তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে হাবিবুর রহমান-'মেড ইন বাংলাদেশ' সমাধান চাই

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান এ দেশকে তার নিজস্ব কায়দায়ই করতে হবে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। গতকাল সোমবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকে, কিন্তু সমাধানও থাকে।


নিজেদের সমস্যার সমাধান নিজেদেরই করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে করে দেবে, তার আগে আমরা তৈরি হব না, এটা তো ঠিক না। আমি 'মেড ইন বাংলাদেশ' সমাধান চাই।" তবে মেড ইন বাংলাদেশ সমাধানটি কী- সে বিষয়টি তিনি আর ব্যাখ্যা করেননি।
বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেন, 'বর্তমান অবস্থায় আমি মোটেও হতাশ নই। দেশের অবস্থা নাজুক বলে তো আর চুপ করে থাকা যায় না। পালিয়ে যাওয়ারও উপায় নেই। আমি আশা করি, সমাধান পাব।' তিনি বলেন, 'গণতন্ত্রে ভিন্ন মত থাকবে। মতবিনিময়ের মাধ্যমে আমরা সম্ভাব্য সমাধানের পথ খুঁজব। এ থেকে আমরা নিজেদের বঞ্চিত করতে পারি না। নেতারা যা বলবেন, আমরা তা শুনব। তাঁদের শ্রদ্ধা জানাব।'
দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কোনো মত বা পরামর্শ আছে কি না, জানতে চাইলে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, 'নতুন কিছু বলার নেই, শেখার নেই। আমার কোনো সুপারিশ নেই। নিজেদের সমস্যার সমাধান নিজেদেরই করতে হবে।'
প্রধান দুই দলের নেত্রীরা এক টেবিলে বসলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে- জনগণের এমন ধারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি তা মনে করি না।'
সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন- সার্ক সহযোগিতাবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিস অ্যান্ড প্রোসপারিটি সোসাইটি দিনব্যাপী ওই সম্মেলন আয়োজন করে। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নেন। বিচারপতি হাবিবুর রহমান তাঁর বক্তৃতায় সার্ককে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল আন্তর্জাতিক জোট হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। এর মাধ্যমে ওই দেশগুলো নৃতাত্তি্বক ও সংখ্যালঘুবিষয়ক অনেক সমস্যা সমাধান করেছে।
হাবিবুর রহমান আরো বলেন, "সবাইকে মানবতার শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। নিজের দেশ ও অঞ্চলের সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে। কাউকে 'গুরু' বা 'নেতা' মনে না করে নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে হবে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো অতীতে অনেক যুদ্ধ ও রক্তপাতের সাক্ষী হলেও এখন ইউরোপ পুরোপুরি ভিন্ন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'ইউরোপের শেনজেন ভিসা ব্যবস্থাকে খেয়াল করুন। আমাদের অঞ্চলে গুরুতর সমস্যা আছে। ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট খেলায় পরস্পরকে যুদ্ধের মতো মোকাবিলা করে।' তিনি মনে করেন, সত্যিই অগ্রগতি চাইলে দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি বদলাতে হবে।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব সি এম শফি সামী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় অভিন্ন, ইতিহাস, ভাষা, ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও পানির মতো সম্পদ বণ্টনে বিতর্ক আছে। এ ছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি প্রভাব ফেলছে। বয়সে নবীন আঞ্চলিক জোট হিসেবে সার্ক অপেক্ষকৃত প্রবীণ জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যুগুলো মোকাবিলার পাশাপাশি আঞ্চলিক আর্থসামাজিক অগ্রগতির পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের শিক্ষা নিতে পারে বলে শফি সামী জানান।
ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব ড. মনোজ কুমার মহাপাত্র বলেন, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে অভিন্ন সমৃদ্ধি সবার শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইইউর জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। তবে ইইউ-সার্ক সম্পর্ক খুব জোরালো নয়।
পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রথম সচিব আমের আহমেদ আতোজাই ইইউ অঞ্চল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি বেশি বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের তরুণদের ইইউ অঞ্চলে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হলে তা হবে বৃহৎ পরিসরে সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে শ্রীলঙ্কা হাইকমিশনের মিনিস্টার এ জি আবিসেকারা, নেপাল দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন কে সি আরিয়াল বক্তব্য দেন। সম্মেলনে মোট পাঁচটি প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং সেগুলোর ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.