জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী কোটা by জুয়েল থিওটোনিয়াস দ্রং
আদিবাসীরা আজ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার হলেও তারা যথেষ্ট উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আদিবাসীদের জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শতকরা ৫ ভাগ আসন বরাদ্দের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, প্রতিবছর মাত্র ১৫টি আসন সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যা মোট আসনের মাত্র শতকরা ১ ভাগের মতো। বর্তমানে নতুন নতুন বিভাগ চালুর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা বিগত ১৫ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হলেও আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোটার আসনসংখ্যা সে হারে বাড়েনি। বরং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বিগত কয়েক বছরে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাবর্ষে ভিন্ন ভিন্ন শর্ত আরোপ করায় আদিবাসীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথকে সংকীর্ণ করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের। তা ছাড়াও অনুষদগুলো এবং প্রশাসনের শিক্ষা শাখার মধ্যে এ বিষয়ে পরস্পর অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য লক্ষ্য করা যায়। ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এমনও দেখা গেছে, সাধারণ অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তির জন্য মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েও আদিবাসী কোটায় ভর্তির জন্য প্রণীত মেধা বা অপেক্ষমাণ তালিকায় নাম নেই। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষসহ কয়েকটি শিক্ষাবর্ষে এ বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কিছু ছাত্রছাত্রীকে বাদ দিয়ে কোটায় ভর্তির তালিকা সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে। গত শিক্ষাবর্ষে আদিবাসী কোটায় ১৫টি আসনের মেধা তালিকা করা হয়েছে, যার মধ্যে অপেক্ষমাণ তালিকায় ৯ জনকে রাখা হয়েছে। মোট ১১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু অপেক্ষমাণ তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও বাকিদের ভর্তি করা হয়নি। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১০ হাজার। এর মধ্যে মাত্র ৬০ জনের মতো আদিবাসী শিক্ষার্থী রয়েছে। শতকরা হিসাবে যা মোট শিক্ষার্থীর শূন্য দশমিক ৬০ ভাগ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ আদিবাসী হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই হার মাত্র শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ।
আদিবাসীরা সংখ্যায় মাত্র কয়েক লাখ। আদিবাসী অঞ্চলগুলোতে কোনো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও নেই। তাই বাংলাদেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসন সংরক্ষিত না থাকে, তাহলে ১৫ কোটি মানুষের ছেলেমেয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আদিবাসীরা কোনোভাবেই টিকতে পারবে না। সুযোগ-সুবিধা পেলে অনেক আদিবাসী ছেলেমেয়ে নিজের এবং দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারবে। মানবসম্পদে পরিণত হয়ে দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেক্ষাপটে আমরা নিম্নোক্ত দাবিগুলো উপস্থাপন করছি।
১. আসন্ন ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রতি শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৫ শতাংশ হারে আদিবাসী ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হোক। বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতা-প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে তাদের জনসংখ্যা অনুপাতে ওই আসনগুলো সমভাবে বণ্টন করা হোক।
২. বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতা-প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে আদিবাসী কোটায় ভর্তির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক, যার আলোকে প্রতি শিক্ষাবর্ষে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
৩. আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুসরণে জারিকৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে কোটায় ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের উপজাতীয় সনদের পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে সংশ্লিষ্ট সার্কেল চিফ/রাজা বা গোত্রপ্রধান প্রত্যায়িত স্থায়ী আদিবাসী বাসিন্দা সনদ গ্রহণ করা হোক।
এ কথা সত্য, দেশের কোনো একটি জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা সরকার, সুশীল সমাজ, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং দেশের আপামর জনগণকে এ ন্যায্য দাবির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার আহ্বান জানাই।
হ শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
theotoniusever@gmail.com
আদিবাসীরা সংখ্যায় মাত্র কয়েক লাখ। আদিবাসী অঞ্চলগুলোতে কোনো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও নেই। তাই বাংলাদেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসন সংরক্ষিত না থাকে, তাহলে ১৫ কোটি মানুষের ছেলেমেয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আদিবাসীরা কোনোভাবেই টিকতে পারবে না। সুযোগ-সুবিধা পেলে অনেক আদিবাসী ছেলেমেয়ে নিজের এবং দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারবে। মানবসম্পদে পরিণত হয়ে দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেক্ষাপটে আমরা নিম্নোক্ত দাবিগুলো উপস্থাপন করছি।
১. আসন্ন ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রতি শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৫ শতাংশ হারে আদিবাসী ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হোক। বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতা-প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে তাদের জনসংখ্যা অনুপাতে ওই আসনগুলো সমভাবে বণ্টন করা হোক।
২. বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতা-প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে আদিবাসী কোটায় ভর্তির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক, যার আলোকে প্রতি শিক্ষাবর্ষে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
৩. আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুসরণে জারিকৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে কোটায় ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের উপজাতীয় সনদের পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে সংশ্লিষ্ট সার্কেল চিফ/রাজা বা গোত্রপ্রধান প্রত্যায়িত স্থায়ী আদিবাসী বাসিন্দা সনদ গ্রহণ করা হোক।
এ কথা সত্য, দেশের কোনো একটি জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা সরকার, সুশীল সমাজ, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং দেশের আপামর জনগণকে এ ন্যায্য দাবির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার আহ্বান জানাই।
হ শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
theotoniusever@gmail.com
No comments