বোমাবাজ, ঘাতক কেউ রেহাই পেতে পারে না-কুষ্টিয়ায় বিজয় মেলায় সন্ত্রাসী ঘটনা
বোমা হামলার ঘটনা নিন্দনীয়, কিন্তু সেই হামলাকে কেন্দ্র করে নিছক সন্দেহের বশে কাউকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে কী বলা যায়? আরও বেশি নিন্দনীয় ও নৃশংস। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বিজয় মেলায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া বোমা বিস্ফোরণে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন, যিনি আওয়ামী লীগেরও নেতা, তিনিসহ দুজন আহত হন। গত বুধবার রাতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। বোমা হামলার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন মেলার
পাশের বাজারে জিন্দার আলী নামে একজন মাইক্রোবাস-চালককে পিটিয়ে হত্যা করে নিছক সন্দেহের বশে। বোমা হামলায় আহত ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা তাঁর সমর্থকদের কেউই বলেননি, জিন্দারই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ লোকজনের পিটুনিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালেও চিকিৎসা করানো যায়নি আহত ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থকদের ভয়ে। ফলে রাত তিনটায় মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার এক ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর দায় কি ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা এড়াতে পারেন?
ঘটনার পর আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপির এক নেতার গার্মেন্টসও ভাঙচুর করেন। তাঁদের দাবি, চারদলীয় জোটের লোকজন বোমা হামলা চালাতে পারে। এদিকে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে অন্য একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁর সঙ্গে জিন্দারের যোগসাজশ ছিল, সে দাবিও কেউ করেননি। তাহলে মাইক্রোবাসের চালক জিন্দারকে কেন হত্যা করা হলো? বোমা হামলার কারণে যদি ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে থাকে, তাদের নিবৃত্ত করার দায়িত্ব ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তারা কি সেই দায়িত্ব পালন করেছে?
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মেলা, উৎসব, সিনেমা হলসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই হামলাকারীরা ছিল চেনা, মৌলবাদি গোষ্ঠী। কিন্তু কুষ্টিয়ার বিজয় মেলায় বোমা হামলাকারী এবং গণপিটুনিতে অংশগ্রহণকারীরা অচেনা। চেনা শত্রুর চেয়ে অচেনা শত্রুর সঙ্গে লড়াই করা আরও কঠিন।
আমরা দুটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দাবি করছি। যারা বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ মারার চেষ্টা করেছে এবং যারা নিছক সন্দেহবশত একজন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে—উভয়ই অপরাধী। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।
No comments