সেমুতাং গ্যাস-খাগড়াছড়িবাসীর ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে কি? by ইলিরা দেওয়ান
দেশের চৌষট্টি জেলার ঘরে ঘরে গ্যাস জ্বলুক আর না-ই জ্বলুক, দেশ কিন্তু মাঝেমধ্যে তেল-গ্যাস নিয়ে বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ তেল-গ্যাস বিতর্কে কে কত বেশি দেশদরদি তারও একটা হিস্যা হয়ে যায়! রমজান মাসের আগে বিরোধী দলগুলো নানা দাবিতে দেশে একাধিক হরতাল করেছিল।
এর ফাঁকে দেশের তেল-গ্যাস দেশেই রাখার দাবিতে জাতীয় তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটিও আধা বেলা হরতাল করেছিল। প্রধান বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে হরতালের ডাক দিলেও তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির আধা বেলা হরতালে তাদের কোনো সমর্থন ছিল না বলে বেশ ঘটা করে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছিল। যা-ই হোক, আজকের আলোচনা আপাতত পার্বত্য চট্টগ্রামের সেমুতাংয়ে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
‘গ্যাস’ জিনিসটা আসলে কী, তা পার্বত্যবাসী অনেকের কাছে অজানা হতে পারে। তিন পার্বত্য জেলা শহর এলাকার পাঁচ-ছয় শ পরিবার, যারা আর্থিকভাবে কিছুটা সচ্ছল তারা জ্বালানি হিসেবে সিলিন্ডারের (এলপি, বসুন্ধরা) গ্যাস ব্যবহার করে থাকে। এদের বাদ দিলে অধিকাংশ পাহাড়ি মানুষের কাছে গ্যাস নামক বস্তুটি হলো নিছক বেলুন ফোলানোর জন্য ব্যবহূত একধরনের হাওয়া!
তিন পার্বত্য জেলায় গ্যাসের সুবিধা এখনো পৌঁছেনি। ষাটের দশকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে ৫৪০০ একর আবাদি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট চাষযোগ্য জমির ৪০ শতাংশ ছিল। এর ফলে প্রায় এক লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে সময়ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে অন্ধকারে রেখে সমতলকে আলোকিত করা হয়েছিল। অন্যদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনজ সম্পদকে পুঁজি করে কর্ণফুলী পেপার মিল স্থাপিত হলেও সেখানে পাহাড়ের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তেমন একটা ঘটেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজ কমিশনে দেওয়া হয়েছে বা কোনো স্কুলে বিনা মূল্যে কখনো বিতরণ করা হয়েছে, এমন ঘটনার কথা শোনা যায়নি। এ ছাড়া সারা দেশ মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের আওতায় এলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত পার্বত্যবাসী এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নের সুযোগ থেকে এ বঞ্চনার ধারাবাহিকতা এখন সেমুতাংয়ে এসে ঠেকেছে। অতীতকে সাক্ষী রেখে সেমুতাংয়ের গ্যাস খাগড়াছড়ির অধিবাসীদের বঞ্চিত করে এখন যাবে চট্টগ্রামে!
