সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে by শেখ মোহাম্মদ মাহদী হাসান
আশঙ্কাজনক হারেই বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর। এগুলোকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো কারণ রয়েছে। কেউ না কেউ এর জন্য দায়ী থাকে।
সেই কারণগুলো চিহ্নিত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে বলে আশা করা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রয়েছে আইন, রয়েছে শাস্তির বিধান; কিন্তু নেই যথাযথ প্রয়োগ। পত্রিকা মারফত জেনেছি, চট্টগ্রামে টেম্পো দুর্ঘটনায় ১১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক চালক আবুল কাসেম অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় চলতি বছর ১০ মার্চ তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা অর্থ দণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ে দেখা যায়, সর্বোচ্চ শাস্তিরও প্রয়োগ নেই। তাছাড়া ১১ জন মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে এত লঘু শাস্তি দিলে অপরাধপ্রবণতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই চালকের দোষে সড়ক দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে তাকে হত্যা হিসেবে গণ্য করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখতে হবে। এমনও অভিযোগ আছে, চালককে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বিআরটিএ লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছে। এটা আসলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নয় বরং সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার লাইসেন্স। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালকের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর নির্ধারিত থাকলেও তার থেকে অনেক কম বয়সীদের চালকের আসনে দেখা যায়। অধিকাংশ চালকই রাস্তায় যানবাহন চালানোর নিয়ম জানে না; ইচ্ছা হলে লেন পরিবর্তন, ইচ্ছা হলে ওভারটেকিং, ওভার লোডিং করে থাকে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া যানবাহন চালানোর সময় চালক কখনও মোবাইলে কথা বলছে, কখনও যাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে, আবার কখনও ধূমপান করছে। এসব ক্ষেত্রে চালকের পাশাপাশি যাত্রীরাও কিছুটা দায়ী। কারণ যাত্রীরা চালককে এসব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকে। যানবাহন চালানোর সময় মোবাইল ফোন অথবা হেডফোনে কথা বলাকে সরকার ২০০৭ সালের মোটরযান আইনের ১৪০ ধারা অনুযায়ী এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই আইন অমান্য করলে চালকের এক মাসের কারাদণ্ড অথবা পাঁচশ' টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। সিট বেল্ট বাঁধা বাধ্যতামূলক থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার আগেই চালক যাত্রীদের কথা না ভেবে নিজের জীবন রক্ষায় যানবাহন থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনার অধিকাংশ যানবাহন ফিটনেসবিহীন। এর জন্য দায়ী বিআরটিএ। ট্রাফিক সার্জেন্টদের কারও কারও অভিযোগ, তারা ফিটনেসবিহীন যানবাহন দেখে থামালে চালকের কাছে ফিটনেস সনদ দেখতে পায়। ফলে এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু করার থাকে না। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা কেউ কেউ ফিটনেসবিহীন যানবাহন দেখেও ১৫২ ধারায় জরিমানা না করে কিছু মাসোয়ারা নিয়ে ছেড়ে দেয়। ফলে সরকার হারায় রাজস্ব ও সাধারণ মানুষ হারায় আপনজন। যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তা চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে।
হ প্রভাষক, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ঢাকা
হ প্রভাষক, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ঢাকা
No comments