ট্র্যাজেডির নাম মিরসরাই by বিশ্বজিৎ চৌধুরী
সে এক হূদয়বিদারক দৃশ্য। রাস্তার পাশের একটি ডোবা থেকে তুলে আনা হচ্ছে একের পর এক কিশোরের লাশ। মা-বাবা স্বজনদের গগনবিদারী আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে সৈদালি গ্রামের আকাশ-বাতাস। গত ১১ জুলাই ঘটেছিল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। মিরসরাই স্টেডিয়ামে শিশুদের জাতীয় পর্যায়ে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টে গিয়েছিল এই শিশু-কিশোরেরা। কেউ খেলোয়াড়, কেউ সমর্থক। খেলা শেষে ট্রাকে চেপে ফিরে আসছিল ৬০-৭০ জনের দলটি। কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে
একটি ছোট সেতু পেরোতে গিয়ে রাস্তার পাশের একটি ডোবায় ট্রাকটি পড়ে গেলে ঘটে দুর্ঘটনাটি। মুহূর্তেই থেমে যায় শিশুদের আনন্দ-কোলাহল। একই সঙ্গে একই বয়সী ৩৯টি উচ্ছল শিশু-কিশোরের নিস্পন্দ দেহের দিকে তাকিয়ে যে মাতম নেমে এসেছে মায়ানী, মগাদিয়া, সাহেরখালী ও কৈয়াছড়া গ্রামে, গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পর সারা দেশের মানুষকেই স্পর্শ করেছিল সেই বিষাদ।
গ্রামের একদিকে চলেছে কবর খোঁড়া, অন্যদিকে লাশ দাহ করার প্রস্তুতি। যাদের কলকাকলিতে মেতে উঠত খেলার মাঠ, পুকুরঘাট, নদীর পাড় আর স্কুলের ক্লাসরুম—সেই ছেলেদের হারিয়ে মিরসরাইয়ের গ্রামগুলো যেন হয়ে উঠেছিল প্রাণহীন লোকালয়।
এ ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর স্কুল যখন খুলেছে, তখন যেন নতুন এক শোকদৃশ্যের পর্দা উঠল। রোলকল করার সময় শিক্ষক দেখেন, রোল নম্বর এক উপস্থিত আছে; দুই, তিন, চার নেই; পাঁচ আছে তো ছয় নেই। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, চোখ মোছেন। আর ছাত্রছাত্রীরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ভেঙে পড়ে কান্নায়। একই বেঞ্চে বসত যে সহপাঠী, তার বসার জায়গাটিতে হাত বোলায় গভীর বেদনায়।
সড়ক দুর্ঘটনার এই দুর্বিষহ স্মৃতি মিরসরাইয়ের গ্রামগুলোর মানুষ কোনো দিন ভুলতে পারবে কি না জানি না। কিন্তু শোক ছাপিয়ে উঠে এসেছে কিছু প্রশ্ন, যার দায় এড়াতে পারব না আমরা, যার উত্তর খুঁজতে হবে সবাইকে। গাড়ির মূল চালক নয়, তার সহকারী (হেলপার) চালাচ্ছিল গাড়িটি—এখানেই ছিল বিপদের ঝুঁকি। সেই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়ে চালক কথা বলছিল মুঠোফোনে। এই হঠকারিতায় যে ক্ষতি হয়ে গেল, তার কি সান্ত্বনা আছে?
এই দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ অনেকেই ছুটে গিয়েছিলেন মিরসরাইতে। শোক ও সান্ত্বনার কথা শুনিয়েছেন তাঁরা। নিহত ও আহত পরিবারগুলোকে টাকার অঙ্কে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু আজ এত দিন পর এসে তার কোনো প্রতিফলন কি দেখেছি আমরা বাস্তবে? সড়কে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কি থেমেছে? এতগুলো মৃত্যুর জন্য দায়ী সেই ট্রাকচালকের পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে।
এই সাজা যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লাভ নেই; বরং প্রশ্ন ওঠে, যারা নকল ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, যারা ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চলাচলের জন্য উপযুক্ত বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছে, বৈধ কাগজপত্রবিহীন গাড়িকে উৎকোচ পেয়ে ছেড়ে দিচ্ছে যারা, সেই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা কি বন্ধ করা গেছে?
ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যু আমাদের দেশে প্রায় নিয়তির মতো। মৃত্যুকে আমরা নানা সময় দেখেছি খুব কাছ থেকে। কিন্তু একটি দুর্ঘটনার পরিণতিতে ৪৪ জন প্রাণোচ্ছল শিশু-কিশোরের মৃত্যুকে কিছুতেই সেই দুর্যোগের সঙ্গে মেলানো যায় না। তাদের মৃত্যু অনেক বেদনার ইতিহাসের মধ্যেও তাই ব্যতিক্রমী ট্র্যাজেডি হয়ে থাকল আমাদের জীবনে। এই শিশুরা দায়ী করে গেল আমাদের।
গ্রামের একদিকে চলেছে কবর খোঁড়া, অন্যদিকে লাশ দাহ করার প্রস্তুতি। যাদের কলকাকলিতে মেতে উঠত খেলার মাঠ, পুকুরঘাট, নদীর পাড় আর স্কুলের ক্লাসরুম—সেই ছেলেদের হারিয়ে মিরসরাইয়ের গ্রামগুলো যেন হয়ে উঠেছিল প্রাণহীন লোকালয়।
এ ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর স্কুল যখন খুলেছে, তখন যেন নতুন এক শোকদৃশ্যের পর্দা উঠল। রোলকল করার সময় শিক্ষক দেখেন, রোল নম্বর এক উপস্থিত আছে; দুই, তিন, চার নেই; পাঁচ আছে তো ছয় নেই। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, চোখ মোছেন। আর ছাত্রছাত্রীরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ভেঙে পড়ে কান্নায়। একই বেঞ্চে বসত যে সহপাঠী, তার বসার জায়গাটিতে হাত বোলায় গভীর বেদনায়।
সড়ক দুর্ঘটনার এই দুর্বিষহ স্মৃতি মিরসরাইয়ের গ্রামগুলোর মানুষ কোনো দিন ভুলতে পারবে কি না জানি না। কিন্তু শোক ছাপিয়ে উঠে এসেছে কিছু প্রশ্ন, যার দায় এড়াতে পারব না আমরা, যার উত্তর খুঁজতে হবে সবাইকে। গাড়ির মূল চালক নয়, তার সহকারী (হেলপার) চালাচ্ছিল গাড়িটি—এখানেই ছিল বিপদের ঝুঁকি। সেই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়ে চালক কথা বলছিল মুঠোফোনে। এই হঠকারিতায় যে ক্ষতি হয়ে গেল, তার কি সান্ত্বনা আছে?
এই দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ অনেকেই ছুটে গিয়েছিলেন মিরসরাইতে। শোক ও সান্ত্বনার কথা শুনিয়েছেন তাঁরা। নিহত ও আহত পরিবারগুলোকে টাকার অঙ্কে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু আজ এত দিন পর এসে তার কোনো প্রতিফলন কি দেখেছি আমরা বাস্তবে? সড়কে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কি থেমেছে? এতগুলো মৃত্যুর জন্য দায়ী সেই ট্রাকচালকের পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে।
এই সাজা যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লাভ নেই; বরং প্রশ্ন ওঠে, যারা নকল ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, যারা ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চলাচলের জন্য উপযুক্ত বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছে, বৈধ কাগজপত্রবিহীন গাড়িকে উৎকোচ পেয়ে ছেড়ে দিচ্ছে যারা, সেই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা কি বন্ধ করা গেছে?
ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যু আমাদের দেশে প্রায় নিয়তির মতো। মৃত্যুকে আমরা নানা সময় দেখেছি খুব কাছ থেকে। কিন্তু একটি দুর্ঘটনার পরিণতিতে ৪৪ জন প্রাণোচ্ছল শিশু-কিশোরের মৃত্যুকে কিছুতেই সেই দুর্যোগের সঙ্গে মেলানো যায় না। তাদের মৃত্যু অনেক বেদনার ইতিহাসের মধ্যেও তাই ব্যতিক্রমী ট্র্যাজেডি হয়ে থাকল আমাদের জীবনে। এই শিশুরা দায়ী করে গেল আমাদের।
No comments