মিডিয়ার বদৌলতে আমরা জানতে পেরেছি, গ্যাস উত্তোলনে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির সেমুতাং প্রস্তুত। কিন্তু সেই গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ খাগড়াছড়িবাসী কতটুকু পাচ্ছে, এ খবর কেউ রাখেন না। গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক দুই কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ গ্যাসক্ষেত্রের সব গ্যাস পাবেন চট্টগ্রামের গ্রাহকেরা (২৩ এপ্রিল, সমকাল)। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এও জানিয়েছে, মানিকছড়ি থেকে নাজিরহাট এবং নাজিরহাট থেকে অক্সিজেন মোড় পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করতে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতিমধ্যে পাইপলাইন নির্মাণকাজের জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ও টেকনিক কনস্ট্রাকশন নামের দুটি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেমুতাংয়ের গ্যাস ব্যবহার করা যাবে।
আমরা জানি, সংবিধানে উল্লেখ আছে, ভূগর্ভে পাওয়া প্রতিটি খনিজ সম্পদের মালিক দেশের জনগণ। স্থানীয় এলাকার জনগণের অগ্রাধিকার এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বেশি থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, সেমুতাংয়ের গ্যাসকে সামনে রেখে অনেকে চট্টগ্রামের আবাসিক গ্রাহকের চাহিদা পূরণ আর শিল্পের বিনিয়োগের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন। অথচ গ্যাসের সুবিধা না থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারীরা জ্বালানি হিসেবে বছরের পর বছর ধরে বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। পার্বত্য চুক্তির পর থেকে যেভাবে পাহাড়ের বনভূমি উজাড়ে কতিপয় প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে, এতে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ ভারসাম্য ব্যাপকভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের জ্বালানির সংকটও দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের গ্যাস ও বিদ্যুতের ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে হবে। কিন্তু পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে পার্বত্য অঞ্চলে বড় ধরনের কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার সুযোগ আজও তৈরি হয়নি। হিমাগারের অভাবে প্রতিবছর পাহাড়ে উৎপাদিত পণ্য ব্যাপক হারে নষ্ট হয়ে যায়। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার সমুদ্রবক্ষের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এ ছাড়া স্থলভাগের ২২ নম্বর ব্লকের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রামে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য চীনা কোম্পানি সিনোপেকের সঙ্গে আরেকটি চুক্তি করতে যাচ্ছে বলেও জানা যায়। উল্লেখ্য, মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপসের অতীত কাজের অভিজ্ঞতা মোটেও সন্তোষজনক নয়। সম্প্রতি চীনেও এই কোম্পানি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। কাজেই সিনোপেক কোম্পানি কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়া যে পার্বত্য চট্টগ্রামে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করতে পারবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য কোনো কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়ার আগে সরকারকে কয়েকটি বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। যেমন চুক্তিতে জাতীয় ও স্থানীয়দের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে কি না, অনুসন্ধানের সময়ে যেকোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির জন্য কোম্পানি থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের ক্ষতিপূরণের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা। মাগুরছড়ার মতো কোনো দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেশবাসী আর দেখতে চায় না।
গ্যাসের দাবি ও এ ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়িবাসী ইতিমধ্যে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এলাকাবাসীর দাবিদাওয়ার মধ্যে রয়েছে: উত্তোলিত গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয়ভাবে ২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ উৎপাদিত গ্যাস খাগড়াছড়িবাসীকে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া। খাগড়াছড়ি জেলাবাসীর এই দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে একতরফা সিদ্ধান্তে অটল থাকলে ভবিষ্যতে জেলাবাসীর রোষের কারণে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য তখন কর্তৃপক্ষ ও সরকারকেই এর দায়ভার নিতে হবে।
বৈষম্যের খড়্গের নিচে আর কত দিন পার্বত্যবাসীকে থাকতে হবে সে প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
ইলিরা দেওয়ান: মানবাধিকার কর্মী।
ilira.dewan@gmail.com
‘গ্যাস’ জিনিসটা আসলে কী, তা পার্বত্যবাসী অনেকের কাছে অজানা হতে পারে। তিন পার্বত্য জেলা শহর এলাকার পাঁচ-ছয় শ পরিবার, যারা আর্থিকভাবে কিছুটা সচ্ছল তারা জ্বালানি হিসেবে সিলিন্ডারের (এলপি, বসুন্ধরা) গ্যাস ব্যবহার করে থাকে। এদের বাদ দিলে অধিকাংশ পাহাড়ি মানুষের কাছে গ্যাস নামক বস্তুটি হলো নিছক বেলুন ফোলানোর জন্য ব্যবহূত একধরনের হাওয়া!
তিন পার্বত্য জেলায় গ্যাসের সুবিধা এখনো পৌঁছেনি। ষাটের দশকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে ৫৪০০ একর আবাদি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট চাষযোগ্য জমির ৪০ শতাংশ ছিল। এর ফলে প্রায় এক লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে সময়ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে অন্ধকারে রেখে সমতলকে আলোকিত করা হয়েছিল। অন্যদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনজ সম্পদকে পুঁজি করে কর্ণফুলী পেপার মিল স্থাপিত হলেও সেখানে পাহাড়ের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তেমন একটা ঘটেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজ কমিশনে দেওয়া হয়েছে বা কোনো স্কুলে বিনা মূল্যে কখনো বিতরণ করা হয়েছে, এমন ঘটনার কথা শোনা যায়নি। এ ছাড়া সারা দেশ মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের আওতায় এলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত পার্বত্যবাসী এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নের সুযোগ থেকে এ বঞ্চনার ধারাবাহিকতা এখন সেমুতাংয়ে এসে ঠেকেছে। অতীতকে সাক্ষী রেখে সেমুতাংয়ের গ্যাস খাগড়াছড়ির অধিবাসীদের বঞ্চিত করে এখন যাবে চট্টগ্রামে!
