অটোরিকশা ও অটোবাইকে চাঁদাবাজি, খেসারত যাত্রীদের by অরূপ রায়
বছর খানেক আগেও মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। এখন একই স্থান থেকে টাঙ্গাইল যেতে দিতে হয় ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা। একই চিত্র দেখা গেছে মানিকগঞ্জসহ সাভার ও ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন সড়কে। অভিযোগ রয়েছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মূল কারণ পথে পথে চাঁদা আদায়। এসব চাঁদা আদায় করছে পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠন। আর খেসারত দিচ্ছে যাত্রীরা।
অটোরিকশা ও অটোবাইকের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে সাভার, ধামরাইসহ মানিকগঞ্জ সদর এবং সাটুরিয়ার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে অটোরিকশা ও অটোবাইক চলতে শুরু করে। এতে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।
বর্তমানে এসব অঞ্চলে চলাচলকারী অটোরিকশা ও অটোবাইকের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এসব যানবাহনে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ লোক যাতায়াত করে। কিন্তু পথে পথে চাঁদা আদায় করায় আগের তুলনায় ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। প্রথম আলোর অনুসন্ধান এবং অটোরিকশা ও অটোবাইকের চালক সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ-সাটুরিয়া সড়কে শ্রমিক সংগঠনের নামে প্রতিদিন প্রতিটি অটোরিকশা থেকে মানিকগঞ্জ প্রান্তে ৬০ টাকা ও সাটুরিয়া প্রান্তে ৩০ টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়া প্রতিটি অটোরিকশা থেকে পুলিশের নামে প্রতি মাসে আদায় করা হচ্ছে আরও ১০০ টাকা।
সাটুরিয়া-পাকুটিয়া সড়কে পরিচালনা কমিটির নামে প্রতিদিন প্রতিটি অটোরিকশা থেকে সাটুরিয়া প্রান্তে ২৫ টাকা, পাকুটিয়া প্রান্তে ১৫ টাকা এবং সাটুরিয়া-দড়গ্রাম-গোপালপুর সড়কে সাটুরিয়া প্রান্তে ৩০ টাকা, দড়গ্রাম প্রান্তে ১০ টাকা এবং গোপালপুর প্রান্তে ১০ টাকা নেওয়া হয়। এ ছাড়া সাভার পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠনের নামে অটোবাইক ও অটোরিকশা থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
সাভার বাজার রোডের মোড়ে প্রতিটি অটোবাইক থেকে পুলিশ ও নেতাদের নামে আদায় হচ্ছে ২০ টাকা, চাপাইন মোড়ে ৩০ টাকা, রেডিও কলোনিতে ২০ টাকা, বাসস্ট্যান্ড যাত্রী ছাউনিতে ২০ টাকা এবং সিটি সেন্টারের সামনে ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সাভার ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিটি অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে দিতে হয় ৩০০ টাকা। সাভার ট্রাফিকে কর্মরত কনস্টেবল রওশন এই চাঁদা আদায় করেন।
তবে কনস্টেবল রওশন অভিযোগ অস্বীকার করে এসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অটোরিকশার চালকেরা অভিযোগ করেন, চাঁদা না দিলে পুলিশ তাঁদের নানাভাবে হয়রানি করে। এক জেলার অটোরিকশা অন্য জেলায় গেলেই পথ চলার অনুমতিপত্র না থাকায় তারা গাড়ি আটক করে। এরপর টাকা না দিলে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার মামলা ঠুকে দেয়। তবে পদবি বুঝে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দিলেই ছাড় পাওয়া যায়। এ ছাড়া নতুন গাড়ি রাস্তায় নামানোর আগে মানিকগঞ্জ, পাকুটিয়া ও দরগ্রামের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনকে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়।
সাটুরিয়ার অটোরিকশাচালক সিদ্দিক মিয়া জানান, কিছুদিন আগে ধামরাইয়ের নান্দেশ্বরী এলাকায় কাওয়ালিপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আজিজুর রহমান তাঁর গাড়িটি আটকে রাখেন। পরে ৩০০ টাকা দিলে গাড়িটি ছেড়ে দেন।
অভিযোগ সম্পর্কে মুঠোফোনে এএসআই আজিজুর বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আছেই, এটা আর নতুন কি? সাটুরিয়া উপজেলা দ্রুতি সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, পথে পথে চাঁদা নেওয়ার কারণে বিভিন্ন সড়কে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে যাত্রীদের ওপর।
সাভার পৌরসভা অটোবাইক মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান বলেন, চাঁদা না দিলে গাড়ির কাচ ভাঙচুর করা হয়। মিথ্যে অভিযোগে থানায় নেওয়া হয়। এ ছাড়া শ্রমিকদের কল্যাণের জন্যও প্রতি অটোবাইক থেকে মাসে ১০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাভার ট্রাফিকের পরিদর্শক আবদুস সামাদ বলেন, ‘চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ আমরাও পাচ্ছি, এসব বন্ধে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
এ ছাড়া অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দেন মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলী মিয়া।
No comments