নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে জবাই করেছে বড় ভাই

গাজীপুরের শ্রীপুরে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছোট বোনকে জবাই করেছে এক পাষণ্ড। গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার বরমী মধ্যপাড়া গ্রামে এ নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবেশীরা ঘাতক বড় ভাই জহিরুল ইসলাম কালুকে (২৮) আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে।


পুলিশ বাবার বাড়ির একটি ঘর থেকে নিহত ফারজানার (২৩) লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। ফারজানা বরমী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূরুল ইসলামের মেয়ে এবং একই গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী।
পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, ফারজানা ১৪ মাস আগে প্রেম করে ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর আজাদের বাবা আবদুল মান্নান এই বিয়ে মেনে নেননি। তাই আজাদ স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। সাত দিন আগে ফারজানা বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন।
এদিকে বাবা নূরুল ইসলাম মেয়ের নামে কিছু জমি লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ অবস্থায় রবিবার রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় ফারজানার বাবা ও শ্বশুরপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। ফারজানাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কালু জমি লিখে দেওয়া ও আনুষ্ঠানিকভাবে বোনকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর প্রস্তাবে আপত্তি জানায়। শুধু তা-ই নয়, প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে সে ফারজানাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে।
রবিবার রাতে আজাদ শ্বশুরবাড়িতে আসেন। গতকাল সকালে তিনি বাড়ির বাইরে গেলে সকাল ১১টার দিকে জহিরুল ইসলাম কালু ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বড় বোনের ওপর হামলা চালায়। এ সময় সে গরু জবাইয়ের ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফারজানাকে গুরুতর আহত করে। ফারজানার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। কিন্তু ইতিমধ্যে ছোট বোনকে জবাই করে কালু পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় জনতা কালুকে বরামা গ্রামের শিমুলতলী থেকে আটক কমর ধোলাই দেয়। পুলিশ কালুসহ তার স্ত্রী দুই সন্তানের জননী নাজমা বেগমকে আটক করেছে।
কালু এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য ছিলেন না। আদরের মেয়েকে খুন হতে দেখে ফারজানার মা হালিমা বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। নূরুল ইসলামের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে সৌদি প্রবাসী। আরেক মেয়ের বিয়ে হয়েছে কাপাসিয়ায়। ঘটনার পর সেই বোনও পাগলপ্রায়।
ঘাতক কালু থানা হাজতে জানায়, আবুল কালাম আজাদ অত্যন্ত খারাপ ছেলে। তাঁর নামে হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। দুই মাস আগেও সে বরমী বাজারে প্রকাশ্যে ফারজানাকে মারধর করেছে। এ রকম ছেলের সঙ্গে বোনের বিয়ে সে মানতে পারেনি। তা ছাড়া বোনকে জমি দিলে আজাদ তা বিক্রি করতে বাধ্য করতেন। সে আরো জানায়, আগে বেকার থাকলেও দুই মাস আগে বরমী বাজারে সে ভাঙারির ব্যবসা শুরু করে। তিন মাস ধরে সে নিয়মিত নামাজ পড়ে। দাড়ি রাখার পাশাপাশি সব সময় মাথায় টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবি পরে।
শ্রীপুর থানার এসআই রাহাত জানান, কালু ছোট বোনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় নিহত ফারজানার স্বামী বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.