স্বাগত ২০১২-উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশা

হু সংস্কৃতির উত্তরাধিকার-বাহিত সংস্কৃতিতে নববর্ষের উৎসব একাধিক। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে বহু সংস্কৃতি ও সভ্যতার ঐতিহ্যে জারিত। তাই এখানে নববর্ষের উৎসব তিন বা ততোধিক। সম্রাট আকবরের সময়ে চালু হওয়া ক্যালেন্ডার এ অঞ্চলে বিশেষ জনপ্রিয় এবং বাংলা সাল হিসেবে গণ্য। এ ক্যালেন্ডার অনুসারে এ দেশে পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপিত হয়। আবার মুসলিম ঐতিহ্য অনুসারে হিজরি সাল গণনাও প্রচলিত। ধর্মীয় উৎসবগুলো হিজরি


ক্যালেন্ডার অনুসারে নির্ধারিত হয়। ব্রিটিশ শাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে অফিস-আদালতের কাজকর্ম চলে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের নিউ ইয়ার উৎসবও এখানে জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এ ছাড়া আরও নানা বর্ষ গণনা পদ্ধতি ও ক্যালেন্ডার এখানে প্রচলিত। কিন্তু প্রধান তিন ক্যালেন্ডার নিয়ে তীব্র কোনো বিরোধ এখানকার সংস্কৃতিতে নেই। বাঙালি ঋতুচক্রের হিসাব বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারেই রাখে। কৃষিকর্মও সে অনুসারে হয়। এখানে আষাঢ়-শ্রাবণেই বর্ষাকাল। সে সময় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে কোন মাস_ সে খবর রাখার প্রয়োজন হয় না। তেমনি মহররম, জিলহজ, রমজান মাসের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোও ঠিকঠাক হিজরি ক্যালেন্ডারের নিয়মেই হয়। একইভাবে ১ জানুয়ারিতে ঘটা করে নিউ ইয়ার পালনেও কোনো বাধা নেই।
বহুত্ববাদী এই সংস্কৃতিই আমাদের শক্তি। বহু সংস্কৃতির সংশ্লেষেই আমাদের সংস্কৃতির সৌন্দর্য। বাংলা নববর্ষের মতো গ্রেগরিয়ান নিউ ইয়ারে রমনা বটমূলে রবীন্দ্রনাথের গানের আসর বসে না। কিন্তু তারুণ্যের উন্মাদনা বহু মানুষকে স্পর্শ করে। এ উৎসবের মধ্যে আন্তর্জাতিকতা আছে। বিশ্বের বহু মানুষের সঙ্গে উৎসব পালনের যে আনন্দ, তা এ দিনে অনুভববেদ্য হয়ে ওঠে। বলতে গেলে, আন্তর্জাতিকভাবে একটি অনুষ্ঠানেই এ দেশের অধিবাসীরা প্রাণখোলা আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠতে পারে। আর তা নিউ ইয়ার উৎসব। পৃথিবীর বহু জাতি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে নিত্যকার কাজকর্মের ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করেছে। আমাদের দেশেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এতে আমাদের আন্তর্জাতিকতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। নতুন প্রযুক্তি ও নতুন মূল্যবোধের গ্গ্নোবাল ভিলেজে আমাদের প্রবেশ সহজ হয়েছে। লাভ শুধু এতটুকু নয়, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রস্তুত জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের উত্তরাধিকার হিসেবে গৃহীত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার আমরা পেয়েছি। এটি কখনও কখনও পাশ্চাত্য ক্যালেন্ডার বা খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার হিসেবে অভিহিত হয় বটে। কিন্তু পৃথিবীর বহু বর্ণের, বহু ভাষার, বহু স্থানের জাতিগুলো এ ক্যালেন্ডারকে যেভাবে গ্রহণ করেছে, তাতে এটি আদি পরিচয়ের ঊধর্ে্বর্ উঠে সিভিল ক্যালেন্ডারের রূপ ধারণ করেছে।
আমাদের দেশে গ্রেগরিয়ান নববর্ষ পালনের রেওয়াজ বহু আগে থেকে অনুসৃত হলেও সম্প্রতি তা আকারে বেড়েছে। বহু মানুষ এ দিনে পরস্পর মিলিত হয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শুভেচ্ছা কার্ডে, এসএমএসে, ফেসবুক, ই-মেইলে হাজারো শুভেচ্ছা বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। পুরনো বছর যেমনই যাক, নতুন বছর যেন ভালো যায় সে কামনা থাকে সবার। পুরনো বছরকে বিদায় জানানোর আগে ঘটা করে বছরের ঘটনাবলির ওপর নজর বোলানোর রেওয়াজও চালু। ২০১১ বিশ্বের জন্য ঘটনাবহুল বছর। বহু খবর তৈরি হয়েছে এ সময়। কিন্তু সব ছাপিয়ে একটি খবর সবাইকে ভাবিয়েছে, নাড়া দিয়েছে, আশান্বিত করেছে। সে খবর হলো, পৃথিবী বদলাচ্ছে। আর বদলের অনুঘটক নতুন একটি প্রজন্ম। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই নতুন প্রজন্মের নবোত্থান ঘটেছে। আরব বিশ্বের তারুণ্যের ঢেউ পরিবর্তনের প্লাবন তৈরি করেছে। বদলাচ্ছে অন্যরাও। বহু রক্তপাত, সংঘর্ষ ও সংঘাতের ভেতর দিয়ে জন্ম নিচ্ছে নতুন পৃথিবী। ২০১২ সালে ব্যতিক্রম ঘটবে না বলেই মনে হয়। কেননা, সকাল বেলার সূর্যই বলে দেয়, দিনটি কেমন যাবে। বিগত বছরই বলে দেয়, এ বছর কেমন যাবে। বাংলাদেশের জন্য ২০১১ সাল ছিল সমস্যা ও সম্ভাবনার দোলাচলে দোদুল্যমান বছর। ২০১২ সালে ব্যতিক্রম ঘটবে কি? আমরা আশা করি, ব্যতিক্রম ঘটুক। নতুন উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির দিকে নিশ্চিত যাত্রা শুরু হোক। নতুন আশার আলো প্লাবিত করুক আমাদের দিগন্ত। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। বিদায় ২০১১। স্বাগত ২০১২।

No comments

Powered by Blogger.