্ধুর এ বক্তব্যে সায় দিলেন হাসান কবির। ‘আমারও কখনো যাওয়া হয়নি, তবে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।’
স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত এই স্থানগুলো দেখার গুরুত্ব তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক হতাশার মাঝেও আমাদের আশার জায়গা ছিল মুক্তিযুদ্ধ। সব হতাশার মধ্য দিয়ে দেশটি যে এখনো এগোচ্ছে, তার একটি কারণ হলো তরুণ প্রজন্ম। বিশ্বায়নের যুগে তারাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের। তাদের যদি স্বাধীনতার কথা স্মরণ করানো যায়, তাহলে তারা আরও অগ্রসর হবে।’
আমার বন্ধু রাশেদ ছবিতে রাশেদ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চৌধুরী যাওয়াতা আফনান। কথা হয় তাঁর সঙ্গে, ‘ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে বলে সব সময় যাওয়া হয় না। তবে ছোটবেলায় গিয়েছিলাম। এর আগে ছবিতে সব সময় দেখে এসেছি। প্রথমবার সামনে দেখে মনটা ভালো লাগায় ভরে গিয়েছিল। এ ছাড়া চাচা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সে জন্য পরিবার থেকে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে কাজ করতে গিয়ে আরও কিছু নতুন তথ্য জেনেছি। স্বাধীনতা অর্জনের যে কষ্ট এবং ত্যাগ, তার কিছুটা হলেও অনুভব করেছি।’
সারওয়ার আলী জানান, যেকোনো দেশের ইতিহাস পাঠের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে সে দেশের ঐতিহাসিক স্থান। যেগুলো দেখার ফলে তা হূদয়ে স্থান পায়। বধ্যভূমি, যুদ্ধক্ষেত্রগুলো সংরক্ষণ করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার দিতে হবে। তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করাটা জরুরি, তাহলে মা-বাবাও ছেলেমেয়েকে দেখাতে নিয়ে যাবেন। এর বাইরে স্থাপনাগুলোর মধ্যে আছে স্মৃৃতিসৌধ। বছরের একটা বিশেষ দিনে মানুষ যায়। এর বাইরে খুব একটা যাওয়া হয় না। স্মৃতিসৌধের পাশে যদি কোনো স্মৃতিস্মারক থাকত, তাহলে জায়গাটি আরেকটু অর্থপূর্ণ হতো। হয়তো দেশের সব স্থান থেকে মানুষ জায়গাটি দেখতে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবে।
আগ্রহ তৈরি হবে পরিবার এবং বিদ্যালয় থেকে
অধ্যাপক এবং স্থপতি সামসুল ওয়ারেস মনে করেন, ‘নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের চাহিদা এক রকম। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ ন্যূনতম বেঁচে থাকার চাহিদাগুলোই পূরণ করতে পারছে না। সেখানে স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত এসব স্থাপত্য দেখতে যাওয়ার বাসনা তাদের মধ্যে না-ও আসতে পারে।’ এ ছাড়া পরিবার এবং বিদ্যালয় থেকে মূল্যবোধ সৃষ্টির বিষয়ে জোর দেন সামসুল ওয়ারেস। মা-বাবা সন্তানদের উজ্জীবিত করতে পারেন, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারেন, তৈরি করতে পারেন ভালো মূল্যবোধ। বিদ্যালয়গুলো থেকেও এ বিষয়টি দেখা উচিত। পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিও ভাষা সম্পর্কে সম্মান এবং গর্ববোধ করার বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। বিশেষ দিন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের এসব স্থানে নিয়ে তাদের পরিপূর্ণ ধারণা দেওয়া উচিত।
স্থপতির চোখে
সামসুল ওয়ারেস বলেন, স্মৃতিসৌধ একটি ভাববোধের জায়গা। এর মাধ্যমে যুদ্ধে যাঁরা মারা গেছেন, তাদের স্মৃতি রক্ষা করা হচ্ছে; প্রকাশ করা হচ্ছে শ্রদ্ধা। সাতটি ঢালু সরলরেখার দেয়ালের মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি দেয়ালই উঠে গেছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। প্রতিটি দেয়ালের মধ্যে জায়গা আছে। স্থাপত্যটি সামনে থেকে দেখলে এক রকম, পাশ থেকে দেখলে অন্য রকম লাগে, যা বিস্ময় সৃষ্টি করে। স্মৃতিসৌধটি তৈরি এবং উপস্থাপন করা হয়েছে এমনভাবে যে দেখলেই শহীদদের প্রতি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি হয়। এ যেন স্বর্গের দিকে নির্দেশনা।
No comments