মিডিয়ার বদৌলতে আমরা জানতে পেরেছি, গ্যাস উত্তোলনে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির সেমুতাং প্রস্তুত। কিন্তু সেই গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ খাগড়াছড়িবাসী কতটুকু পাচ্ছে, এ খবর কেউ রাখেন না। গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক দুই কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ গ্যাসক্ষেত্রের সব গ্যাস পাবেন চট্টগ্রামের গ্রাহকেরা (২৩ এপ্রিল, সমকাল)। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এও জানিয়েছে, মানিকছড়ি থেকে নাজিরহাট এবং নাজিরহাট থেকে অক্সিজেন মোড় পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করতে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতিমধ্যে পাইপলাইন নির্মাণকাজের জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ও টেকনিক কনস্ট্রাকশন নামের দুটি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেমুতাংয়ের গ্যাস ব্যবহার করা যাবে।
আমরা জানি, সংবিধানে উল্লেখ আছে, ভূগর্ভে পাওয়া প্রতিটি খনিজ সম্পদের মালিক দেশের জনগণ। স্থানীয় এলাকার জনগণের অগ্রাধিকার এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বেশি থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, সেমুতাংয়ের গ্যাসকে সামনে রেখে অনেকে চট্টগ্রামের আবাসিক গ্রাহকের চাহিদা পূরণ আর শিল্পের বিনিয়োগের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন। অথচ গ্যাসের সুবিধা না থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারীরা জ্বালানি হিসেবে বছরের পর বছর ধরে বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। পার্বত্য চুক্তির পর থেকে যেভাবে পাহাড়ের বনভূমি উজাড়ে কতিপয় প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে, এতে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ ভারসাম্য ব্যাপকভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের জ্বালানির সংকটও দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের গ্যাস ও বিদ্যুতের ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে হবে। কিন্তু পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে পার্বত্য অঞ্চলে বড় ধরনের কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার সুযোগ আজও তৈরি হয়নি। হিমাগারের অভাবে প্রতিবছর পাহাড়ে উৎপাদিত পণ্য ব্যাপক হারে নষ্ট হয়ে যায়। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার সমুদ্রবক্ষের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এ ছাড়া স্থলভাগের ২২ নম্বর ব্লকের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রামে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য চীনা কোম্পানি সিনোপেকের সঙ্গে আরেকটি চুক্তি করতে যাচ্ছে বলেও জানা যায়। উল্লেখ্য, মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপসের অতীত কাজের অভিজ্ঞতা মোটেও সন্তোষজনক নয়। সম্প্রতি চীনেও এই কোম্পানি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। কাজেই সিনোপেক কোম্পানি কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়া যে পার্বত্য চট্টগ্রামে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করতে পারবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য কোনো কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়ার আগে সরকারকে কয়েকটি বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। যেমন চুক্তিতে জাতীয় ও স্থানীয়দের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে কি না, অনুসন্ধানের সময়ে যেকোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির জন্য কোম্পানি থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের ক্ষতিপূরণের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা। মাগুরছড়ার মতো কোনো দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেশবাসী আর দেখতে চায় না।
গ্যাসের দাবি ও এ ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়িবাসী ইতিমধ্যে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এলাকাবাসীর দাবিদাওয়ার মধ্যে রয়েছে: উত্তোলিত গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয়ভাবে ২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ উৎপাদিত গ্যাস খাগড়াছড়িবাসীকে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া। খাগড়াছড়ি জেলাবাসীর এই দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে একতরফা সিদ্ধান্তে অটল থাকলে ভবিষ্যতে জেলাবাসীর রোষের কারণে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য তখন কর্তৃপক্ষ ও সরকারকেই এর দায়ভার নিতে হবে।
বৈষম্যের খড়্গের নিচে আর কত দিন পার্বত্যবাসীকে থাকতে হবে সে প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
ইলিরা দেওয়ান: মানবাধিকার কর্মী।
ilira.dewan@gmail.com
No comments